<p>কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য মতে, আকাশের প্রত্যেক স্তরে দরজা আছে। মিরাজের বর্ণনাসংবলিত হাদিসে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার জন্য বোরাক পাঠানো হলো। বোরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যত দূর দৃষ্টি যায় এক পদক্ষেপে সে তত দূর চলে।</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি এতে আরোহণ করলাম এবং বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম। তারপর অন্য নবীরা তাদের বাহনগুলো যে খুঁটির সঙ্গে বাঁধলেন, আমি সে খুঁটির সঙ্গে আমার বাহনও বাঁধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দুই রাকাত সালাত আদায় করে বের হলাম। জিব্রাইল (আ.) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিব্রাইল (আ.) আমাকে বললেন, আপনি ফিতরাতকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিব্রাইল (আ.) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ করলেন এবং প্রথম আসমানে পৌঁছে দ্বার খুলতে বললেন।’</p> <p>হাদিসে এভাবে এসেছে, ‘অতঃপর জিব্রাইল (আ.) দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিব্রাইল। জিজ্ঞেস করা হলো আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ! তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। অতঃপর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হলো।’</p> <p>এভাবে জিব্রাইল (আ.) প্রত্যেক আসমানে দ্বাররক্ষী ফেরেশতাদের অনুমতি নিয়ে মুহাম্মদ (সা.)-কে সঙ্গে নিয়ে সপ্তাকাশে আরোহণ করেছিলেন। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছিল এবং আমি জান্নাত দেখতে পেয়েছিলাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৮৮৭)</p> <p>অতএব হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে প্রত্যেক আকাশে দরজা আছে। প্রত্যেক আকাশে দরজা থাকার বিষয়টি পবিত্র কোরআনেও বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে, অতঃপর তোমরা দলে দলে সমাগত হবে। আর আকাশ খুলে দেওয়া হবে। অতঃপর তা বহু দরজাবিশিষ্ট হবে।’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ১৮-১৯)</p> <p>তবে হ্যাঁ, কোরআন ও হাদিসে আকাশের দরজার সংখ্যা নিরূপণ করা হয়নি। এর সঠিক সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। শুধু এতটুকু বোঝা যায় যে এই দরজাগুলোর সংখ্যা অনেক। কিয়ামতের দিন যখন আসমান বিদীর্ণ হবে, তখন দরজাসমূহ দিয়ে ফেশেতাদের দুনিয়াতে নামিয়ে দেওয়া হবে। (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৫)</p> <p>এই বিদীর্ণ হওয়ার অর্থ দরজাসমূহ খুলে দেওয়া। দ্বিতীয় ফুঁকদানের পর আসমান ও জমিন পুনরায় বহাল হয়ে যাবে এবং নতুন আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি হবে ও সব মানুষ মহাপরাক্রান্ত আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে। (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৪৮)</p> <p><strong>আকাশের দরজার প্রশস্ততা</strong><br /> আকাশের দরজাগুলোর প্রশস্ততা সম্পর্কে আল্লাহ ভালো জানেন। এর বিশালতা ও ব্যাপ্তি মানুষের জ্ঞান ধারণ করতে অক্ষম। তবে পশ্চিম দিগন্তে আকাশের একটি দরজার প্রশস্ততার ব্যাপারে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুলের জন্য পশ্চিম দিকে একটি দরজা খুলে রেখেছেন, যার প্রশস্ততা ৭০ বছরের পথ। সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় না হওয়া পর্যন্ত এ দরজা বন্ধ করা হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৩৬)</p> <p>এখানে ‘৭০ বছরের পথ’ বলতে আকাশের সেই দরজার অনির্ধারিত প্রশস্ততাকে বোঝানো হয়েছে, যা শুধু ৭০ বছরের রাস্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার চেয়ে অনেক বেশি প্রশস্ত। মহান আল্লাহ পাপী বান্দাদের তাওবা কবুলের জন্য আকাশের এই দরজা সর্বদা খুলে রেখেছেন।</p>