<p style="text-align: justify;">লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত আনসার সদস্যদের নিয়ে নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খান গণসংযোগ করেছেন। শুরু থেকেই প্রচার-প্রচারণার কাজে নিয়মিত তাঁর সঙ্গে অস্ত্রধারী চারজন আনসার সদস্য ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আনসার সদস্যরা আনোয়ার খানের ঢাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বলে জানা গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">আজ রবিবার বেলা ৩টার দিকে রামগঞ্জের করপাড়া ইউনিয়নের গাজীপুর বাজার এলাকায় একটি ঘরে কর্মী বৈঠক করেন আনোয়ার খান। এ সময় বাইরে আনসার সদস্যরা অস্ত্র নিয়ে পাহারায় ছিলেন। সেখানে আনোয়ার খান প্রায় দেড় ঘণ্টা কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে অস্ত্রধারী আনসারসহ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুরাইয়া শিউলি ও করপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানকে নিয়ে গণসংযোগে বের হন। তাঁদের নিয়েই তিনি কয়েকটি বাড়িতে গণসংযোগ করেন। এ সময় প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পেছনে ছিলেন আনসাররা।</p> <p style="text-align: justify;">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটার জানান, আনোয়ার খান বর্তমান এমপি। এ জন্য গণসংযোগ করতে এসে তিনি অস্ত্রধারী আনসারদের নিয়ে ঘুরছেন। এটি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।</p> <p style="text-align: justify;">নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন কোনো প্রার্থী সরকারের কোনো নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে নির্বাচনী সংযোগ করলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও ১৯০৮-এর ৭৭ অনুযায়ী দাপ্তরিক প্রভাব বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবহার আইন ভঙ্গ হয়।</p> <p style="text-align: justify;">এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আনোয়ার হোসেন খানকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আনসার সদস্যরা আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন। এখন আমার সঙ্গে এলাকায় এসেছেন।’</p> <p style="text-align: justify;">আনোয়ার খানের ব্যক্তিগত সহকারী রিয়াজুল হায়দার বাপ্পীও এই প্রতিবেদককে একই কথা জানিয়েছেন। আনসার সদস্যরা প্রার্থীর ঢাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত। </p> <p style="text-align: justify;">রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোছা. শারমিন ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে তাঁকে আচরণবিধি অনুযায়ী চলার জন্য বলা হয়েছে এবং সতর্ক করা হয়েছে। আমাদের এখান থেকেও মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। সব প্রার্থীর জন্যই এটা প্রযোজ্য। আচরণবিধি যাঁরা ভঙ্গ করবেন তাঁদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হবে। মোবাইল কোর্টের আওতায় না পড়লে আমরা ইলেক্টোরাল কমিটি এবং পরবর্তীতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা নেব। আর প্রার্থীরাও সময়মতো জিনিসগুলো আমলে নিচ্ছেন।’</p> <p style="text-align: justify;">শারমিন ইসলাম আরো বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর আমরা থানাকে জানিয়েছি। থানা-পুলিশ গিয়ে আনোয়ার খানের সঙ্গে কোনো আনসার সদস্য পায়নি। পরে আজ সন্ধ্যায় তাঁকে সতর্ক করা হয়।’</p> <p style="text-align: justify;">রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘আনোয়ার খান নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে না। তিনি কোনো অভিযোগও করেননি। বিষয়টি ইউএনও আমাদেরকে জানানোর পর আমাদের একজন কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো হয়। তখন কোনো আনসার সদস্যকে পাওয়া যায়নি।’ </p> <p style="text-align: justify;">কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. ফরহাদ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এটা স্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। কোনো প্রার্থী গণসংযোগকালে সরকারি কোনো বাহিনী ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো কারণে প্রার্থী আশঙ্কাপন্ন হলে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করে সহযোগিতা চাইতে পারেন। </p> <p style="text-align: justify;">দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী (বর্তমান এমপি) আনোয়ার হোসেন খানের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন। অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির মাহামুদুর রহমান (লাঙল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের নিয়াজ মাখলুম ফারুকী (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোশাররফ হোসেন (আম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ গোফরান (কেটলি)।</p>