<p>চলে গেলেন একজন গুণী শিক্ষক মাওলানা গোলাম মওলা (রহ.)। তিনি ছিলেন জামেয়া দারুল মা‘আরিফ আল-ইসলামিয়া চট্টগ্রামের এক নিবেদিতপ্রাণ জ্ঞানের সেবক। সরস কথাবার্তার দরুন সবার কাছে তিনি ছিলেন সুপরিচিত। মিশুক প্রকৃতির ও প্রাণবন্ত চরিত্রের এই আলেমের ব্যক্তি জীবনে শত বাধা-বিপত্তি ও সমস্যা-সংকট সত্ত্বেও তাঁর চেহারায় পড়তে দিতেন না এতটুকু দুশ্চিন্তার ছাপ!</p> <p><strong>জন্ম ও পরিবার: </strong>মাওলানা গোলাম মওলা (রহ.) ১৯৭৬ সালের ১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলার রামুতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বন্ধুমহলের তথ্য অনুসারে মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৫৩ বছর। তাঁর পিতা আলী আহমদ ও মাতা উম্মে সলিমা।</p> <p><strong>শিক্ষা ও শৈশব:</strong> মাওলানা গোলাম মওলা কক্সবাজারের রামুর থিমছড়িতে বেড়ে ওঠেন। তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনাও এখানে। পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় নিজ গ্রামের হামিদিয়া মাদরাসায়। এখানে প্রাথমিক স্তর সমাপ্ত করে তিনি চলে যান আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায়। সেখানে তিনি ফক্বিহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান (রহ.)-এর সার্বিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে কয়েক বছর পড়াশোনা করেন। পরে জামেয়া দারুল মা‘আরিফ আল-ইসলামিয়ায় মিশকাত ও দাওরায়ে হাদিস (১৯৯২-৯৩) সমাপ্ত করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন— মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভি (রহ.), মাওলানা নুরুল ইসলাম কদিম (রহ.), আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী, মাওলানা নুরুল ইসলাম জদিদ (রহ.), আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারি (রহ.), মাওলানা মুহাম্মদ ফুরকানুল্লাহ খলীল, প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী প্রমুখ।</p> <p><strong>কর্মজীবন:</strong> মাওলানা গোলাম মওলা (রহ.) লেখাপড়া শেষ করে সীতাকুণ্ডু থানার টেরিয়ালস্থ একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। এখানে তিনি ৪ বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর স্বীয় শিক্ষকদের আহ্বানে চলে আসেন জামেয়া দারুল মা‘আরিফ আল-ইসলামিয়ায়। এখানে তিনি আমৃত্যু সুদীর্ঘ ২৫ বছর শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা ও পাঠদানে তিনি অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতেন। বিশেষত প্রাথমিক স্তরের আরবি ভাষা পঠনপাঠনে তিনি অভিনবত্ব ও নিজস্ব পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। যা খুবই ফলপ্রসূ হতো। ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা বা অবহেলা তিনি মোটেও পছন্দ করতেন না। তার নিজস্ব পদ্ধতির দরুন ক্লাসের সর্বপর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সহজে পাঠ বুঝে নিতে পারতো।</p> <p><strong>বিয়ে ও পরিবার: </strong>মাওলানা গোলাম মওলা (রহ.) নেজামে ইসলাম পার্টির তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা নুরুল হক আরমানের কন্যাকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ২ কন্যার পিতা।</p> <p><strong>ব্যক্তিত্ব ও ব্যবহার: </strong>দীর্ঘদিনের সহকর্মী থেকে অল্পদিনের সাহচর্য লাভকারী ব্যক্তি, পরিবারের সদস্য থেকে তার অধীনে কর্মপালনকারী সবাই ছিলেন মরহুমের গুণমুগ্ধ। সবার বক্তব্য ও অভিব্যক্তিতে মরহুমের যে গুণটি সর্বাধিক উঠে এসেছে তা হলো তাঁর নম্রতা। রসিকতা, আন্তরিকতা ও হাসি ছিল তাঁর সৌন্দর্য। সদালাপ ও সহাস্য বদন ছিল তার ভূষণ। মুখে এক চিলতে হাসি লেগে থাকত সব সময়। চরম নিন্দুকের বিষয়ে মন্তব্য করার সময়ও সে হাসি মিলিয়ে যেত না। হূদয়টা ভরা ছিল তাঁর ওস্তাদ ও সাগরেদদের দরদে। আতিথেয়তায় তার মেলা জুড়ি ভার। ইন্তেকালের কয়েক দিন আগে আমরা ক’জন তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেই অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি আতিথেয়তায় কোনো কমতি করেননি।</p> <p><strong>ইন্তেকাল: </strong>প্রবাদপ্রতিম এই আলেম গত ৬ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাত ১১-১৫ মিনিটে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হসপিটালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! পরদিন জামেয়া দারুল মা’আরিফ প্রাঙ্গণে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন জামেয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী (হাফি.)। এরপর নিজ গ্রাম থিমছড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন!</p> <p><em>লেখক : শিক্ষক, জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম</em></p>