<p>তাওহিদ ও রিসালাতে প্রকাশ্য স্বীকৃতি, কর্মময় সর্বত্র এর প্রতিফলন, অন্তঃকরণে ওই চেতনা সার্বক্ষণিক জাগরূক রাখবার নাম ‘ঈমান’। ঈমানের পরিচয় সম্পর্কে সুরা আনফালে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো হচ্ছে ওইসব লোক, যাদের আল্লাহকে স্মরণ করানো হলে তাদের হৃদয় প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এবং যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াত তিলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা সব সময় তাদের পালনকর্তার ওপর ভরসা রাখে। যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যা কিছু অর্থসম্পদ দান করেছি তা থেকে তারা (আমারই পথে) ব্যয় করে। এসব লোকেরাই একনিষ্ঠ—প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্যই রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকার নিশ্চয়তা।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২-৪)</p> <p>সুরা তাওবার ১১২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘(যারা আল্লাহর দরবারে) তাওবা করে, (নিষ্ঠার সঙ্গে) ইবাদত করে, (তাঁর) প্রশংসা করে, (তাঁর জন্য) রোজা রাখে, (তাঁরই জন্য) রুকু-সিজদা করে, (যারা) ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, (আর যারা) আল্লাহর (নির্ধারিত হালাল-হারামের) সীমা রক্ষা করে চলে, (হে নবী) আপনি এসব মুমিনকে (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করুন।’</p> <p>সুরা মুমিনুনের শুরুতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সন্দেহ নেই, সেসব ঈমানদার মানুষ মুক্তি পেয়ে গেছে, যারা নামাজে একান্তই বিনয়াবনত, যারা অনর্থক বিষয়ে বিমুখ থাকে, যারা জাকাত প্রদান করে, যারা নিজ নিজ গোপনাঙ্গের পবিত্রতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে... যারা আমানত ও ওয়াদা রক্ষা-বজায় রাখে...।’</p> <p>সুরা আহজাবের ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, মুমিন পুরুষ, মুমিন নারী, আনুগত্যপ্রবণ পুরুষ, আনুগত্যপ্রবণ নারী, সত্যনিষ্ঠ পুরুষ, সত্যনিষ্ঠ নারী, সংযমী পুরুষ, সংযমী নারী, বিনয়াবনত পুরুষ, বিনয়াবনত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোজাদার পুরুষ, রোজাদার নারী, চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষাকারী পুরুষ, চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষাকারী নারী,  আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ, অধিক স্মরণকারী নারী—এদের সবার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।’</p> <p>এ ছাড়া মহান আল্লাহ কিছু গুণের অধিকারী মানুষকে ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন—</p> <p><strong>· ধর্মভীরুতা (তাকওয়া) : </strong>‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪)</p> <p><strong>· পবিত্রতা (তাহারাত) :</strong> ‘যারা পবিত্র থাকে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২)</p> <p><strong>· একাগ্র অনুশোচনা (তাওবা) : </strong>‘আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা : বাকারা)</p> <p><strong>· আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা (তাওয়াক্কুল) :</strong> ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালোবাসেন তাঁর ওপর ভরসাকারীদের।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)</p> <p><strong>· আদল (ন্যায়বিচার) :</strong> ‘আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪২)</p> <p><strong>· সৌজন্য-সহমর্মিতা (ইহসান) :</strong> ‘আল্লাহ ইহসানকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)</p> <p><strong>· ধৈর্য (সবর) : </strong>‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৬)</p> <p>ঈমান একটি বিশেষ যোগ্যতা, মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারাই, যারা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাসে অবিচল এবং তা থেকে বিচ্যুত হয় না... আর এরাই তো প্রকৃত সত্যনিষ্ঠ।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৫)</p> <p><em>লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও</em></p> <p><em>বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ কাপাসিয়া, গাজীপুর</em></p>