<article> <p>নবীজি (সা.)-এর প্রিয় এক সাহাবি সুমামা ইবনে উসাল (রা.)। নবীজির দয়া, ক্ষমাশীলতা ও মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। একবার একটি অভিযানে ইয়ামামাবাসীদের সরদার সুমামা ইবনে উসাল (রা.) গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের কয়েক দিন পরে নবীজি (সা.) তাঁকে মুক্ত করে দিলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর তিনি নবীজির অনুমতিক্রমে ওমরাহ আদায়ের জন্য মক্কা যান। সেখানে গেলে ইসলাম গ্রহণ করার দরুন মক্কার অবিশ্বাসীরা তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। এর জবাবে তিনি মক্কা এলাকার সঙ্গে ব্যাবসায়িক অবরোধের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কসম! নবীজি (সা.)-এর অনুমতি ছাড়া ইয়ামামা থেকে আর একটি শস্যদানাও তোমাদের কাছে আসবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৩৭২)</p> </article> <article> <p>এরপর তিনি নিজ শহরে ফিরে গিয়ে মক্কায় শস্য রপ্তানি বন্ধ করে দেন। যেহেতু মক্কার খাদ্যশস্যের জোগান হতো ইয়ামামা থেকে। ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে মক্কায় খাদ্যসংকট দেখা দেয়। কুরাইশরা দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়। তখন তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে চিঠি লিখল। সুমামা কর্তৃক খাদ্যশস্য বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তাদের ওপর নেমে আসা কষ্টের কথা জানাল এবং আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে সুমামাকে খাদ্য সরবরাহের জন্য চিঠি লিখতে অনুরোধ করল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) সুমামাকে চিঠি লিখলেন—তিনি যেন মক্কায় খাদ্য রপ্তানি জারি করে দেন। (দ্রষ্টব্য : মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৩৬১; সুনানে কুবরা, হাদিস : ১৮০৩১)</p> </article> <article> <p>সুবহানাল্লাহ, যে ব্যক্তি মক্কাবাসী নবীজি (সা.)-কে তাঁর মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করেছে, তিনি তাদের খাদ্যসংকট দূর করার জন্য ইয়ামামাবাসীর কাছে সুপারিশ করেছেন। মহান আল্লাহ তাঁকে এতটাই দয়ালু বানিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর চিরশত্রুদের ব্যাবসায়িক সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে কোনো গোষ্ঠীর উগ্রতা প্রকট হলে তাদের সতর্ক করার জন্য তাদের ওপর ব্যাবসায়িক অবরোধ দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ নয়।</p> <p>উল্লিখিত হাদিসটির আলোচনায় ‘আলমুকাতায়াতুল ইকতেসাদিয়্যা’ গ্রন্থে লেখা হয়েছে, হাদিসে বর্ণিত ঘটনাটি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রমাণ বহন করে :</p> </article> <article> <p>১. ইসলামের প্রাথমিক যুগে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রমাণ ও তার বৈধতা।</p> <p>২. শত্রুর অনিষ্টতা বিলোপ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ।</p> <p>৩. এ ধরনের চাপ শক্তিশালী ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে ব্যক্তি-প্রভাবের ভূমিকা।</p> <p>এ রকম আরো একটি ঘটনা ঘটে উমাইয়াদের আমলে। খলিফা আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের যুগে রোম থেকে দিনার-দিরহাম আমদানি করা হতো। এর বিনিময়ে মুসলমানরা তাদের কাছে কাগজ রপ্তানি করত। মুসলমানরা যে পাত্রে করে কাগজ পাঠাত তার গায়ে লেখা থাকত ‘মসিহ কখনো আল্লাহর বান্দা হওয়াতে লজ্জাবোধ করেন না; অনুরূপ নৈকট্যশীল ফেরেশতারাও না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৭২)</p> <p>একবার রোমের সম্রাট এই লেখা দেখে ভীষণ খেপে যায়। কেননা তারা ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র বলে ধারণা করত। সংক্ষুব্ধ সম্রাট খলিফার কাছে চিঠি লেখে—যদি এই লেখাটি বাদ দেওয়া না হয়, তাহলে আমি দিনার-দিরহামের পর তোমাদের নবীর ব্যাপারে কটাক্ষমূলক কথা লিখে দেব। চিঠি পেয়ে খলিফা আব্দুল মালেক চিন্তায় পড়ে গেলেন। ইত্যবসরে খালেদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া (রহ.) উপস্থিত হলেন। তিনি খলিফার চিন্তার কারণ জানতে পেরে বলেন, নিজেরা দিনার বানানো শুরু করেন এবং রোমের কাছে কাগজ রপ্তানি বন্ধ করে দিন। তাদের কাগজের প্রয়োজন হলে আপনি যেভাবে চান তারা সেভাবেই নিতে বাধ্য হবে। খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান তাঁর কথা মতো নিজেরা মুদ্রা বানানো শুরু করেন এবং রোমে কাগজ রপ্তানি বন্ধ করে দেন। (বুগইয়াতুত তলব ফি তারিখি হালাব)</p> <p>তাই কখনো কোনো সম্প্রদায়ের উগ্রতা প্রকট আকার ধারণ করলে তাদের দুর্বল করার জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া নাজায়েজ হবে না। মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, ‘বয়কট ও অসহযোগ আন্দোলন মৌলিকভাবে যুদ্ধ নয়, তবে তা শত্রুকে দুর্বল করার একটি কৌশল, যা মুবাহ তথা বৈধ।’ (হাকিমুল উম্মত কি সিয়াসি আফকার)</p> </article>