<p>ঘুষ-দুর্নীতি ও লুটপাটসহ নানা ঘটনায় আলোচিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকার অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ হয়েছেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর তাকে বদলির আদেশ দেয়। সেই আদেশ অনুযায়ী ১৫ অক্টোবর অফিসের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার শেষ দিন ছিলো আজ। আর ১৬ অক্টোবরের মধ্যে স্বন্দ্বীপ উপজেলায় যোগদান করতে বলা হয়েছিল পিআইও নুরুন্নবীকে।</p> <p>কিন্তু মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় আদেশ অনুযায়ী স্ট্যান্ড রিলিজ হয়েছেন পিআইও নুরুন্নবী সরকার। টানা ৫ বছরের বেশি সময় ধরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পিআইওর দায়িত্ব পালন করে ঘুষ-দুর্নীতি ও লুটপাট, মামলা এবং হুমকি-ধামকিসহ নানা ঘটনায় বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেন নুরুন্নবী সরকার।</p> <p>মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলহাজ ইদ্রিস আলী। তিনি মুঠফোনে বলেন, বদলির আদেশ অনুযায়ী পিআইও নুরুন্নবীকে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ দিন মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। এমনকি তিনি অফিসেও আসেননি। এতে আদেশ অনুযায়ী তিনি স্ট্যান্ড রিলিজ বলে গণ্য হবেন। আগামীকাল তার স্বন্দ্বীপে যোগদানের কথা। আগামীকাল দুপুরের পর তার স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে অবগত করা হবে। এ ছাড়াও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নতুন পিআইও মোশাররফ হোসেন যোগদান করেছেন। আগামী ১৬ অক্টোবরের পর থেকে তিনি অধিদপ্তরের আদেশ অনুযায়ী অফিসের সকল দায়িত্ব পালন করবেন।</p> <p>এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের অবগত করা হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তার আস্থাভাজন আবদুল হালিমসহ জড়িতদের  বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। </p> <p>তবে পিআইও নুরুন্নবী সরকারকে শুধু বদলির আদেশ এবং তাকে অন্য কোনো শাস্তি না দিয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও সচেতন মহলের মধ্যে। তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।</p> <p>এরআগে পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে জুন ক্লেজিং এ কাজ না করে এবং ক্রটিপূর্ণ বিল-ভাউচার দাখিল করে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে হুমকি দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকার বিল উত্তোলনের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে গত ৭ ও ৯ সেপ্টেম্বর নানা অনিয়ম, দুর্নীতি-লুটপাট নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে কারের কণ্ঠ। কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি শেখ মামুন-উর-রশিদ ও যমুনা টিভির প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান পলাশসহ স্থানীয় সাংবাদিক অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে অশোভনীয় আচরণ এবং নানা দাম্ভিকতা দেখিয়ে প্রকাশ্যে ধুমপান করেন পিআইও নুরুন্নবী। পরে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। এ ছাড়াও ধূমপানের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল হয়। এতে তোলপাড় সৃষ্টি হয় স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ অধিদপ্তরে।</p> <p>প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই গত ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসন দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে লোক দেখানো তদন্ত কমিটি তড়িঘড়ি করে একদিনেই তদন্ত শেষ করেন। তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অনেক অভিযোগ এড়িয়ে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটি। দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত পিআইও নুরুন্নবী সরকারের খোদ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলহাজ ইদ্রস আলী ছিলেন। এ কারণে পক্ষপাত মুলকভাবেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটি।</p> <p>এদিকে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে পিআইও নুরুন্নবী বিভিন্ন কৌশলে কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি শেখ মামুন-উর-রশিদ ও যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদক জিল্লুর রহমান পলাশসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে চাঁদাবাজির মামলা করার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।</p> <p>২০১৫ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন পিআইও নুরুন্নবী। এরপর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিনটি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়। এ ছাড়া অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে আজও কোনো ব্যবস্থাই হয়নি। </p>