<p>'ছয় বছর ধইরা আমার প্রতিবন্ধী ছেলেডারে শিকল দিয়া বাইন্দা রাখছি। ছেলেডার একটা চোখ নাই। কথাও কইতে পারে না। ছোটবেলা থাইকা সে বোবা। মানুষের বাড়ি থাইকা ভিক্ষা কইরা কইডা চাউল পাই। হের থেইকা ছেলেডারেও খাওয়াই, আমিও খাই। ছেলেডারে ভাল কোনো খাওন দিতে পারি না। ছেলেডারে লইয়া কত যে কষ্টে আছি বাবা, তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। কেউ আমার কথা হুনে না। আমাগোর এই কষ্ট কেউ দেহে না'।</p> <p>কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের ষাইটকান গ্রামের শিকলবন্দি মোমতাজ মিয়ার বিধবা মা দোলেনা খাতুন আহাজারি করে এসব কথা বলেন। এ সময় ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, হুনছি সরকার নাকি বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড কইরা দিতাছে। কই আমার ও আমার ছেলেডার একটা ভাতার কার্ড কইরা এহনও তো কেউ দিল না। </p> <p>জানা যায়, মোমতাজ মিয়া উপজেলার ওই গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে। তার বয়স ৩০ বছর। ছোটবেলায় তাঁর বাবা মারা গেছেন। মোমতাজ মিয়ার তিন ভাই ও চার বোন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইয়েরাও বিয়ে করে আলাদা হয়ে পড়েছেন। কোনো রকমে তাদের সংসার চলে। ছয় বছর আগে হঠাৎ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন মোমতাজ। গ্রাম্য কবিরাজি ও ডাক্তারি চিকিৎসা দেওয়া হলেও তিনি ভালো হননি। দিন দিন তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে বাড়ি ও আশপাশের লোকজনকে মারধর করতে থাকে। পরে তাকে শিকলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। </p> <p>সরেজমিনে মোমতাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পশ্চিম পাশে জরাজীর্ণ ভাঙা একটি চৌচালা টিনের ঘর। ঘরটি অন্ধকার। বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। ওই ঘরের পশ্চিম পাশের একটি পাকা পিলারের সঙ্গে মোমতাজের ডান পা শিকল দিয়ে বাঁধা। ওই ঘরের মেঝেতে কিছু খড়ের ওপর একটি কাঁথায় মুড়িয়ে বসে আছে মোমতাজ। কেউ কাছে গেলে চিৎকার করে কি যেন বুঝাতে চায়। কিন্তু বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ তার কথা বোঝে না। এখানেই তার খাওয়া-দাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানা ও ঘুমানো। পাশেই একটি ভাঙা চৌকিতে বৃদ্ধা মা দোলেনা খাতুন থাকেন।</p> <p>মোমতাজ মিয়ার বৃদ্ধা মা দোলেনা খাতুন জানান, মোমতাজ জন্মগতভাবেই বোবা। কথা বলতে পারে না। ছোটবেলায় টাইফয়েড জ্বরে তার ডান চোখটি নষ্ট হয়ে যায়। একই সাথে ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন। আশপাশের মানুষের ক্ষতি করে তাই তাকে ছয় বছর ধরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। সারাদিন তিনি মানুষের বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করে যা পায় তা দিয়ে নিজেও খান, ছেলেকেও খাওয়ান। ছেলেটাকে নিয়ে তিনি খুবই কষ্টে আছেন। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিধবা কিংবা প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেননি। </p> <p>ওদিকে, চণ্ডিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামছুদ্দিন অতি দ্রুত তার প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন। তিনিও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসান তাঁর খোঁজখবর নিয়ে সুচিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন। </p>