<article> <p style="text-align: justify;">বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে বিদেশি ঋণের প্রতি সরকারের ঝোঁক বাড়ছে। একই সঙ্গে বিগত বছরগুলোতে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়ছে। ফলে প্রতিবছর সরকার যে বিদেশি ঋণ নিচ্ছে, তার বেশির ভাগই সুদ-আসলসহ ঋণ পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ।</p> </article> <p style="text-align: justify;">ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে এখন তুলনামূলকভাবে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।</p> <article> <p style="text-align: justify;">অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল রবিবার চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) বৈদেশিক ঋণ সহায়তার তথ্য প্রকাশ করে ইআরডি। এতে দেখা যায়, প্রথম ১০ মাসে সরকার সুদ-আসলসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে ২৮১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৩০ হাজার ৯২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ৩০ হাজার ৯২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময় ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৯ হাজার ২৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি চার লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৬০.৬৫ শতাংশ। ঋণ শোধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে সুদ পরিশোধ।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ঋণের বিপরীতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১২ হাজার ৬২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১২৪.৪৮ শতাংশ বেশি। আর ডলারের হিসাবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ১০১.৫৫ শতাংশ। মূলত টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগের বছরগুলোতে নেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি।</p> <p style="text-align: justify;">ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার যে ঋণ পরিশোধ করেছে তার মধ্যে আসল ঋণ ১৮ হাজার ২৯৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বাকি ১২ হাজার ৬২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময় সরকারের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৯ হাজার ২৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসল ছিল ১৩ হাজার ৬২৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল পাঁচ হাজার ৬২৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিগুণের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে।  </p> <p style="text-align: justify;">এ সময় ডলারের হিসাবে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৮১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা আগের বছরে ছিল ১৯৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এ সময় ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আগের বছর ছিল ৫৬ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। অর্থাৎ ডলারের হিসাবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার।</p> <p style="text-align: justify;">অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার, যা আগের অর্থবছরের একই সময় ছিল ৫৯১ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় বেড়েছে ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। ঋণের অর্থছাড় বাড়লেও কমেছে অনুদানের অর্থ। অর্থবছরের ব্যবধানে যেখানে ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে প্রায় ৪০ কোটি, সেখানে অনুদান কমেছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার।</p> <p style="text-align: justify;">অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে জাপান। এ পর্যন্ত দেশটি থেকে অর্থছাড় হয়েছে ১৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এডিবি ছাড় করেছে ১৪৯ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। এরপর বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ১০৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া রাশিয়া ৮৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, চীন ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার ছাড় করেছে। ভারত দিয়েছে ২৪ কোটি ২২ লাখ ডলার। বাকিগুলো অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে এসেছে।</p> <p style="text-align: justify;">ঋণ পরিশোধ এবং অর্থছাড়ের মতোই চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়ন সহযোগীরা এ সময় ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৫৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ২০৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।</p> <p style="text-align: justify;">ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে। সংস্থাটির কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২৬৯ কোটি ১২ লাখ ডলার। এ ছাড়া জাপানের কাছ থেকে ২০৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অন্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ১৪৫ কোটি ৮১ লাখ ডলার। এদিকে অর্থ ছাড় করলেও রাশিয়ার চীন এবং ভারতের কাছ থেকে অর্থবছরের ১০ মাসেও কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।</p> </article>