<p>যতদূর চোখ যায় শুধু ধুধু বালুচর। সবুজ প্রকৃতির মাঝে এঁকে বেঁকে বয়ে চলা নদী, নাম তার আত্রাখালী। দেশীয় ছোট-বড় মাছের জন্য বেশ নামডাক থাকলেও নদী হারিয়ে তার রূপ-জৌলুস। গত ১৫ বছরে নদীর বুকে বালু জমে এখন মৃতপ্রায়। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা আত্রাখালী নদী এখন শুধু নামেই নদী। বাস্তবে নদী এখন বালুচরে রূপ নিয়ে পরিণত হয়েছে মরুভূমিতে।</p> <p>১৯৭৪ সালের পর পাহাড়ি খরস্রোতা সোমেশ্বরীর একটি অববাহিকার পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আত্রাখালী নদীর সৃষ্টি হয়। নদীটি প্রায় ২০ কিলোমিটার ও ৫০ মিটার প্রস্থের। সোমেশ্বরী নদী ছাড়াও বেশ কয়েকটি পাহাড়ি ঝর্ণা ছড়ার পানি মিলেছে আত্রাখালীতে। এই নদীটি গিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলার আরেকটি শাখার সাথে মিলিতো হয়েছে। বর্তমানে বছরের মাত্র কয়েক বৃষ্টির জমা পানিতেই বেঁচে থাকে নদী। বাকি সময় পুরো নদীই পরিণত হয় ধুধু বালুচরে।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১২ বছর ধরে সোমেশ্বরী নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে যত্রতত্র বালু পাথর উত্তোলনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে সোমেশ্বরীর শাখা নদী এই আত্রাখালী নদীতে। এ ছাড়া আত্রাখালি নদীর মূল প্রবেশদ্বার আটকে বালুর ট্রাক চলাচলের রাস্তা তৈরি করায় সোমেশ্বরী নদীর পানি শাখা নদী আত্রাখালীতে প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। তাই এ যেন সোমেশ্বরীর কষ্টে পুড়ছে আত্রাখালী নদী। যখন নদীটি পানিতে টইটম্বুর থাকত। তখন এই নদীতে নানান প্রজাতির মাছ ধরেই জীবিকানির্বাহ করতেন অনেকেই। অন্যদিকে নদীর দুই পাড়ের কৃষকরা নদী থেকে পানি সেচ দিয়ে তাদের হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদন করে আসছিল। কিন্তু এখন এই সবকিছুই যেন থমকে গেছে।</p> <p>আগে এই নদীর পানিতে দুইপাড়ের কৃষকের সেচের ব্যবস্থা হলেও বর্তমানে পুরো নদীই শুকিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় অনাবাদী থেকে অনেক ফসলি জমি। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হাওয়াই সংকটের মুখে স্থানীয় কৃষকরা। তাই নদীটিকে খনন করে পুনরায় পানি প্রবাহ ফেরানো গেলে কৃষি সেচের আওতায় আসবে নদীটি এতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে রাজস্ব আয়।</p> <p>নদীর দুই পাড়ের কৃষকরা জানান, তারা ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার আগে কোনো চিন্তা করতে হতো না। এই নদীর পানি দিয়ে সেচ দিতেন। এখন আর জমিতে সেচ দেওয়ার মতো পানি নেই। মেশিন অথবা মটর খরচে ফসল উৎপাদন ব্যয়বহল হওয়ায় তারা অনেকই ফসিল জমিতে ধান চাষ না করে বিকল্প পথ হিসেবে শাক-সবজি চাষ করেন। তারা আরো জানান, এলাকার জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এখন মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হয়েছে জেলেসহ সাধারণ জনগণ।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা সামছুজ্জামান জানান, এক সময় আত্রাখালী নদীতেই পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। এখন আর সোমেশ্বরী নদীর পানি এই নদীতে দেখা মেলে না। শুধু বৃষ্টি হলে কোথাও কোথাও অল্প পানি দেখা যায়। নয়তো প্রায় সারা বছরই শুকনো থাকে। তাই নদীটিকে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দাবি জানান তিনি।</p> <p>দুদু মিয়া নামের এক স্থানীয় জেলে বলেন, এই নদীতে আগে অনেক মাছ ধরেছি। রাত-দিন সব সময়ই। গত ৮-৯ বছর ধরে এই নদীতে আর মাছ মেলেনা। অন্যসব খাল-বিলে জাল ফেলে কিছু পেলে তা দিয়েই পরিবার পরিজন নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি।</p> <p>এ প্রসঙ্গে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, আমাদের একটি প্রকল্প প্ল্যানিং কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আত্রাখালী নদীটি ধরে দেয়া আছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে কাজ করা হবে। </p>