<p>মৌসুমের শুরু থেকেই এবার আলুর দাম বেশি। তাই বেশি দাম পেয়ে মাঠ থেকেই আলু বিক্রি করেছেন কৃষকরা। এবার আলুর দাম বেশি হওয়ায় এবং গতবারের মতো হিমাগারে আলু সংরক্ষণের পর তা বিক্রির সময় প্রশাসনিক হয়রানি এড়াতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। বেশি দাম পাওয়ায় মাঠ থেকেই আলু বিক্রি করে দিয়েছেন বেশির ভাগ কৃষক। মৌসুম শেষে এ বছর আলুর সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা হিমাগার মালিকদের।</p> <p>কালাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু রোপণ করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ছয় লাখ ৫০ হাজার ৮৫০ মে. টন। তবে আগে থেকে অপরিপক্ব আলু বিক্রি করায় এবার উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৩ মে. টন ইতিমধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগ জমির আলু উত্তোলন হয়েছে। কালাইয়ের পাঁচটি উপজেলায় ১১টি হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা প্রায় ৮০ হাজার ৫০০ মে. টন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আলু সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। ১২ মার্চ পর্যন্ত হিমাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার অর্ধেক আলু সংরক্ষণ হয়েছে।</p> <p>হিমাগার মালিকরা বলছেন, বিগত বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে যে পরিমাণ আলু সংরক্ষণ হয়েছিল, এ বছর তার অর্ধেক আলু সংরক্ষণ হয়েছে। এর কারণ গত বছর বেশি আলু সংরক্ষণের অভিযোগে অনেক ব্যবসায়ীর জেল-জরিমানা হয়েছে। আবার কোনো কোনো হিমাগার মালিককেও ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সে কারণে তারা এ বছর আলু সংরক্ষণের সাহস পাচ্ছেন না।</p> <p>সরাইল এলাকার কৃষক রেজাউল হক এক একর জমিতে স্টিক জাতের আলু চাষ করেছেন। ২৫ টাকা কেজি দরে সব আলু স্থানীয় পাইকার সাইদুর রহমানের কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, এ বছর বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক মিলে তিন বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। উৎপাদন হয়েছে ৩৬০ মণ আলু। এক হাজার ২০ টাকা দরে সব আলু বিক্রি করেছেন। তাতে লাভ টিকেছে দুই লাখ ৬২ হাজার টাকা। গত বছরের মতো এবার মৌসুমের শুরুতে যদি আলুর দাম কম হতো, তাহলে অনেক বেশি লোকসান গুনতে হতো। তা ছাড়া হিমাগারে সংরক্ষণেও গুনতে হতো বাড়তি খরচ। বেশি দাম পেয়ে সব আলু বিক্রি করে দিয়েছি। অন্তত ঝামেলামুক্ত হয়েছি। গত কয়েক বছরের লোকসানও এবার পুষে উঠেছে।</p> <p>বৃহত্তর বগুড়া কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নর্দান হিমাগারের মালিক আবুল কালাম বলেন, চাহিদার কারণে আলু ক্ষেতেই বিক্রি হয়েছে। ভরা মৌসুমেও আলু পাওয়া যাচ্ছে না। বিগত সময়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহেই পরিপূর্ণ হতো হিমাগার। অথচ গতকাল ১২ মার্চ পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ হিমাগারেই অর্ধেক আলুও সংরক্ষণ হয়নি। এ বছর হিমাগারগুলো খালি থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থা হলে বছরজুড়ে আলুর সংকট দেখা দিতে পারে বলে তিনি মনে করেন।</p> <p>জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন জানান, আলু উৎপাদনে যে পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, আগাম ও অপরিপক্ব আলু উত্তোলণের কারণেই তা অর্জিত হয়নি। যথাযথভাবে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ না হলে মৌসুমের পর আলুর সংকট হতেই পারে।</p>