<p>করোনা পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে থাকার কথা থাকলেও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া আসনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচিত সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদকে মাঠে একবারেই দেখা যাচ্ছে না। কোনো কাজেই তাঁকে পাচ্ছেন না স্থানীয় প্রশাসন। অথচ দেশের এমন দুর্যোগের মুহূর্তে স্থানীয় সাংসদের সরব উপস্থিতি ও পরামর্শ স্থানীয় প্রশাসনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যার কারণে এই আসনের সর্বস্তরের জনগণ হতাশায় ভুগছেন। অনেকেই তাঁর নীরবতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া করছেন। </p> <p>গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং মানুষকে ঘরবন্দি রাখতে ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে ঘরবন্দি রাখতে এমপি-জনপ্রতিনিধিদের সরকারিভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ২৮ মার্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মহীন মানুষদের খোঁজে সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সংসদ সদস্যদের সহযোগিতার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কুলাউড়ার এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদকে এই কাজে কোনোভাবেই দেখা যাচ্ছে না। </p> <p>কর্মহীন মানুষদের সরকারি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে চালসহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে বলা হলেও সেখানেও উপস্থিতি নেই তাঁর। এক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী একাই এসব বিষয় দেখভাল করছেন। প্রতিদিন রাত কিংবা দিনে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এলাকায় কর্মহীনদের বাড়ি বাড়ি ছুঁটে চলেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার। করোনা প্রতিরোধে তাঁরা মানুষজনকে সচেতন করে যাচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা নিয়েও যাচ্ছেন। </p> <p>এদিকে করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব রাখতে এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কাউকে বের না হতে মাঠে তৎপর থেকে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওসার দস্তগীর, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজরাতুন নাঈম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মামুনুল হক, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়ারদৌস হাসান, ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী প্রমুখ। </p> <p>সরকারি ত্রাণ ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান উপজেলার ৭ শতাধিক কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন। পাশাপাশি ২৫০০ সার্জিক্যাল মাস্কও বিতরণ করেছেন। এমনকি কুলাউড়া ও সিলেটে থাকা তাঁর তিনটি বাসার ভাড়া এক লক্ষ টাকা মওকুফ করেছেন। </p> <p>সুলতান মনসুর এমপি প্রায় চার মাস থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুসারীরা। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর আর তাকে কুলাউড়ায় দেখা যায়নি। ঢাকায় বসে শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তাঁর নির্বাচনী এলাকার প্রশাসনসহ সকল জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রাপ্ত বরাদ্দ/সাহায্য প্রকৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিন। নিজের ভোটার বা সমর্থকদের নয়, যারা দিনে আনে দিনে খায় তাদের অধিকার নিশ্চিতে ভূমিকা রাখুন। </p> <p>অন্যথায় অন্তত আমার সংসদীয় এলাকায় যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এতো কিছু বললেও তিনি নিজে এখনো এলাকায় আসছেন না। এমনকি তাঁর ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো ত্রাণ সহায়তা দিতে দেখা যায়নি। তবে তিনি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে জনসচেতনতার জন্য জনস্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে হাত-ধোয়ার জন্য বেসিং তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তাঁর কুলাউড়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। </p> <p>এমপি সুলতান মনসুরের কুলাউড়া অফিসের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, সুলতান মনসুর এমপির কোনো ব্যক্তিগত অর্থ নেই। কোনো আউট সোর্স ইনকাম নেই। তিনি ত্রাণ দিতে হলে প্রবাসী ও সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে ত্রাণ দিতে হবে। সুলতান মনসুরের বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। ইচ্ছাশক্তি থাকলেই এই মুহূর্তে বাড়ি বাড়ি যাওয়া সম্ভব হবে না। এই মুহূর্তে তিনি এলাকায় আসলে তাঁকে ১৪ দিন বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বয়সের ভারে তিনি অনেকটা অসুস্থ অবস্থায় ঢাকার বাসায় আছেন। তবে তিনি স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভার মেয়র/কাউন্সিলর ও প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান/মেম্বারদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে মনিটরিং করছেন। যাতে সরকারের ত্রাণসামগ্রীগুলো সুষমভাবে বন্টন করা হয়। </p> <p>করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয় এমপির এমন নীরবতা দেখে কুলাউড়ার অনেকেই তাঁদের ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন ‘এই দুঃসময়ে কেন আমাদের এমপিকে দেখতে পাই না!’ তিনি কি নিখোঁজ রয়েছেন। নির্বাচনের আগে উন্নয়ন ও মানুষের পাশে থাকার অনেক ফুলঝুরি ছড়িয়ে ভোট কামনা করেছিলেন তিনি। অথচ আজ এমন পরিস্থিতিতে তাঁর কোনো ভূমিকা নেই।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, মানুষের দুর্দিনে তিনি (এমপি) কোথায়? এলাকার সর্বস্তরের মানুষ কোভিড-১৯’র সংক্রমণ আতঙ্কে গৃহবন্দি রয়েছে। গুজবে, আতঙ্কে, খাবারের সন্ধানে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো যখন দিশেহারা তখনো নির্বাচনী আসনের এমপির নীরবতা এলাকার মানুষদের ভাবাচ্ছে, প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কোনো কাজেই তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। ফলে দেশের এই কঠিন দুর্যোগময় মুহূর্তে ঘরে বন্দি বেকার, দুঃস্থ, কর্মহীন, রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর ও অসহায় মানুষরা দিন দিন হিসেব কষছেন কাকে তাঁরা ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেছেন। প্রশ্ন রাখছেন করোনায় কোথায় আমাদের এমপি? এই দুঃসময়ে কেন আমাদের এমপি সাহেবকে দেখতে পাই না! </p> <p>জানতে চাইলে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এমপি মঙ্গলবার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার নির্দেশে আমার পরামর্শ, আমার পরিচালনা ও সহযোগিতায় কুলাউড়ায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সরকারি ত্রাণ ব্যতিত আপনার ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো ত্রাণ বিতরণ করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি যে বরাদ্দ হয়েছে সেটাই আমার ব্যক্তিগত বরাদ্দ। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সহযোগিতায় যেখানে যেখানে ত্রাণ দেওয়া দরকার সেটাই আমাদের দেওয়া। আপনি তো এলাকায় নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যেখানে থাকার প্রয়োজন সেখানেই আছি। আমি কোথায় আছি না আছি সেটা আমি জানি তুমি কিভাবে জানো। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলছেন আমরা সেইভাবে কাজ করে যাচ্ছি। </p>