<p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের মেয়াদ স্পষ্ট না করায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) কিছুটা অসন্তুষ্টি ও অস্থিরতা রয়েছে। এর পরও আগামী কয়েক মাস সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখবে দলটি। নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে বিএনপি। তাই এখনই সরকারের কার্যক্রম নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করতে চান না তাঁরা।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি ‘নির্দিষ্ট’ সময় দেওয়ার বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা একমত হয়েছেন। তবে ওই সময় ঠিক কত দিন তা স্পষ্ট করেনি বিএনপিও। দলের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেছেন, এটি সর্বোচ্চ এক বছর হতে পারে। তবে সরকারের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে ছয় মাস পর বিএনপি সমালোচনামুখর হয়ে উঠতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মনে করেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন আছে। রাষ্ট্রের কাঠামোতে গুণগত পরির্তন না এলে পরবর্তী সরকারকে বেশ চাপে পড়তে হবে। ফলে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের পক্ষে বিএনপি সরকারকে সায় দিয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময় পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘গাফিলতি’ দেখলে দলটি সোচ্চার হতে থাকবে।</p> <p style="text-align:justify">সরকারকে চাপে ফেলতে তখন বক্তব্য-বিবৃতি এমনকি তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচিও দিতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, এখনো দেশের ‘ক্রান্তিকাল’ কাটেনি। প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আছেন। তাঁদের সরিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনে স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত অস্থিরতা কাটবে না। ফলে এই সময়টায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে পুরোপুরি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তাঁরা।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ১৫ বছর দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নষ্ট করা হয়েছে। ফলে এসব খাতে গুণগত পরিবর্তন দরকার আছে। এই গুণগত পরিবর্তনে আমরা সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি</strong></p> <p style="text-align:justify">গত ১২ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তাঁদের উদ্বেগ ও কিছু দাবি তুলে ধরেন। নেতাদের দাবি, তাঁদের উদ্বেগ ও দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।</p> <p style="text-align:justify">বৈঠকের পর একজন বিএনপি নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাঁরা নির্বাচন চেয়েছেন। বিএনপি মনে করে, পরবর্তী সংসদ নির্বাচন জাতির জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী দল ছাড়া অন্য সব দলের ঐকমত্য প্রয়োজন।</p> <p style="text-align:justify">বৈঠক থেকে বের হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদের সেই সময় অবশ্যই দিয়েছি। আমরা সরকারের সব বিষয়ে সমর্থন দিয়েছি।’</p> <p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগে-পরে বিএনপি নেতাদের কেউ ‘অতি দ্রুত’, কেউ তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছিলেন। ওই সময় সরকারের সঙ্গে বিএনপির সেভাবে যোগাযোগ হয়নি। ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারের ওপর দলটির যে ‘অসন্তুষ্টি’ ছিল তা দৃশ্যত কাটতে শুরু করেছে।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্কারসহ যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন, এই সরকারের উচিত তাই করা।</p> <p style="text-align:justify"><strong>প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি</strong></p> <p style="text-align:justify">প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে আলোচ্যসূচির বাইরেও বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছে বিএনপি। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাকর্মী ও সব নির্যাতিতের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহার, প্রশাসন সংস্কার, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পিলখানা বিদ্রোহ ও শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ড ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের বিচার, আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ ইত্যাদি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে বিএনপি</strong></p> <p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের সময় বিএনপি নিজের সংগঠন গোছাবে। এর মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করা। দলের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি সব সময় থাকে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখনকার সাংগঠনিক কার্যক্রম হবে নির্বাচনকেন্দ্রিক।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী কালের কণ্ঠকে বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রম কখনোই থেমে থাকে না। তবে এখন স্বাভাবিকভাবেই দলের কার্যক্রম হবে নির্বাচনকেন্দ্রিক।</p> <p style="text-align:justify"><strong>শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ</strong></p> <p style="text-align:justify">সরকার পতনের পর বিভিন্ন স্থানে হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দলের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে। নেতারা বলছেন, দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে বহিষ্কার-শোকজ করা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন নেতাকে বহিষ্কার এবং ৫০ জনের বেশি নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। যুবদল সূত্র জানায়, সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৪ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৭ জন পদধারী নেতাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, তাদের কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেলে বহিষ্কার করা হবে। দলের বরিশাল বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।</p>