<p style="text-align: justify;">গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফরা। হাসপাতালটিতে ছয় ঘণ্টায় সাতজন প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। এ নিয়ে গত তিন মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১৪৭টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরপর সাতজন প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ নার্সদের সহায়তায় এসব নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। মা ও নবজাতকরা সবাই সুস্থ রয়েছেন। <br /> কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পর পর সাতটি নরমাল ডেলিভারির খবর ছড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার সকালে এলাকার উৎসুক নারী-পুরুষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নবজাতকদের দেখতে যায়। </p> <p style="text-align: justify;">ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, বুধবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের সালাউদ্দিনের স্ত্রী নাদিরা বেগম (২৪) কন্যাসন্তান প্রসব করেন। ওই শিশুটির ওজন ২ দশমিক ২ কেজি। রাত ১টার দিকে বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের লিটন হাওলাদারের স্ত্রী ফারজানা (২১) ছেলে সন্তান প্রসব করেন। শিশুটির ওজন ৩ দশমিক ৫ কেজি। </p> <p style="text-align: justify;">রাত সোয়া ৩টার দিকে জেলার চিতলমারী উপজেলার খড়িয়া গ্রামের দেবাশিষ মন্ডলের স্ত্রী চুমকি মন্ডল (২৫) মেয়ে সন্তান প্রসব করেন। শিশুটির ওজন ৩ কেজি। ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে ফকিরহাটের পাইকপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন মাসুমের স্ত্রী আসমা বেগম (২৫) ছেলে সন্তান প্রসব করেন। শিশুটির ওজন ৩ কেজি। ভোর পৌনে ৫টার দিকে ফকিরহাটের মানসা-মৌভোগ গ্রামের আনিছুর রহমানের স্ত্রী চম্পা বেগম (২৫) মেয়ে সন্তান প্রসব করেন। শিশুটির ওজন ৩ কেজি। ভোর সাড়ে ৫টায় ফকিরহাটের পাগলা শ্যামনগর গ্রামের সুমনের স্ত্রী শালিমা বেগম (২০) ছেলে সন্তান প্রসব করেন। শিশুটির ওজন ৩ দশমিক ৭ কেজি। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ফকিরহাটের মুলঘর গ্রামের শিকদার আল-মামুনের স্ত্রী সুমা বেগম (২০) মেয়ে সন্তান প্রসব করেন। শিশুটির ওজন ৩ দশমিক ৫ কেজি। </p> <p style="text-align: justify;">এই সাত মা সন্তান প্রসবের জন্য বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় বলে চিকিৎসকরা জানান। এই প্রথম এত অল্প সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাতজন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করানো হলো।</p> <p style="text-align: justify;">স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বর মাসে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৫ জন, অক্টোবরে ৫৪ জন এবং নভেম্বর মাসে ৪৮ জন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সাদাত মো. মফিদুল ইসলাম জানান, চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ নার্সদের সহায়তায় মাত্র ছয় ঘণ্টায় সাতজন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে। ওই সাত নারী গর্ভধারণের প্রথম থেকেই তাদের চিকিৎসকদের পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। প্রসব বেদনা আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন।  প্রশিক্ষিত নার্স ও মিডওয়াইফ নার্সরা দক্ষতার সঙ্গে সাতজন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করেছেন। এখন প্রসূতি মা ও তাদের সন্তানরা সুস্থ রয়েছেন।<br /> ডা. আবু সাদাত মো. মফিদুল ইসলাম আরো জানান, সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মায়েদের চারবার চেকআপ করানো হয়। প্রথম চেক আপ ২৪ ঘণ্টা পর, দ্বিতীয় চেক আপ তিন দিন পর, তৃতীয় চেক আপ সাত দিন পর এবং চতুর্থ চেকআপ ৪২ দিন পর। শুক্রবার প্রথম চেক আপ শেষে ওই প্রসূতি মায়েদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু সাদাত মো. মফিদুল ইসলাম বলেন, গর্ভবতী মায়েদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ডেলিভারি করাতে হবে। বর্তমান সময়ে গর্ভবর্তী মায়েরা নরমাল ডেলিভারি না করে সিজারিয়ানের দিকে বেশি ঝুঁকে। অনেক সময় কয়েকজন চিকিৎসক এবং কিছু বেসরকারি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিনা প্রয়োজনে ওই গর্ভবতী মায়েদের সিজারিয়ানে উৎসাহিত করে। কয়েকজন চিকিৎসক নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে অনেক ক্ষেত্রে বিনা প্রয়োজনে সিজারিয়ানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা বিরোধী। </p> <p style="text-align: justify;">গর্ভবতী মায়েদের প্রথম থেকে সরকারি হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা সেবা নেওয়ার পরামর্শ দেন ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। গর্ভবতী মা এবং তাদের স্বজনরা সচেতন হলে গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেলিভারি কারানো সম্ভব বলে তিনি জানান।</p> <p style="text-align: justify;">ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফ নার্স বেবী রানী মিস্ত্রি জানান, গর্ভবতী ওই সাত নারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়ার পর তারা নানাভাবে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এর পর কিছু কলাকৌশল এবং ব্যায়াম করানো হয়। প্রকৃত প্রসব বেদনা উঠার পর নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে। ওই সাতজনের মধ্যে তিনি নিজে হাতে চারজন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করেছেন। </p> <p style="text-align: justify;">বেবী রানী মিস্ত্রি আরো জানান, অনেক জটিল কোনো বিষয় না থাকলে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি মেনে চলতে হয়। গর্ভবতী মায়েদের সহযোগিতা আর দক্ষতা থাকলে নির্বিঘ্নে নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব। তবে গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতাল অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বাড়িতে নরমাল ডেলিভারি না করানোর পরামর্শ ওই নার্সের।</p> <p style="text-align: justify;">সিনিয়র স্টাফ নার্স ফরিদা আক্তার জানান, তিনি ওই সাতজনের মধ্যে তিনজন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন। তার ২৬ বছরের সেবিকার অভিজ্ঞতায় এ পর্যন্ত সহস্রাধিক গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করেছেন। তিনি নিজে হাতে প্রথম দিকে যে সব গর্ভবতী মেয়েদের ডেলিভারি করিয়েছেন, এখন সেই সব মেয়ে এবং ছেলেদের স্ত্রীদের ডেলিভারি করাচ্ছেন।</p> <p style="text-align: justify;">নার্সিং সুপারভাইজার কমলা রানী বসু জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মিডওয়াইফ নার্স পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে ওই সাত গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে। তিনি নিজে ডেলিভারি কার্যক্রম তদারকি করছেন। </p> <p style="text-align: justify;">প্রসূতি মায়েরা জানান, ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সরা তাদেরকে নরমাল ডেলিভারি করাতে উৎসাহিত করেছিলেন। তারা নিজেরাও নরমাল ডেলিভারি করাতে আগ্রহী ছিলেন।  </p>