একটি হেলমেট ছাড়া আপনি কেন বাইক চালাবেন? হেলমেট এর দাম কম হোক বেশী হোক আপানার নিজেকে বাঁচাতে হলে হেলমেটের দাম এর দিকে না তাকিয়ে অবশ্যই কিনবেন। সুতরাং, হেলমেট বাইক চালকদের জন্য গুরুত্তপুর্ণ ভুমিকা পালন করে এবং কিছু দেশে এর জন্য প্রয়োজনীয় আইন রয়েছে।
হেলমেট এর প্রকারভেদ:
বাইক হেলমেট ৩টি মৌলিক রকমের। সকল ধরনের হেলমেট আরামদায়ক ও যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা থেকে মাথা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়।
সাধারন হেলমেট: বিনোদন, কমিউটার, রোড এবং মাউন্টেন রাইডারদের জন্য একটি লাভজনক হেলমেট। এই হেলমেট স্কেটারস ও স্কেট বোর্ড খেলোয়ারদের জনপ্রিয়। সুর্য থেকে চোখ রক্ষা করার জন্য এই হেলমেট এ ভিসরস যুক্ত করা থাকে।
রোড-বাইক হেলমেট: এই ধরনের হেলমেট ওজনে হালকা, স্বাভাবিক বায়ু চলাচল এবং অতি মনোরঞ্জিত নকশাকৃত।
এতে ভিসরস বসানো থাকে, যা হেল্মেট এর ওজন কমিয়ে রাখে।
মাউন্টেন-বাইক হেলমেট: (প্রায় সাইক্লোক্রস রাইডার্স দ্বারা ব্যবহৃত হয়) কম গতিতে ভাল মুক্ত বায়ু সেবনের জন্য এই ধরনের হেলমেট ডিজাইন করা হয়ে থাকে। এটি ভিসরস দ্বারা পৃথক, পিছনের দিকের মাথা রক্ষা করার জন্য রয়েছে উন্নত শক্তিশালী ডিজাইন। মাউন্টেন অতিক্রম করার জন্য এই ধরনের হেলমেট নিরাপদ।
এগুলোর কিছু ডিজাইন পুরো মুখমন্ডল সুরক্ষার জন্য, যা পার্ক রাইডার্স ও মাউন্টেন রাইডার্সদের বৈশিষ্ট্য।
হেলমেট এর দাম উথানামা করে সাইজ, ব্রান্ড,ফিছার এর কারণে। বংশাল বা নিউ ইস্কাটন রোডে, তেজগাঁ রোডে, হেলমেটের দাম ১১০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যেই পাবেন, আর গ্লাস পাবেন ৩৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে । আবার হেলমেট এর দাম নির্ভর করে অনেক সময় ব্রান্ড অনুযায়ী।
বাইক এর বৈশিষ্ট্য: যা দেখে হেলমেট কিনবেন
বায়ু চলাচল: হেলমেট এর ছিদ্র গুলি দ্বারা মাথার উপর বায়ু চলাচল করে।
যা মাথা ঠান্ডা রাখে এবং আরামদায়ক বাইক চালাতে সাহায্য করে। যত ছিদ্র বেশি, তত বেশি হালকা হেলমেট।
ভিসরস বা মুখোশ: কিছু রাইডার সুর্যের আলো প্রতিরোধক মুখোশ হেলমেট এ সংযুক্ত করে থাকে। এটা মাউন্টেন বাইকারদের জন্য সাধারন ব্যাপার। একটি ভিসরস যেমনি হোক না কেন, খুবই সামান্য ওজন এবং সামনের বাতাসের চাপ কমিয়ে রাখে।
ফুল ফেস প্রোটেকশন: মাউন্টেন রাইডারদের হেলমেট এ চারপাশ মুড়ানো একটি চিবুক বার রয়েছে, যা মাউন্টেন ও পার্ক রাইডারদের মুখমন্ডল নিরাপত্তা প্রদান করে।
স্ট্র্যাপ: স্ট্র্যাপ সিস্টেম আরামদায়ক এবং আটকানো ও খুলতে সহজ।
হেয়ারপোর্ট: কিছু কিছু হেলমেট এ লম্বা চুলের জন্য পিছনের দিকে ছিদ্র রয়েছে। যাকে হেয়ারপোর্ট হলা হয়ে থাকে।
হেলমেটের ওজন ও দীর্ঘস্থায়িত্ব: হেলমেট হতে হবে হালকা এবং মজবুত।
গ্লাসের মান: গ্লাসের মান অবশ্যই ভালো হতে হবে, স্ক্যাচ রেজিস্ট্যান্স হলে ভালো হয়, তাহলে সহজে দাগ পড়বে না ।
হেলমেট ও গ্লাসের রং: গরম কালের জন্য সাদা এবং শীতকালের জন্য কালো রং এর হেলমেট কিনতে পারেন।
