<p style="text-align:justify">কয়েক দিন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাংক খাত। সে সময় ইন্টারনেটনির্ভর সব সেবাই বন্ধ হয়ে ছিল। যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানি ও প্রবাস আয়ে। এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের বিকল্প মাধ্যম খুঁজছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। যে মাধ্যম ব্যবহার করে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা যাবে।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং সেবায় বড় বিঘ্ন ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এই বিকল্প খুঁজে বের করার আগে ইন্টারনেট বন্ধ হলে ম্যানুয়ালি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র বলেছে, গত ১৮ থেকে ২৩ জুলাই ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকের প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরামর্শে বিকল্প নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগ। এরই মধ্যে তারা এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে, যা দ্রুত সময়ের মধ্যে গভর্নরের কাছে দেওয়া হবে। এর পরই সরকারের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবে আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত আন্দোলন শুরু হলে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। এর মাধ্যমে সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করতে চায়। কিন্তু আমাদের সব ধরনের ইন্টারনেটব্যবস্থা একই ধারায় চলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করতে ইন্টারনেট বন্ধ করলেই সব ধরনের পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা বিকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেছি।’</p> <p style="text-align:justify">তথ্য বলছে, দেশে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা এবারই প্রথম না। বিভিন্ন সময় আন্দোলন দমন বা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট সেবা বিশেষত মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সাময়িকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০২৩ সালে বিরোধী দলের আন্দোলন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে আন্দোলন এবং ২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন দমনেও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছিল।</p> <p style="text-align:justify">নিউ ইয়র্কভিত্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেস নাউ গত মে মাসে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ তথা ইন্টারনেট শাটডাউন নিয়ে একটি ডাটাবেইস প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে তিনবার বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট সেবা। ওই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১তম। আর ২০২২ সালে তা ছিল পঞ্চম। সে বছর দেশে ছয়বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া ২০২১ সালে দুবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের বৈঠক শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিকল্প নিয়েও চিন্তা করতে হবে। আমরা উন্নত দেশ হওয়ার আগেই ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস লাইন থাকা প্রয়োজন। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর ব্যাংক একই লাইনে চলবে এটা তো হওয়ার কথা নয়। আমাদের এমন লাইন করা দরকার, যেন ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলেও ব্যাংকের কার্যক্রম চলে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের জন্য আলাদা ব্রডব্র্যান্ড লাইনের মতো লাইন গড়ে তোলা দরকার।’</p>