<p>পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ নিজেকে দয়ার গুণে গুণান্বিত বলে বর্ণনা করেছেন। এমনকি কোরআনের সূচনাই হয়েছে আল্লাহর ‘রহমান ও রাহিম’ গুণ স্মরণের মাধ্যমে। আল্লাহ নিজের দয়া ও অনুগ্রহের বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। তিনি দয়াময়, অতি দয়ালু।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৩)</p> <p>অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘দয়ালু আল্লাহ আরশে সমাসীন।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ৫)</p> <p><strong>আল্লাহর দয়া কতটা প্রবল</strong></p> <p>আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের সঠিক পরিমাপ করা কোনো সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়। নিম্নোক্ত হাদিস থেকে এ বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ যেদিন রহমত সৃষ্টি করেন, সেদিন এক শ রহমত সৃষ্টি করেছেন। ৯৯টি তাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন এবং একটি রহমত সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যদি কাফির আল্লাহর কাছে সুরক্ষিত রহমত সম্পর্কে জানে, তাহলে সে জান্নাত লাভে নিরাশ হবে না। আর মুমিন যদি আল্লাহর কাছে যে শাস্তি আছে সে সম্পর্কে জানে তা হলে সে জাহান্নাম থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৯)</p> <p><strong>আল্লাহর অনুগ্রহ সর্বব্যাপী</strong></p> <p>পৃথিবীর সব সৃষ্টি আল্লাহর অনুগ্রহে সিক্ত। কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের বাইরে নয়। মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের ব্যাপ্তি সম্পর্কে বলেন, ‘আর আমার দয়া—তা প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারিত করব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, জাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৬)</p> <p><strong>মুমিনের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ</strong></p> <p>আল্লাহর অনুগ্রহ সব সৃষ্টি ও মানুষের জন্য। তবে মুমিন আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করে থাকে। যেমন পরকালীন জীবনে কেবল মুমিনরাই আল্লাহর দয়া লাভ করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহে ঈমান আনে ও তাঁকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে, তাদের তিনি অবশ্যই তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং তাদের সরল পথে তাঁর দিকে পরিচালিত করবেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৭৫)</p> <p><strong>মুমিন কখনো নিরাশ হয় না</strong></p> <p>যারা মুমিন তারা কখনো আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের ব্যাপারে হতাশ হয় না। কেননা হতাশা আল্লাহর প্রতি মন্দ ধারণারই নামান্তর। আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ—আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)</p> <p><strong>আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের ১০ উপায়</strong></p> <p>কোরআন-হাদিসে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের কিছু উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। যার কয়েকটি হলো—</p> <p><strong>১. ইহসান :</strong> ইহসানের দুটি অর্থ : ক. দয়া ও অনুগ্রহ করা, খ. আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে তাঁর ইবাদত করা। উভয় কাজই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে সহায়ক। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)</p> <p><strong>২. আল্লাহভীতি : </strong>আল্লাহর ভয় তাঁর অনুগ্রহ লাভের মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমার দয়া—তা প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারিত করব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, জাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৬)</p> <p><strong>৩. সৃষ্টির প্রতি দয়া করা :</strong> আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে আল্লাহর দয়া লাভ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)</p> <p><strong>৪. দ্বিনের জন্য আত্মত্যাগ :</strong> ঈমানের সঙ্গে যারা দ্বিনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং যারা হিজরত করে ও সংগ্রাম করে আল্লাহর পথে, তারাই আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৮)</p> <p><strong>৫. ফরজ বিধান পালন করা :</strong> ফরজ বিধান পালনের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং রাসুলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৬)</p> <p><strong>৬. আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করা :</strong> আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাঁর দয়া করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা দয়া লাভ করতে পারো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩২)</p> <p><strong>৭. কোরআনের অনুসরণ করা : </strong>পবিত্র কোরআনের অনুসরণের মাধ্যমেও ব্যক্তি আল্লাহর দয়া লাভ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এই কিতাব আমি অবতীর্ণ করেছি, যা কল্যাণময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, তা হলে তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫৫)</p> <p><strong>৮. তিলাওয়াত শোনা :</strong> মনোযোগসহ কোরআন তিলাওয়াত শুনলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগের সঙ্গে তা শ্রবণ করবে এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকবে, যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪)</p> <p><strong>৯. অনুগ্রহ লাভের দোয়া : </strong>আল্লাহর কাছে দয়া লাভের দোয়া করলে আল্লাহ দয়া করেন। এ জন্য মহান আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১০)</p> <p><strong>১০. ক্ষমা প্রার্থনা করা : </strong>আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ খুশি হন এবং বান্দার প্রতি দয়া করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের আগে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চাইছ? কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো?’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৪৬)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে তাঁর অনুগ্রহ দ্বারা ধন্য করুন। আমিন।</p>