<p style="text-align:justify">২০১০ সালে পুঁজিবাজারে কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ সুযোগে কারসাজি চক্র হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম। </p> <p style="text-align:justify">সোমবার (১২ আগস্ট) ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত শেয়ারবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় শেয়ারবাজার পুনর্গঠনে সর্বমোট ৩০টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন তিনি। </p> <p style="text-align:justify">সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ বছর বিএসইসি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।  ২০০৯-২০১০ সালে শেয়ারবাজারের পতনের পর লাখ লাখ বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যান। শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন ঋণ প্রদানকারী বহু প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। এর পর থেকে বাজার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় বারবার ক্ষতির মুখে পড়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে যান। বাজার পতনের কারণ ও দোষীদের খুঁজে বের করতে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা বাজার কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আজও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলশ্রুতিতে সেই কারসাজি চক্র আরো সক্রিয় হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর পর্যায়ক্রমে এম খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা থেকে এসে এই পদে আসীন হন। এই দীর্ঘ সময়ে তাদের অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি, বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায়।’</p> <p style="text-align:justify">সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বিএসইসির দুই চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বেশকিছু অনিয়ম করেছেন। বিভিন্ন কম্পানিকে মানহীন আইপিও অনুমোদন, রাইট শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে ২সিসির মাধ্যমে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, ওটিসি মার্কেট থেকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা কম্পানিগুলোকে ক্ষমতা অপপ্রয়োগ করে এসএমই মার্কেটে আনা এবং ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বাজারকে স্থবির করে রাখা হয়েছিল।’</p> <p style="text-align:justify">ডিবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ডিএসই, সিএসইসহ সিডিবিএল ও সিসিবিএলের পর্ষদে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিদের এখনো উপস্থিতি রয়েছে। তাদের অনভিজ্ঞতা ও অদূরদর্শিতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। আমরা দাবি জানাই, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের সরিয়ে যোগ্য এবং অভিজ্ঞ পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফের সংগঠিত করা হোক।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে, যার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি তৎকালীন সরকারের নির্দেশে গঠিত হয়েছিল এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা তছরুপ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার দাবি জানাই এবং যাদের অর্থ নেওয়া হয়েছে, তাদের অবিলম্বে তা ফেরত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’</p> <p style="text-align:justify">সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সময়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিদেশে রোড শো আয়োজন করেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল। প্রতিটি রোড শোর শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।’</p> <p style="text-align:justify">সংবাদ সম্মেলনে ডিবিএর পক্ষে থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবগুলো হলো : বিএসইসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের চাপে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার ট্রেক এক কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা হারিয়েছে। যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ছাড়া ডিএসই, সিএসইসহ সিডিবিএল ও সিসিবিএলের পর্ষদে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এমন ব্যক্তিদের এখনো উপস্থিতি রয়েছে। তাদেরও পদত্যাগ দাবি করে সংগঠনটি।</p>