<p>রাঙামাটির নানিয়ার চরের সেই শচীন্দ্র চাকমাকে সম্মাননা দিয়েছে ‘সেভ অ্যা স্মাইল ফাউন্ডেশান’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দুর্গম পাহাড়ে নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে যাওয়ার জন্য এ সম্মাননা পেলেন তিনি। পাশপাশি তাঁর আশ্রয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের শতাধিক বই, ২০০ পিস স্যানেটারি প্যাড, ক্রিকেট ব্যাট, ফুটবল, দাবার সরঞ্জামও উপহার দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল বিকেলে শচীন্দ্র চাকমার বাড়িতে গিয়ে এসব সামগ্রী তুলে দেন সংগঠনের সদস্যরা।</p> <p>পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ে একটি সেমিনারও করেছেন। সংগঠনটির অর্থ সম্পাদক আহছান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজীর ছাত্র বিপুল চাকমা বলেন, ‘শচীন্দ্র চাকমার মতো মানুষকে সম্মাননা দিতে পেরে আমরা গর্বিত। এ যুগে এমন মানুষ বিরল। ভবিষ্যতে তাঁর বাড়িতে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা কম্পিউটার দেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।’</p> <p>শচীন্দ্র চাকমা বললেন, ‘লেখাপড়া করতে পারিনি বলে ভেতরে একটা দুঃখ রয়ে গেছে। ভাবতাম, যদি সুযোগ পাই শেষ বয়সে হলেও আমি পথের পাশে বাসা বানাবো। সেখানে ছেলেমেয়েদের রেখে লেখাপড়া শেখাব। আমার কথা তুলে ধরায় কালের কণ্ঠকে ধন্যবাদ।’<span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:Calibri,sans-serif"><span style="font-family:"Vrinda",sans-serif"></span></span></span></span></p> <figure class="image"><img alt="kk" height="853" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Orko/un2.jpg" width="1280" /> <figcaption>শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শচীন্দ্র চাকমা। ছবি :সংগৃহীত</figcaption> </figure> <p>এর আগে উপহার সামগ্রী নিয়ে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন নানিয়ার চরের তৎকালীন ইউএনও মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘কালের কণ্ঠে শিক্ষানুরাগী শচীন্দ্র চাকমার প্রতিবেদনটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। একক প্রচেষ্টায় তিনি যেভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা উদাহরণ যোগ্য। টয়লেট, গোসলখানাসহ শিক্ষার্থীরা কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছে। দ্রুত এসব সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ নেব।’</p> <p>খাগড়াছড়ির সমর চাকমা এবং ঢাকা থেকে শিল্পী সালমা জাকিয়া বৃষ্টি তাঁকে আর্থিক সহায়তা পাঠিয়েছিলেন। ‘ইহকাল’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপও উদ্যোগ নিয়েছে। এই গ্রুপের সদস্য তমাল চাকমা বললেন, ‘মানুষ নিজের জন্য বাড়ি বানায়। কিন্তু শচীন্দ্র চাকমা বাড়ি বানিয়েছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ছেলেমেয়েদের জন্য। আমরা টিশার্ট বিক্রি থেকে প্রাপ্য লভ্যাংশ ছেলেমেয়েদের কল্যাণে ব্যয় করব।’</p> <figure class="image"><img alt="kk" height="657" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Orko/so.jpeg" width="930" /> <figcaption>শচীন্দ্র চাকমাকে নিয়ে কালের কণ্ঠের সেই প্রতিবেদন।</figcaption> </figure> <p>নিভৃতে শিক্ষার মশাল জ্বালানো শচীন্দ্র চাকমাকে নিয়ে গত ৭ অক্টোবর প্রতিবেদন ছাপা হয় কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার ‘অন্য জীবন’ বিভাগে। শিরোনাম, ‘শচীন্দ্র এখন শিক্ষার সারথি’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবেদনটি শেয়ার দিয়ে অসংখ্য মানুষ ‘স্যালুট’ জানিয়েছে শচীন্দ্রকে। দিনভর কালের কণ্ঠ অনলাইনে সর্বাধিক পঠিত প্রতিবেদন ছিল এটি।</p> <p>অভাবের কারণে বেশিদূর পড়তে পারেননি শচীন্দ্র চাকমা। এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের নিজের বাসায় রেখে পড়াচ্ছেন। এ পর্যন্ত পড়িয়েছেন ৭৪ জনকে। এদের মধ্যে দুজন পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কাজটি করছেন শচীন্দ্র চাকমা। এখন তাঁর আশ্রয়ে আছেন মোট ১৭জন শিক্ষার্থী। শচীন্দ্রের সহায়তায় দারিদ্র্যের পাহাড় ঠেলাটা সহজ হয়েছে তাদের জন্য।</p> <p>রাঙামাটির নানিয়ারচরের দুর্গম জগনাতলীতে জন্ম তাঁর। মা-বাবা দরিদ্র জুমচাষী। চরম অভাবের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির পর শচীন্দ্রের পড়াশোনা এগোলো না। জুম চাষী হয়ে দিন, মাস, বছর কাটতে থাকল তাঁর। নিজের বঞ্চনা বোধ থেকে শচীন্দ্র স্বপ্ন দেখতেন, বড় রাস্তার পাশে একটা বাড়ি করবেন। দূরদূরান্তের দরিদ্র ছেলেমেয়েদের সেখানে থেকে পড়ালেখার সুযোগ করে দেবেন। ২০১৬ সালে নানিয়ার চরের ছয়-কুড়ি বিলে সড়কের পাশেই জায়গা কিনে বাড়ি বানালেন। ২০১৭ সাল থেকে সেই বাড়িতে রেখে পড়ালেখা করাচ্ছেন দরিদ্র ছেলেমেয়েদের। বেঁচে থাকতে তাদের জন্য একটা পাকা বাড়ি করে যেতে পারলে ভালো লাগতো বলে জানালেন এই মশালচি।</p>