<p>কুমিল্লা নগরীর তেলিকোনা এলাকায় ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়া অনিরাপদ বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে হাতের কবজি হারিয়েছে আবদুল্লাহ নামে সাত বছর বয়সী এক শিশু। জানালার গ্রিল দিয়ে বাইরে হাত দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় ওই শিশু। এক পর্যায়ে মা তাঁর সন্তানকে বাঁচাতে টান দিলে বিদ্যুতের তারে শিশুর হাত ছিঁড়ে যায়। এতে শিশুর হাতের কবজি বিদ্যুতের তারের মধ্যে ঝুলে থাকে।</p> <p>বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নগরীর তেলিকোনা চৌমুহনী এলাকার মানিক মিয়া টাওয়ারের চতুর্থ তলায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যুতে স্পৃষ্ট হয়েছে শিশুটির দুই পা। এ ঘটনায় শিশুটির মা-ও আহত হয়েছেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হাতের কবজি হারানো শিশু আবদুল্লাহকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করা হয়েছে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন।</p> <p>স্থানীয়রা জানায়, কুমিল্লা নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরাইশ এলাকার বাসিন্দা ও চকবাজারের ব্যবসায়ী মো. শামীম পরিবার নিয়ে তেলিকোনা চৌমুহনী এলাকার মানিক মিয়া টাওয়ারের ছয় তলায় ভাড়া থাকতেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁরা ছয় তলা থেকে চার তলায় শিফট হচ্ছিলেন। এ জন্য তাঁদের সন্তান আবদুল্লাহকে চার তলায় রেখে ছয় তলা থেকে মালামাল নামানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন সবাই। বেলা পৌনে ১২টার দিকে চার তলার জানালার গ্রিল দিয়ে ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়া অনিরাপদ বৈদ্যুতিক তারে হাত রাখে শিশুটি। এতে সাথে সাথেই বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে সে। বিষয়টি টের পেয়ে আবদুল্লাহর মা তাঁর সন্তানকে জোরে টান দিলে শিশুটির হাত থেকে কবজি আলাদা হয়ে চলে আসে। আহত হন শিশুটির মা-ও। পরে আবদুল্লাহর হাতের কবজি বিদ্যুতের খোলা তারে দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকতে দেখা যায়। এরপর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বন্ধ করা হলে হাতটি উদ্ধার করা হয়। তবে পুরো হাতটি পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। </p> <p>কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের প্রধান মীর্জা মো.তাইয়েবুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুটিকে যখন আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়, তার অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার হাতটা পুড়ে একেবারে কয়লা হয়ে গেছে। পরে শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। এটা আর জোড়া লাগানো সম্ভব না। শিশুটির দুই পা-ও স্পৃষ্ট হয়েছে। এটা মারাত্মক দুর্ঘটনা। শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন। আমরা ইমার্জেন্সি যা করার করে দিয়েছি। চেয়েছিলাম অপারেশন করাতে; কিন্তু তার পরিবারের ইচ্ছায় ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।’</p> <p>স্থানীয়রা জানিয়েছে, এই ভবনটির পাশের অনিরাপদ বিদ্যুতের তারে এর আগেও একজন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। এ ছাড়া ওই এলাকার বিভিন্ন ভবনের পাশে এ রকম অনিরাপদ বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। কিছুদিন পূর্বে সংরাইশ এলাকায় এ রকম একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন একজন নারী। </p> <p>এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২), কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘আমি ঘটনাটি জেনেছি। বিষয়টি মর্মান্তিক। তবে এখানে বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো অবহেলা নেই। বিদ্যুতের ওই লাইনটি অনেক আগের। মূলত ওই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে বিদ্যুতের তার ঘেঁষে। আমরা ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে দুর্ঘটনার শিকার শিশুটির হাত বিদ্যুতের তার থেকে উদ্ধার করা হয়। এসব বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’</p>