<p style="text-align: justify;">১৯৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহে শহীদ হন ছাত্র নেতা শেখ ফিরোজ এবং জাহাঙ্গীর। এ দুই শহীদের আত্মত্যাগের কেটে গেছে ৩৩ বছর। তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শদ্ধা জানাতে আজও কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। সেদিনের ঘটনাস্থলের পাশে একটি মোটা পিলারের মতো ‘স্তম্ভেই’ ফুল দিয়ে শ্রদ্বা জানানো হয়। প্রায় ১০ বছর আগে ময়নসিংহ পৌরসভা স্মৃতিস্মম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে সিটি কর্পোরেশন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।</p> <p style="text-align: justify;">৯০’র আন্দোলনের ছাত্র নেতারা জানান, ১৯৯০ এর ২৮ নভেম্বর ময়মনসিংহ নগরীর গাঙিনার পাড় মোড়ে ছাত্র-জনতার মিছিল ও সমাবেশ চলছিল। সেই সমাবেশ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক শেখ ফিরোজ এবং জাসদ ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর। এরা উভয়েই গুলিবিদ্ব হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। এই দুই শহীদের আত্মত্যাগে দেশও স্বৈরাচার মুক্ত হয়। তৎকালীন ছাত্র নেতারা এ দুই শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার গাঙিনার পাড় মোড়ে মহাকালী গার্লস স্কুলের কোনায় একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এ ব্যাপারে প্রকৌশলী ও ভাস্কর্য শিল্পীদের সঙ্গেও আলোচনা হয়। সিদ্বান্ত হয় দৃষ্টি নন্দন স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের ছবি এবং তাদের আত্মদানের ঘটনা উল্লেখ থাকবে। </p> <p style="text-align: justify;">ছাত্র নেতারা অভিযোগ করেন, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই সেখানে একটি অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। একটি মোটা পাকা পিলার নির্মাণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্বা নিবেদনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেই দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ আর নির্মিত হয়নি। মূলত আর্থিক সংকট ও নকশা জটিলতার কারণেই দৃষ্টিনন্দন স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। সেই মোটা পিলারেই চলতে থাকে শ্রদ্বা নিবেদন।</p> <p style="text-align: justify;">সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে পৌরসভা (বর্তমান সিটি কর্পোরেশন) একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেন মেয়র ইকরামুল হক টিটু। সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু সেটিও আর বাস্তবে রূপ পায়নি। এভাবেই চলতে থাকে। সবশেষ ২০২২ সালে সিটি কর্পোরেশন থেকে আবারো উদ্যোগ নেয়া হয় নবরূপে শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের। এ জন্য ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর সিটি কর্পোরেশন দরপত্র আহবান করে। কাজ পায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সারিন্দা কন্সট্রাকশন। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয় চলতি বছরের ৬ মার্চ। প্রায় সোয়া ১৯ লাখ টাকায় কাজটি সম্পাদন হওয়ার কথা। বছরের মে মাসের ১৯ তারিখে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কাজটি শুরু করেনি।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে আবারো অচলাবস্থা সৃষ্টির ঘটনায় ৯০’র ছাত্র নেতাদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত সময়ে স্মৃতিস্তম্ভের কাজ শেষ করার জন্য সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটুকে অনুরোধ করেন।</p> <p style="text-align: justify;">এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘চুক্তির পর ঠিকাদার কাজ শুরু না করার কারণে ঢাকার একজন শিল্পীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সপ্তাহ খানেক ধরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুত শেষ হবে।’ </p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘যে ভাবেই হোক এবার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।’</p> <p style="text-align: justify;">দীর্ঘ বছরেও স্মৃতিস্মম্ভ নির্মাণ না হওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৎকালীন জাসদ ছাত্র নেতা অ্যাভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু। তিনি বলেন, ‘এতদিনেও স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত না হওয়ায় আমরা ব্যথিত। শুরু থেকেই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কিন্তু নানা কারণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। এ জন্য কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। দীর্ঘদিন পর কাজ শুরু হয়েছে, এটাই বড় কথা। এ জন্য সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ।’</p>