গ্লাস নির্বাচন করার সময় হালকা কালো বা ওয়াটার কালার গ্লাস নিতে পারেন, তবে, একটা বিষয়ই মাথাতে রাখবেন তা হল বেশি কালো গ্লাস বা মারকারি গ্লাস পরিহার করুন কারন, মারকারি গ্লাস গুলো দিয়ে রাতের বেলা বাইক চালাতে পারবেন না ।
সঠিক হেলমেট এর সাইজ নির্ধারন:
যখন হেলমেট বাছাই করবেন, তখন এটি ভাল হওয়া অত্যাবশ্যক। সর্বাধিক হেলমেট ছোট, মাঝারি এবং বড় বা বর্ধিত মাপের তৈরি হয়ে থাকে। আপনার প্রয়োজনীয় আকার খুজে পেতে, একটি ফ্ল্যাক্সিবল ট্যাপ দ্বারা আপনার মাথার সর্ববৃহৎ অংশ পরিমাপ করুন। অথবা সজা দুই প্রান্ত বিশিষ্ট মাপকাঠি দিয়ে দৈর্ঘ্য পরিমাপ করুন।
বাইক হেলমেট পরিধান:
একটি ভাল সাইজের হেলমেট অবশ্যই ভাল হওয়া উচিত। এটি আপনার মাথার উপর সিট এর মত সাম্নের প্রান্ত এর সঙ্গে বসে থাকবে অথবা আপনার ভ্রু এর উপর থেকে পরিধান করতে হবে যেন কপাল সুরক্ষিত থাকে। হেলমেটটি সামনে পিছনে ঘুরিয়ে সঠিক ভাবে আপনার মাথার উপর বসাতে হবে। লক্ষনীয় যে, যদি এটি ১ ইঞ্চি এর বেশি নাড়াচাড়া করে, সেক্ষেত্রে হেলমেট এর সাইজ ফিট ঠিক করতে হবে।
ফিট করার ক্ষেত্রে, আপনার মাথার হেলমেট বসানোর পুর্বে হেলমেট এর সাইজ ঠিক করে নিন। প্রায় সকল হেলমেট এর ভিতর ফিট সাইজ ঠিক করার জন্য সাইজিং রিং লাগানো থাকে। হেলমেট সঠিক ভাবে বসানো হলে সাইজিং রিং ঘুরিয়ে প্রয়োজনীয় ফিট এ আটকাবেন। পরবর্তীতে, স্ট্র্যাপ ভালোভাবে আটকাতে হবে। স্ট্র্যাপ টি V আকারে আটকাতে হবে এবং কান উন্মুক্ত থাকবে। স্ট্র্যাপ উভয় কানের পাশ দিয়ে আরামদায়ক ফিট এ আটকাবেন।
সবশেষে, চেইন স্ট্র্যাপ আপনার মুখ নাড়াচাড়া করার সুবিধার জন্য লাগানো থাকে। এটি মাথার উপরের অংশে জোড়ালো ভাবে আটকাতে হবে। আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ফিট তৈরি করুন। মনে রাখবেন, বেশি অতিরিক্ত টাইট ফিট আপনার জন্যে আরামদায়ক নয়।
বাইক হেলমেট পরিচর্যা:
রসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে কখনো হেলমেট পরিস্কার করবেন না। নির্মাতারা শুধুমাত্র নরম কাপড় বা স্পঞ্জ, হালকা সাবান ও পানি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিস্কার করার জন্য বলে থাকেন।
চিলেকোঠা, গ্যারেজ, ট্রাঙ্ক অথবা অন্য কোন ও জায়গা যেখানে তাপ সঞ্চয় করে রাখতে পারে সেখানে কখনো হেলমেট রাখবেন না। অতিরিক্ত তাপ আপনার হেলমেট এর উপর বুদবুদ এর মত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া হেলমেট পরিধান করবেন না। অন্যদেরকে আপনার হেলমেট পরিধান করাবেন না।
কখন হেলমেট পরিবর্তন করবেন?
একটি হেলমেট দুর্ঘটনাজনিত কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যে জায়গায় ক্ষতিগ্রস্থ, সেটি ঠিক করুন এবং এটি যেন নতুনের মত থাকে। এছাড়াও, প্রতি ৫ বছর পর পর হেলমেট পরিবর্তন করুন। দূষণ, UV রশ্মি ও আবহাওয়া জনিত কারনে হেলমেট এর উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। মাথার সাথে মিলিয়ে একুরেট সাইজের হেলমেট কিনুন এবং মৃত্যু কিম্বা এক্সিডেন্ট প্রতিহত করা যায় কেবলমাত্র একটি ভালোমানের বাইক হেলমেট পরিধান করে।