<p style="text-align: justify;">অভিশাপ দেওয়া জঘন্যতম অপরাধ। ইসলামের দৃষ্টিতে কাউকে অভিশাপ দেওয়া বা কারো অকল্যাণ কামনা করা সম্পূর্ণ হারাম ও অনুচিত। আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ রয়েছে যারা কিছু হলেই অভিশাপ দিতে থাকে। অথচ সে জানে না অভিশাপ কখনো কখনো ঘুরে-ফিরে অভিশাপকারীর ওপর এসে পড়ে, বিশেষত যদি কোনো নিরপরাধ মানুষকে অভিশাপ দেওয়া হয় তখন তা নিজের ওপরেই এসে পড়ে।</p> <p style="text-align: justify;">হাদিস শরিফে স্পষ্ট এমন উল্লেখ আছে। উম্মে দারদা (রা.) বলেন, আমি আবু দারদা (রা.)-কে এরূপ বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি কারো ওপর লানত করে, তখন সে লানত আসমানের দিকে উত্থিত হয়। কিন্তু তা সেখানে পৌঁছার আগেই আসমানের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতঃপর তা জমিনের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়, জমিনে পৌঁছার আগে তার দরজাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর তা ডান দিকে-বাঁ দিকে দুলতে থাকে, সেদিকে পথ না পেয়ে ফিরে আসে অভিশাপ দেওয়া লোকটির ওপর, যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত হয়; অন্যথায় তা অভিশাপকারীর ওপর গিয়ে বর্তায়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮২৫)</p> <p style="text-align: justify;">অন্য হাদিসে এসেছে, সামুরা ইবনে জুন্দুব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরে আল্লাহর লানত, তাঁর গজবের বা জাহান্নামের অভিশাপ দেবে না।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৬)</p> <p style="text-align: justify;">আর বিনা কারণে যদি কেউ অভিশাপ দেয় তাহলে ক্ষতি অভিশাপকারীর হবে। আমাদের নবীজি (সা.) জানতেন, সব মানুষই ছোট-বড় অন্যায় ও গুনাহে জড়িয়ে যায়। গুনাহ করার পর মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর কাছে তাওবা করা। হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানদের প্রত্যেকেই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাকরী ব্যক্তিরা হলো উত্তম।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৯)</p> <p style="text-align: justify;">এ জন্য প্রিয় নবী (সা.) অপরাধীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন না, বরং তিনি তাদের অসুস্থ মনে করতেন। তাদের শুশ্রূষা প্রয়োজন। তাই তিনি তাদের অভিশাপ দিয়ে, অপরাধীদেরকে মুমিনদের কাতার থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া থেকে নিষেধ করতেন। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর সময় এক ব্যক্তি যার নাম ছিল আবদুল্লাহ। লোকটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে হাসাত। শরাব পান করার অপরাধে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বেত্রাঘাত করেছিলেন।</p> <p style="text-align: justify;">একদিন তাকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আনা হলো। তিনি তাকে বেত্রাঘাতের আদেশ দিলেন। তাকে বেত্রাঘাত করা হলো। তখন দলের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! তার ওপর অভিশাপ বর্ষণ করুন। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাকে কতবার আনা হলো! তখন নবী (সা.) বললেন, তোমরা তাকে অভিশাপ করো না। আল্লাহর কসম! আমি তাকে জানি যে সে অবশ্যই আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩২৩)</p> <p style="text-align: justify;">অথচ আমরা পান থেকে চুন খসলেই মানুষকে অভিশাপ দিতে থাকি। এটা কখনোই আমাদের প্রিয় নবীজির সুন্নাহ ছিল না। তিনি অপরাধীকে অপরাধ করা সত্ত্বেও তাদেরকে অভিশাপ দিতেন না, লানত করতেন না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম কাউকে অভিশাপ দেওয়াকে শয়তানের সাহায্যকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী (সা.)-এর কাছে একটি মাতাল লোককে আনা হলো। তিনি তাকে প্রহার করার জন্য দাঁড়ালেন। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে হাত দিয়ে, কেউ জুতা দিয়ে এবং কেউবা কাপড় দিয়ে প্রহার করেছিল। লোকটি যখন চলে গেল, তখন এক ব্যক্তি বলল, এর কী হলো, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে শয়তানের সাহায্যকারী হয়ো না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩২৪)</p> <p style="text-align: justify;">তাই আমাদের কর্তব্য, আমাদের মুখ যেন কোনো অপরাধীর সম্মানহানির কারণ না হয়। যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, অপরাধের শাস্তি সে ভোগ করবে। কিন্তু আমি আমার জিহ্বা দ্বারা তার কোনো সম্ভ্রমহানি করার চেষ্টা করব না।</p> <p> </p>