<p style="text-align: justify;">সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করা প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ (হে আল্লাহ, আমি হাজির) ধ্বনিতে মুখরিত হয় মক্কার আরাফার ময়দান। লাখো মুসল্লির হৃদয়ের মণিকোঠায় লালন করেছিল এ বছর হজে যাওয়ার। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই সোনালি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় না।</p> <p style="text-align: justify;">তবে দয়াবান আল্লাহ এমন কিছু পথ বের করে দিয়েছেন; যদি কেউ ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং পরকালে সওয়াবের আশায় আমলগুলো করে তাহলে যে কেউ মকবুল হজ অথবা ওমরাহর সওয়াব পেতে পারেন। নবীজি (সা.) বিভিন্ন হাদিসে সেসব আমল বলে দিয়েছেন। তা হলো- </p> <p style="text-align: justify;"><strong>১. মসজিদে দ্বিন শেখা বা শেখানো</strong></p> <p style="text-align: justify;">দ্বিন শেখা বা শেখানো বিভিন্ন হাদিসে ফুটে উঠেছে। আর দ্বিন শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়া অনেক বড় সওয়াবের একটা কাজ। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গেল কোনো ভালো কথা শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারী একজন ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (তাবারানি, হাদিস : ৭৪৭৩)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>২. নামাজের পর জিকির</strong></p> <p style="text-align: justify;">অল্প সময় নামাজের পর তাসবিহ পাঠ করার দ্বারা হজের সওয়াব মেলে। আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আমরা একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলি, হে আল্লাহর রাসুল! ধনী ব্যক্তিরা সওয়াবের ক্ষেত্রে আমাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাঁরা হজ করেন, আমরা হজ করি না। তাঁরা সংগ্রাম-যুদ্ধে শরিক হন, আমরা শরিক হতে পারি না। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলব যেটা তোমরা করলে তারা যে আমল করে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাবে? আর সেটা হলো প্রতি নামাজের পর তোমরা ৩৪ বার আল্লাহু আকবার, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ও ৩৩ আলহামদু লিল্লাহ পড়ো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১১৫৪)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৩. ইশরাক পড়া</strong></p> <p style="text-align: justify;">শরিয়তের পরিভাষায়, সূর্যোদয়ের পর এবং সূর্যের পূর্ণ কিরণ বিচ্ছুরিত হওয়ার পর মাত্র দুই-চার রাকাত ইশরাকের নামাজের দ্বারা মিলবে হজ ও ওমরাহর সওয়াব। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করে, এর পর বসে থেকে সূর্য না ওঠা পর্যন্ত জিকির-আজকারে নিমগ্ন থাকে, পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, সে একটি হজ ও একটি ওমরাহর সওয়াব লাভ করবে। পরিপূর্ণ! পরিপূর্ণ! পরিপূর্ণ!’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৪. পিতা-মাতার সেবা</strong></p> <p style="text-align: justify;">পিতা-মাতার সেবা ও তাঁদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার দ্বারা হজের সওয়াব লাভ হয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি জিহাদে-সংগ্রামে অংশ নিতে চাই, কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার মাতা-পিতার কেউ কি জীবিত আছেন?’ লোকটি বলল, আমার মা জীবিত আছেন। তখন রাসুল (সা.)বলেন, ‘তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহর নিকট যুদ্ধ-সংগ্রামে যেতে না পারার অপারগতা পেশ করো। এভাবে যদি করতে পারো এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে তুমি হজ, ওমরাহ এবং যুদ্ধ-সংগ্রামের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং মায়ের সেবা করো।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস : ১৩৩৯৯)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৫. জামাতে নামাজ আদায়</strong></p> <p style="text-align: justify;">আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করল সে যেন হজ করে এলো। আর যে ব্যক্তি নফল নামাজ আদায় করতে মসজিদে গমন করল সে যেন ওমরাহ করে এলো।’ (তাবারানি, হাদিস : ৭৫৭৮)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৬. জুমার নামাজ</strong></p> <p style="text-align: justify;">জুমার নামাজে আগে যাওয়া এটি আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দনীয় আমল। এই আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা হজের সওয়াব দান করবেন। সাহাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য প্রত্যেক জুমায় হজ ও ওমরাহ লাভের সুযোগ রয়েছে। হজের সওয়াব লাভের জন্য সর্বাগ্রে তথা দ্বিপ্রহরে মসজিদে যাওয়া। আর জুমার নামাজের পর আসরের নামাজের জন্য অপেক্ষা থাকার দ্বারা ওমরাহর সওয়াব লাভ হয়।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৫৯৫০)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৭. মসজিদে কুবায় নামাজ</strong></p> <p style="text-align: justify;">মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করায় ওমরার সওয়াব লাভ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে কুবায় এসে কোনো নামাজ আদায় করল, সে ওমরাহর সওয়াব হাসিল করল।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪১২)</p>