<p>উত্তর শিমুলতাইড় গ্রামের কৃষক মোহাজার আলী বলেন, ধারদেনার টেকায় জমি আধি লিয়ে এক বিঘা জমিনত ধান লাগাচিলাম। কত স্বপ্ন ছিল এই ধানের খ্যাত লিয়ে। কিন্তু অসময়ের বানত হামার সব আশা ভাসে গেল। এখন ঘরত ভাত নাই। হাতত টেকা নাই। বানের পানি নেমে গেলেও ফসল আবাদের সামর্থ্য নাই। এবার বউ-ছল লিয়ে না খ্যায়া থাকা লাগবি।</p> <p>বানিয়াজান গ্রামের কৃষক লিয়াকত মোল্লা বলেন, আড়াই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান ও কালই চাষ করেছিলেন তিনি। খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা। ফসল ভালো হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন, ক্ষেতের ফসল বিক্রি করে দায়দেনা শোধ দেওয়ার পর সংসারের তিনজন মানুষের ছয় মাসের ভাতের চাল কিনে রাখবেন। কিন্তু তার স্বপ্নের ফসল এখন যমুনার ঢলে নিমজ্জিত। ভেঙে খান খান গেছে তার স্বপ্ন।</p> <p>যমুনার চর এলাকার শুধু মোজাহার আলী বা লিয়াকত মোল্লা নন, ক্ষেতের ফসল বিক্রি করে ঘরের ভাত জোগানোর এমন স্বপ্ন অসময়ের বন্যায় ম্লান হয়ে গেছে বগুড়ার ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলার অন্তত চার হাজার কৃষকের। জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় এখন তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।</p> <p>চরের কৃষকেরা বলছেন, জুন মাসের শেষ দিকে প্রথম দফা বন্যায় বিস্তীর্ণ চরের হরেক ফসল তলিয়ে যায়। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে কিছুটা পানি কমতে শুরু করলেও কয়েক দিনের মাথায় আরেক দফা ক্ষেতের ফসল প্লাবিত হয়। দীর্ঘ মেয়াদী বন্যায় ফসল হারিয়ে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে যায়। দুই উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার কৃষকের প্রায় ৬৭ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়। কৃষক সেই ক্ষতি পুশিয়ে নিতে কোমর বেধে মাঠে নেমেছিলেন। চরের জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশাও করেছিলেন।</p> <p>কৈয়াগাড়ির এলাকার কৃষক ইসমাইল হোসেন। তিনি দুই বিঘা জমিতে মাসকলাই চাষ করেছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন, মাসকলাই বিক্রির টাকায় দায়দেনা শোধ করে ঘরে ছয় মাসের ভাতের চাল কিনবেন। কিন্তু তার পুরো জমির মাসকলাই তিন দিন ধরে যমুনার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে একমুঠো কালাইও তার ঘরে উঠবে না।</p> <p>পুকুরিয়া চরের কৃষক মশিউর রহমান কয়েক দিন আগে তিন বিঘা জমিতে গাইঞ্জা ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। খেতের ধান বিক্রি করে ছয় মাসের ভাতের চাল ঘরে তোালার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা ঢলে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে তার ক্ষেতের ধান গাছ, ভেঙে গেছে তার সোনালী স্বপ্ন।</p> <p>ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক বলেন, যমুনা নদীর পানি তিন দিন ধরে বৃদ্ধি পেয়ে চর এলাকার নিম্নাঞ্চলের ২২৫ জন কৃষকের সদ্য লাগানো ২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। দুই এক দিনের মধ্যে জমি থেকে পানি নেমে গেলে ধানের কোনো ক্ষতি হবে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।</p> <p>সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, গত বন্যায় এ উপজেলার ৩৬ হাজার কৃষকের ৭ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসলের ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব কৃষককে সরকারি ভাবে প্রনোদনা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৮০০ কৃষককে ধানের চারা ও মাসকলাই বীজ দেওয়া হয়েছে। তারা জমিতে ধান ও কালাই বপন করেছেন। কিন্ত আবারো যমুনার পানি বেড়ে চরের নিম্নাঞ্চলের শত হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।</p>