<article> <p>সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার আলুর উৎপাদন খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। সরকারি হিসাবে গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছিল ২৮ হাজার ৬১৪ টাকা। এবার কৃষি সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় এক বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৩ হাজার ৬১৪ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার কৃষকের এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা।</p> </article> <article>সে অনুযায়ী জেলায় ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনে এবার কৃষকদের বাড়তি খরচ পড়বে ১৪৫ কোটি ৫৫ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। কৃষি বিভাগের দাবি, উৎপাদনে খরচ বাড়লেও চাহিদার কারণে আলু চাষ করে লাভবান হবেন কৃষকরা। তবে উৎপাদন খরচ অনুপাতে ফলন এবং দাম বেশি না হলে আলু চাষে এবার লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। <p>জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর জেলায় ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমি থেকে আলু উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয় ক্ষেতলাল ও কালাই উপজেলায়। আবার আগাম জাতের আলু চাষ হয় সদর, আক্কেলপুর ও পাঁচবিবি উপজেলায়। জেলায় এরই মধ্যে আলু রোপণের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে।</p> </article> <article> <p>গত বছরের তুলনায় এবার বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সারের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা। গত বছর বিএডিসির অ্যাস্টেরিক ও ডায়মন্ড জাতের আলুবীজের কেজি ছিল ৪৮ টাকা। এবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮ টাকা। আবার বেসরকারি আলুবীজ এবার আরো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এসিআই এবং  ব্র্যাকের অ্যাস্টেরিক ও ডায়মন্ড জাতের প্রতি কেজি আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা।</p> </article> <article>অন্যান্য বেসরকারি কম্পানির বীজের দামও বিএডিসির আলুবীজের চেয়ে বেশি। ফলন বেশি হওয়ায় বাজারে ব্র্যাক ও এসিআই কম্পানির আলুবীজের চাহিদা বেশি। শ্রমিকের দামও বেড়েছে। গত বছর শ্রমিকরা দুই হাজার ৮০০ টাকার চুক্তিতে প্রতি বিঘায় আলু রোপণ করলেও এবার তাঁরা আগের দামে আলু রোপণ করছেন না। প্রতি বিঘায় শ্রমিকরা নিচ্ছেন সাড়ে তিন হাজার টাকা। আবার নিড়ানির সময়ও প্রতি বিঘায় ৫০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন শ্রমিকরা। ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় ৮০০ টাকার স্থলে এবার প্রতি বিঘা চাষ খরচ নেওয়া হচ্ছে হাজার টাকা। এ ছাড়া কীটনাশক ও পানির দামও বেশি। ফলে এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে এবার আলুর উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৩ হাজার ৬১৪ টাকা। যেখানে গত বছর খরচ হয়েছিল ২৮ হাজার ৬১৪ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় এবার আলুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা। <p>জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বুড়াইল গ্রামের কৃষক আতিউর রহমান বলেন, ‘আলুর মৌসুম শুরু হলেই সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদনে বাড়তি খরচ পড়ছে সাত থেকে আট হাজার টাকা।</p> <p>তালশন গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে আলু রোপণ করার জন্য শ্রমিকরা দুই হাজার ৮০০ টাকা নিলেও এবার তারা সাড়ে তিন হাজার টাকার নিচে কাজ করছে না। আবার বীজের দামও বেশি। এত টাকা খরচ করে যদি আলুর দাম না পাওয়া যায় তাহলে লোকসানে পড়তে হবে।’</p> <p>বেলগাড়ি গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘বাড়তি টাকা খরচ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আলু চাষ করে আমাদের কোনো লাভ হয় না। কোনো রকমে খরচ ওঠে। আমরা কৃষক, লাভ-লোকসান যাই হোক আমাদের চাষাবাদ করতেই হবে।’</p> <p>ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী বাজারের সার ও বীজ ডিলার দুলাল মিয়া বলেন, ‘বাজারে সার ও বীজের কোনো অভাব নেই। দাম বেশি হলেও কৃষকরা চাহিদামতো সরবরাহ পেয়ে খুশি। তবে বীজের কিছুটা দুষ্প্রাপ্যতা আছে। জেলায় বিএডিসির চেয়ে এসিআই এবং ব্র্যাক কম্পানির আলুবীজের চাহিদা বেশি।’</p> <p>জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, ‘জেলায় এবার আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৩৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়লেও লাভ বেশি পেয়ে কৃষকরা আলু চাষে আগ্রহী হওয়ায় জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশি আলু উৎপাদন হবে।’</p> </article>