<p style="text-align:justify">দুনিয়া স্থায়ীভাবে বসবাসের জায়গা নয়। এটি মুসাফিরখানাসদৃশ। যেখানে মুসাফিররা আসবে-যাবে, কিন্তু কেউ স্থায়ীভাবে থাকবে না। অথবা পথচারীদের জন্য ক্লান্তি দূরকারী সাময়িক বিশ্রামের জায়গা মাত্র। বিশ্রাম শেষে তারা আপন গন্তব্যে ছুটে যাবে। এই মর্মে নিম্নোক্ত হাদিস প্রণিধানযোগ্য।</p> <p style="text-align:justify">আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার আমার কাঁধ ধরেন, অতঃপর বলেন, (হে আবদুল্লাহ!) তুমি দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা একজন পথযাত্রীর মতো অবস্থান করবে। (এই উপদেশ শ্রবণের পর থেকে) ইবনু ওমর (রা.) বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকালের অপেক্ষা কোরো না (অর্থাৎ সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা কোরো না) এবং সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা কোরো না। তোমার সুস্থতা থেকে তোমার অসুস্থ অবস্থার জন্য পাথেয় সঞ্চয় করো এবং জীবিত অবস্থা থেকে তোমার মৃত্যুর জন্য পাথেয় সঞ্চয় করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১৬)</p> <p style="text-align:justify">মুসাফির বা পথযাত্রী যেমন কোনো জায়গায় স্থায়ী হয় না, সামান্য বিশ্রাম নিয়ে গন্তব্যপানে ছুটে চলে, ঠিক তেমনি দুনিয়ার এই বিশ্রামাগারেও আমরা কিছু সময়ের জন্য অবস্থানের পর আমাদের আসল গন্তব্য আখিরাতে ফিরে যাব। এটাই মহান স্রষ্টার সৃষ্টিবিধি। অন্য বর্ণনায় মুজাহিদ থেকে বর্ণিত, ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার শরীরের কোনো অংশ ধরে বলেন, দুনিয়ায় এমনভাবে বসবাস করবে যেন তুমি একজন মুসাফির অথবা পথযাত্রী। আর নিজেকে তুমি কবরবাসীদের মধ্যে গণ্য করবে। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৪২৫৩)</p> <p style="text-align:justify">অর্থাৎ তুমি মূলত কবরের বাসিন্দা। দুনিয়ায় তোমাকে পাঠানো হয়েছে সাময়িক সময়ের জন্য। এখন তুমি ভূপৃষ্ঠে আছো, নির্ধারিত সময়ের পরে তোমাকে ভূগর্ভে চলে যেতে হবে। এখন তুমি মানুষ, রুহ বের হয়ে গেলে তুমি হয়ে যাবে ‘লাশ’। তখন তোমাকে আর কেউ নাম ধরে ডাকবে না বা মানুষ বলেও পরিচয় দেবে না। তখন তোমার একটাই পরিচয় হবে ‘লাশ’।</p> <p style="text-align:justify">রাসুলুল্লাহ (সা.) এক দিন একটি খালি চাটাইয়ের ওপর ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম থেকে উঠলে দেখা গেল তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ লেগে গেছে। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) এ দৃশ্য দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) সমীপে আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! যদি আপনি আমাদের নির্দেশ দিতেন তবে আমরা আপনার জন্য একখানা বিছানা তৈরি করে বিছিয়ে দিতাম। (এ কথা শুনে) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, দুনিয়ার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? আমার ও দুনিয়ার দৃষ্টান্ত তো হলো একজন ওই আরোহীর মতো, যে একটি গাছের ছায়ায় কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নেয়, অতঃপর গাছটিকে ছেড়ে চলে যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৭)</p> <p style="text-align:justify">অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমার ও দুনিয়ার উদাহরণ হলো কোনো মুসাফির গরমের দিনে চলতে চলতে কোনো একটি বৃক্ষের ছায়াতলে দিনের কিছু সময় বিশ্রাম নিল, তারপর তা ছেড়ে চলে গেল।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২৭৯৬)</p>