<p>ভারত থেকে পেঁয়াজ আসায় খোলাবাজারের দামে প্রভাব পড়েছে। এখন সরকারি সংস্থা টিসিবি যে মূল্যে পণ্যটি বিক্রি করছে, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারেও একই দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম প্রতি কেজি ৪০ টাকা। অথচ চার দিন আগেও ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল পেঁয়াজ। এখন কেজিতে কমে গেছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। তবে গতকাল বুধবার পাইকারি বাজারে আরো এক টাকা কমিয়ে ৩৯ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।</p> <p>ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় পণ্যটির দাম কমছে। ভোক্তারা বলছেন, মজুদ করা পেঁয়াজ আরো কম মূল্যে বিক্রি করতে হবে ভেবে পণ্যটির দাম কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।</p> <p>গত মঙ্গলবার রাজধানীর টিসিবি ভবনের সামনে ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। ঢাকায় ১০৩টি, চট্টগ্রামে ৫০টি ও গাজীপুরে ১৫ থেকে ২০টি স্পটে এই বিক্রি কার্যক্রম চলবে। প্রতিটি ট্রাকে থাকবে ১০ টন করে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সরকার রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখলেও রোজার মধ্যে বাংলাদেশকে পেঁয়াজ দিয়েছেন।</p> <p>ভারত সরকারের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, সে সম্পর্কের কারণেই রমজানের মধ্যে পেঁয়াজটা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ভারতে নির্বাচন চলছে, তাদের কৃষক আন্দোলন চলছে, ভোক্তা পর্যায় আছে, সব কিছু মোকাবেলা করে তারা কমিটমেন্ট রেখেছে। এ জন্য আমি ধন্যবাদ দিই।’</p> <p>ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালানে এক হাজার ৬৫০ টন গত রবিবার রেলপথে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হয়ে বাংলাদেশে আসে। ফ্যামিলি কার্ডধারীদের জন্য চলমান বিপণন ব্যবস্থার পাশাপাশি পুরনো নিয়মে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ট্রাক সেলের মাধ্যমে এই পেঁয়াজ বিক্রি করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।</p> <p>রোজার প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজ না আনতে পারার কারণ ব্যাখ্যা করে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘এই একই পেঁয়াজ ভারত সরকার আবুধাবিতে এক হাজার ২০০ ডলারে বিক্রি করেছে। আমাদের জন্য নির্ধারিত ছিল ৮০০ ডলার। যখন আমরা ক্যালকুলেশন করলাম দেখলাম, ৮০০ ডলারের পেঁয়াজ আনলে আমাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে তা বাজার মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় সম্ভব নয়। </p> <p>ফলে আমাদের বাণিজ্যসচিব (তপন কান্তি ঘোষ) তিন দিন তাঁর টিম নিয়ে কন্টিনিউয়াস নেগোসিয়েশন করেছেন। এ জন্য আমাদের দেরি হয়েছে সাত দিন। আবার ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারতের নিষেধাজ্ঞা ছিল, তারা সেটা এক্সটেন্ড করেছে। যদিও আমাদের ৫০ হাজার টন এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছিল না। এই শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমাদের পেঁয়াজ আনতে হয়েছে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমাদের এই যে অভিজ্ঞতা হলো, বাকি পেঁয়াজগুলো আনাও আমাদের জন্য কোনো সমস্যা হবে না। তাড়াহুড়া করব না, আমাদের লোকাল পেঁয়াজও আছে। আমরা চাই না আমাদের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। বাজারটা যেন এমন থাকে যেন কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায় এবং ভোক্তাদেরও যেন অতিরিক্ত মূল্য না দিতে হয়। আমরা এই পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছি ভোক্তা পর্যায়ে এবং ৪০ টাকায়ই দেওয়া হবে।’</p> <p>প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই ট্রাকসেলটা কিন্তু ওপেন। এটা কার্ডধারীরাও পাবে, অন্যরাও নিতে পারবে। আমরা দুই কেজি করে বলেছিলাম, এখন আড়াই কেজি করে একেকজন ভোক্তা নিতে পারবে।’ এভাবে ধীরে ধীরে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে না, সরবরাহ তৈরি করেই আমরা দাম কমাব। এটা কিন্তু আজকে প্রমাণিত। যদি আমরা বিকল্প সরবরাহ ঠিক রাখতে পারি, বাজারে চাইলেও দু-চারজন বাজারব্যবস্থাকে নষ্ট করতে পারবে না। আমরা আমাদের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুধু পেঁয়াজ না; ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের টিসিবির মাধ্যমে আমরা বাফার স্টক তৈরি করব।’</p> <p>খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদার আল আমিন বাণিজ্যালয়ের কর্ণধার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নোমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারত থেকে আনা টিসিবির পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে না এলেও একই দেশ থেকে চোরাইপথে পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় পণ্যটির দাম কমছে।   </p> <p>খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘বাজারে এখন চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ অনেক বেশি। তাই দাম কমছে। বাজারে এখন যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, এর চেয়ে কমে বিক্রির সুযোগ নেই। কারণ এর কমে বিক্রি করলে লোকসানের পরিমাণটা বাড়বে। এরই মধ্যে আমরা লোকসানে পণ্যটি বিক্রি করছি।’</p> <p>ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমাদের দেশে অদ্ভুত একটি বিষয় আছে। অভিযান-জরিমানায়ও পণ্যের দাম কমে না। যখনই শুনবে আমদানি হচ্ছে, দাম কমতে শুরু করবে। এমনটাই এখন হচ্ছে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে। এরই মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরেই কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। অথচ আমদানি করা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে আসার কথা নয়। এর পরও দাম কমিয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না ঘোষণা করলেই দাম বেড়ে যায়। এটি প্রমাণ করে, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। তাই সরকারকে ব্যবসায়ীদের এই কারসাজি বন্ধে কাজ করতে হবে। কারসাজি বন্ধ না হলে বাজার স্থিতিশীল হবে না।’</p>