<p>শীত মৌসুম এলেই বাঘের আনাগোনা বাড়ে বাগেরহাটের শরণখোলার সুন্দরবনের পাশের গ্রামগুলোতে। কারণ শীত মৌসুম বাঘের প্রজননের সময়। এ সময় বাঘ-বাঘিনী একে অপরের সঙ্গী ও সঙ্গিনীকে খুঁজে বেড়ায়। যার কারণে তারা পথ ভুলে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এমনটাই জানালেন ১৬ বছর ধরে বাঘসহ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কাজে অভিজ্ঞ মো. খলিল জমাদ্দার।</p> <p>গতকাল সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে একটি বাঘ (রয়েল বেঙ্গল টাইগার) উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বনসংলগ্ন সোনাতলা গ্রামের ভোলার চরে হালিম চাপরাশির বাড়িতে প্রবেশ করে। রাত ১০টার দিকে গরুর ঘরের পাশে বাঘটি দেখতে পান গৃহকর্তা হালিম চাপরাশি। তাকে দেখে বাঘটি দ্রুত নদীর দিকে চলে যায়।</p> <p>এর আগে গত ১১ জানুয়ারি ও ১০ নভেম্বর  রাতে এই একই গ্রামে বাঘ এসেছিল। বারবার গ্রামে বাঘ এলেও মানুষ বা গৃহপালিত প্রাণীর কোনো ক্ষতি করছে না। তবে গ্রামবাসীর মধ্যে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী হালিম চাপরাশি জানান, তার বসতঘর থেকে কিছুটা দূরে গরুর ঘর। রাতে সেই গরুর খোঁজ নিতে যাচ্ছিলেন। গরুর ঘরের পাশের ঝোপের মধ্যে টর্চলাইটের আলোয় বাঘটি দেখতে পান। তখন তিনি ভয়ে দ্রুত ঘরে ফিরে যান। পরে তিনি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি) ও কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্যদের মোবাইল করে বিষয়টি জানান। সকালে বন বিভাগ ও ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হালিম চাপরাশির বাড়ি ও নদীর চরে বাঘের পায়ের অসংখ্য ছাপ দেখতে পান।</p> <p>ভিটিআরটি ও সিপিজি দলনেতা মো. খলিল জমাদ্দার বলেন, ‘আগে জানতাম খাবারের জন্য বাঘ লোকালয়ে আসে। আসলে খাবারের জন্য বাঘ আসে না। তাই যদি হতো তাহলে গ্রামের গৃহপালিত প্রাণীর ওপর আক্রমণ করত। গ্রামের বাড়িতে গরু, ছাগল, মহিষ খোলা স্থানে বাঁধা থাকে। কিন্তু বাঘ পাশ থেকে হেঁটে গেলেও তাদের ওপর কখনো আক্রমণ করে না।’</p> <p>খলিল জমাদ্দার বলেন, ‘আমি ২০০৮ সাল থেকে সুন্দরবনের বাঘসহ বন্য প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছি। এই ১৬ বছরে ১৫ থেকে ১৬ বার বাঘের দেখা পেয়েছি। শিকারের জন্য বাঘ বেশি তাড়াহুড়া বা লোকালয়ে খুব কমই আসে। শীতের সময় বাঘ লোকালয়ে আসার কারণ হিসেবে আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, শীত মৌসুম হচ্ছে বাঘের প্রজননের সময়। এ সময় বাঘ-বাঘিনী হিংস্র হয়ে ওঠে। তারা একে অপরের সঙ্গী-সঙ্গিনীর খোঁজে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঢুকে পড়ে। যার প্রমাণ হিসেবে দেখা যায়, শীত এলেই বাঘ-বাঘিনী লোকালয়ে চলে আসে।’</p> <p>পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান বলেন, ‘বাঘের খবর পেয়ে বনরক্ষী ও বন্য প্রাণী সুরক্ষায় নিয়োজিত কর্মীদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে খোঁজ নিয়েছি। সন্ধ্যার পরে যাতে কেউ একা বের না হয় সে ব্যাপারে গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’</p> <p>সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) নির্মল কুমার পাল বলেন, প্রজনন মৌসুমে বাঘের বিচরণ বেড়ে যায়। সে কারণেও পথভ্রষ্ট হয়ে বাঘ-বাঘিনী লোকালয়ে চলে আসতে পারে। যখন আবার বুঝতে পারে এটা তার এলাকা নয় তখন আবার সে বনে ফিরে যায়।</p> <p>ডিএফও নির্মল কুমার পাল আরো বলেন, বাঘ বা বন্য প্রাণী যাতে অহরহ লোকালয়ে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণ করা হবে। চলতি অর্থবছরেই কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।</p>