<article> <p style="text-align: justify;">দেশের পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সবাইকে এক ছাতার নিচে আনতে ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তারা নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমছে না। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা অনেকটাই অগোছালো রয়ে গেছে। তিন বছর পরও সংকটে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় ৫ বিশ্ববিদ্যালয়" height="360" src="https://www.kalerkantho.com/_next/image?url=https%3A%2F%2Fcdn.kalerkantho.com%2Fpublic%2Fnews_images%2F2024%2F01%2F14%2F1705175517-136c39567eb80cee2120d888f97d8b89.jpg&w=1920&q=100" width="600" /></p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">২০২৩ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় গত ২৬ নভেম্বর। এতে উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। জিপিএ ৪ থেকে ৫-এর নিচে পেয়েছে তিন লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৮ জন। ফলে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চেষ্টা করবে। এরই মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সূত্র জানায়, গুচ্ছে থাকা পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই ভর্তিপ্রক্রিয়ায় থাকতে বারবার অনীহা জানাচ্ছেন। এবার তাঁরা যেকোনোভাবেই হোক গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসতে চান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এদের সঙ্গে একই পথে হাঁটতে চায় আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ অবস্থায় আজ রবিবার সকাল ১১টায় গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে বসবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, “গুচ্ছ বা একটা সমন্বিত ভর্তি চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর। এটা তার ভিত্তিতেই হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যদি একটা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হতে পারে, তাহলে তাদের ভোগান্তি কমবে। তাই আমাদের আহবান থাকবে, যেকোনোভাবেই হোক গুচ্ছকে অটুট রাখা। আমরা উপাচার্যদের বৈঠকেও এই অটুট থাকার কথা বলব। আর ‘একক’ ভর্তি নিয়েও কাজ শুরু হয়েছে। আমি বলব, প্রাথমিক কাজ চলছে। তা বাস্তবায়ন হওয়া সময়ের ব্যাপার।”</p> <p style="text-align: justify;">জানা গেছে, সাধারণ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। প্রকৌশল গুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি গুচ্ছের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আলাদা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) গুচ্ছ ভর্তিতে আসেনি। এই তালিকায় আছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।</p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএর ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিজেদের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় আসছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় অন্যদের ফের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, তাঁরা তাঁদের নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারছেন না। এতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্রতা থাকছে না।</p> <p style="text-align: justify;">গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গুচ্ছ নিয়ে সংকট এ বছর জোরদার হয়েছে। তবে আমরা চাইব, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আমাদের গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি ধরে রাখা। এ জন্য আমরা সব উপাচার্যকে বলব, তাঁরা যেন তাঁদের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত আগে নেন। কারণ একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা কিভাবে হবে, তা নির্ধারণ করবে একাডেমিক কাউন্সিল। এখন যদি একাডেমিক কাউন্সিলের মতামত ছাড়া উপাচার্য সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন, তাহলে পরে তা রক্ষা করতে অনেক বেগ পেতে হয়।’ </p> <p style="text-align: justify;">সূত্র জানায়, সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ভর্তির আওতায় আনতে গত বছরের ১৫ এপ্রিল ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই আলোকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে আওতাভুক্ত করে ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি একাধিক সভা করে ‘বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৩’ নামে একটি খসড়া চূড়ান্ত করে, যা গত ৩১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে এ বছর ‘একক’ ভর্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ইউজিসি।</p> <p style="text-align: justify;">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং মেডিক্যাল-ডেন্টাল কলেজে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। কিন্তু গুচ্ছে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় থাকলে তারা ঐকমত্য না থাকায় তাদের ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে এখনো কোনো বৈঠকই করতে পারেনি। আর গুচ্ছের সিদ্ধান্তের কারণে কিছুটা আটকে আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি। ফলে অনেকটাই অগোছালো হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা।</p> <p style="text-align: justify;">শিক্ষার্থীরা বলছেন, সবাই বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। এর বাইরে মেডিক্যাল-ডেন্টালেও অনেকেই পরীক্ষায় বসবেন। আরো কিছু বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যারা নিজেরাই ভর্তি পরীক্ষা নেয়। আর তিনটি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে অন্তত আট-১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এখন যদি গুচ্ছ থেকেও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেরিয়ে যায়, তাহলে আর গুচ্ছেরও গুরুত্ব থাকবে না।</p> </article>