<p>হিজরি প্রথম শতাব্দীর মানুষ পড়াশোনার ক্ষেত্রে মুখস্থ ও স্মৃতিনির্ভর ছিল। তারা লেখালেখি অপমানকর বলে মনে করত। যদি কেউ লিখতও, বিষয়টি কারো কাছে প্রকাশ করত না। কেননা তারা বিব্রত বোধ করত এই ভেবে যে এতে মানুষের কাছে তাদের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা প্রমাণিত হবে। ফলে লেখা তো দূরের কথা, একবার কোনো কথা শোনার পর দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করাও অনেক সময় তাদের জন্য অস্বাভাবিক গণ্য হতো।</p> <p>এ বিষয়ে বিখ্যাত তাবেঈ শাবি (রহ.) (১০০ হিজরি) বলেন, ‘আমি না কখনো সাদা কাগজে কালো অক্ষরে লিখেছি, আর না কখনো কোনো মানুষের কাছে একবার হাদিস শোনার পর দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করেছি।’ (দারিমি, হাদিস : ৪৯৯)</p> <p>শাবি (রহ.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে একবার তিনি তাঁর ছাত্র শিবাককে বলেন, ‘হে শিবাক! আমি তোমাকে হাদিস পুনরায় শোনাব? আমি তো কখনো চাইতাম না যে আমার জন্য কোনো হাদিস পুনরাবৃত্তি করা হোক।’ (দারিমি, হাদিস : ৪৬৬)</p> <p>ইমাম মালেক (রহ.) (১৭৯ হিজরি) বলেন, ইবনু শিহাব জুহরি (রহ.) (১২৪ হিজরি) একবার একটি হাদিস বর্ণনা করেন। অতঃপর কোনো এক রাস্তায় তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি তাঁকে তাঁর বাহনের লাগাম ধরে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু বকর (ইমাম জুহরির উপনাম)! যে হাদিস আপনি আমাদের শুনিয়েছিলেন, সেটি পুনরায় আমাকে শোনান। তিনি জবাব দিলেন, তুমি হাদিস দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করো? আমি বললাম, কেন আপনি দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করতেন না? তিনি বলেন, না। আমি বললাম, লিখতেনও না? তিনি বলেন, না। (দারিমি, হাদিস : ৪৯৯)</p> <p>আদ-দারিমি (২৫৫ হিজরি) তাঁর ‘সুনান’-এর ভূমিকায় পৃথক পরিচ্ছেদ রচনা করে কাতাদাহ, মুজাহিদ, আওজাঈ, ইবরাহিম নাখঈ, ইবনু সিরিন, উবায়দাহ (রহ.) এমন বহুসংখ্যক খ্যাতনামা মুহাদ্দিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যাঁরা হাদিস লিপিবদ্ধ করাকে অপছন্দ করতেন।</p> <p>ইবনু আবদিল বার (রহ.) (৪৬৩ হিজরি) তাঁর ‘জামেউ বায়ানিল ইলম’ গ্রন্থে হাদিস লিপিবদ্ধকরণের বিরোধী মুহাদ্দিসদের বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন, ‘আমি এই পরিচ্ছেদে যাঁদের কথা উদ্ধৃত করেছি, তাঁরা ছিলেন আরবদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী। তাঁরা প্রকৃতিগতভাবেই ছিলেন মুখস্থকরণের ওপর নির্ভরশীল। এটাই ছিল তাঁদের বৈশিষ্ট্য। যাঁরা লেখনীকে অপছন্দ করতেন তাঁরা ছিলেন ইবনু আব্বাস (রা.), শাবি, ইবনু শিহাব জুহরি, ইবরাহিম নাখঈ, কাতাদাহ এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী ও বৈশিষ্ট্যধারীরা। মুখস্থ করাই ছিল তাঁদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। তাঁদের কারো জন্য একবার শ্রবণ করাই যথেষ্ট হয়ে যেত। তাঁরা ছিলেন প্রত্যেকেই আরব।</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমরা একটি নিরক্ষর জাতি, লিখতেও জানি না, হিসাবও জানি না।’ (মুসলিম : ১০৮০)</p> <p>এটা স্বতঃসিদ্ধ যে আরবরা মুখস্থবিদ্যায় পারঙ্গম ছিল। তাদের কেউ কারো কবিতা একবার শোনাতেই মুখস্থ করে ফেলতেন।</p>