<p>দাম্পত্যজীবনে মান-অভিমান অনেক কিছু হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা নারীদের একটু ব্যতিক্রম স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষরা অনেক কিছু বরদাশত করতে পারলেও নারীরা তা পারে না। নারীদের মধ্যে অভিমান একটু বেশিই থাকে। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা নারীদের জন্য মান-অভিমানকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। (মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ১৪৯০)</p> <p>অর্থাৎ তাদের স্বভাবের মধ্যে মান-অভিমানের উপাদান রয়েছে। তাদের প্রকৃতি ও স্বভাবের সঙ্গে এই গুণ অবিচ্ছিন্নভাবে আছে।</p> <p>আমাদের অনেকেই তাদের সেই মান-অভিমান সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। যার কারণে তাদের দাম্পত্যজীবন সুন্দর হয় না। অনেক বেশি ভুল-বোঝাবুঝি হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছু ঘটে যায়।</p> <p><strong>স্ত্রীর সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করা </strong></p> <p>আমাদের জন্য প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবনীতে এসবেরও শিক্ষা আছে। নবীজি (সা.) তাঁর পুণ্যময়ী স্ত্রীর অভিনয়ের সময় কেমন আচরণ করতেন, তার বিবরণ রয়েছে সিরাতের কিতাবে। আমাদের উচিত সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। কারণ এসব মান-অভিমান উপলব্ধির মাধ্যমে জীবন সুখময় ও সুন্দর হয়। ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়।</p> <p>নবী (সা.)-এর সহধর্মিণী আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, কোনো এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কাছ থেকে বের হলেন। তিনি বলেন, এতে আমার মনে কিছুটা অভিমান জাগল। অতঃপর তিনি এসে আমার অবস্থা দেখে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কী হয়েছে? তুমি কি অভিমান করেছ? জবাবে আমি বললাম, আমার মতো নারী আপনার মতো স্বামীর প্রতি কেন ঈর্ষা আর অভিমান করবে না! এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার শয়তান কি তোমার কাছে এসে উপস্থিত হয়েছে? তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার সঙ্গেও কি শয়তান আছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। অতঃপর আমি বললাম, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে কি শয়তান আছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সঙ্গেও কি আছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার সঙ্গেও। তবে আল্লাহ তাআলা তার মোকাবেলায় আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এখন তার ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। (সহিহ মুসলিম : ৬৮৫০)</p> <p><strong>স্ত্রী কোনো বিষয় জানতে চাইলে তা বলা </strong></p> <p>অন্য হাদিসে আয়েশা (রা.)-এর ঘটনা এসেছে, তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের আমার এবং নবী (সা.)-এর একটি ঘটনার কথা বলব না? আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই বলবেন। তিনি বলেন, এক রাত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার কাছে ছিলেন। তিনি এশার নামাজের পর বিছানায় এলেন, স্বীয় পাদুকাদ্বয় নিজ পায়ের কাছে রাখলেন এবং পরিধেয় কাপড়ের একাংশ বিছানার ওপর বিছালেন। কিছুক্ষণ পর যখন তিনি মনে করলেন যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, তখন তিনি অতি সন্তর্পণে জুতা পরিধান করলেন, আস্তে আস্তে স্বীয় চাদরখানা উঠিয়ে নিলেন এবং অতি নিঃশব্দে দরজা খুলে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি স্বীয় চাদরখানা নিজ মাথায় রাখলাম ওড়না ও কাপর পরিধান করে তাঁর পিছু পিছু চললাম।</p> <p>তিনি জান্নাতুল বাকি নামক কবরস্থানে আসলেন এবং তিনবার স্বীয় হস্তদ্বয় লম্বা করে উত্তোলন করলেন। অতঃপর তিনি ফিরে চললে আমিও ফিরে চললাম। তিনি দ্রুত হাঁটতে লাগলে আমিও দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। তিনি আরো দ্রুতগতিতে চললে আমিও আরো একটু দ্রুতগতিতে চলতে লাগলাম। তিনি দৌড়াতে লাগলে আমিও দৌড়াতে লাগলাম। আমি তাঁর আগেই ঘরে প্রবেশ করে গেলাম এবং তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।</p> <p>অতঃপর তিনি প্রবেশ করলেন এবং বলেন, হে আয়েশা (রা.)! তোমার কী হলো? তোমার নিঃশ্বাস এত জোরে জোরে বের হচ্ছে, পেট ফুলে উঠছে? আমি বললাম, ও কিছু নয়। তিনি বলেন, হয়তো তুমি আমাকে এ ব্যাপারে অবগত করবে, না হয় আল্লাহ তাআলা—যিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞাত তিনি আমাকে অবগত করিয়ে দেবেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার ওপর আমার মাতা-পিতা কোরবান হোক। অতঃপর আমি তাঁকে পূর্ণ ঘটনা ব্যক্ত করলাম। তিনি বলেন, আমার সম্মুখে যাকে আমি দেখেছিলাম সে কি তুমিই ছিলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমার বক্ষে এমনভাবে আঘাত করলেন যে আমি ব্যথা অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কি মনে করো যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার ওপর অন্যায় আচরণ করবে? আমি বললাম, মানুষ যখন কিছু গোপন করে তা আল্লাহ নিশ্চয়ই জানেন।</p> <p>তিনি বলেন, যখন তুমি দেখেছিলে তখন জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসেছিলেন। তোমার গায়ে কাপড় ঠিক ছিল না বিধায় তিনি আমার কাছে আসেননি। বরং তোমার থেকে আড়ালে থেকে আমাকে ডাক দিয়েছিলেন। আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম এবং তোমার কাছ থেকে তা গোপন রাখলাম। আমি মনে করেছিলাম যে তুমি ঘুমিয়ে ছিলে। আমি তোমার নিদ্রা ভঙ্গ করা অপছন্দনীয় মনে করলাম। আমি আশঙ্কাও করলাম যে হয়তো তুমি ভয় পাবে। তিনি আমাকে জান্নাতুল বাকি নামক কবরস্থানে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বললেন। (সুনানে আন-নাসায়ি, হাদিস : ২০৩৭)</p> <p>প্রিয় নবী (সা.) তাঁর স্ত্রীকে বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এর কারণে স্ত্রীকে কোনো ধরনের কটূক্তি কিংবা ভর্ত্সনা করেননি।</p> <p><strong>স্ত্রীর অভিমানে রাসুল (সা.)-এর নীরবতা</strong></p> <p>উম্মুল মুমিনদের অভিমানে রাসুল (সা.) নীরব হয়ে দেখতেন। বরং তিনি স্ত্রীদের এসব আচরণের বিভিন্ন অজুহাত খুঁজতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোনো একসময় রাসুল (সা.)-এর জনৈকা (আয়েশা) স্ত্রীর কাছে ছিলেন। ওই সময় উম্মুহাতুল মুমিনিনের আর একজন একটি পাত্রে কিছু খাদ্য পাঠালেন। যে স্ত্রীর ঘরে নবী (সা.) অবস্থান করছিলেন সে স্ত্রী খাদেমের হাতে আঘাত করলেন। ফলে খাদ্যের পাত্রটি পড়ে ভেঙে গেল। নবী (সা.) পাত্রের ভাঙা টুকরাগুলো কুড়িয়ে একত্রিত করলেন, তারপর খাদ্যগুলো কুড়িয়ে তাতে রাখলেন এবং বলেন, তোমাদের আম্মাজির আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লেগেছে। তারপর তিনি খাদেমকে অপেক্ষা করতে বলেন এবং যে স্ত্রীর কাছে ছিলেন তাঁর কাছ থেকে একটি পাত্র নিয়ে যার পাত্র ভেঙেছিল তার কাছে পাঠাবার ব্যবস্থা করলেন এবং ভাঙা পাত্র নিজের কাছেই রাখলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৪৯)</p> <p>এই আচরণের কারণে নবীজি (সা.) একটু ধমকও দেননি। এই পাত্র ভাঙার কারণে স্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করেননি। কারণ এসব অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ তাদের অভিমানের কারণে হয়েছে। আর এটি ক্ষমাযোগ্য। এখানে দোষ বের করা হলে বিষয়টি কারো জন্য কল্যাণকর হবে না।</p>