<p>আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়াতে কিছুদিনের জন্য পাঠিয়েছেন। আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। বিবেক দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন। ভালো-মন্দ যেকোনো কিছু করার যোগ্যতা দিয়েছেন। আমরা চাইলে ভালো কাজও করতে পারি, চাইলে খারাপ কাজ করে নিজেকে কলুষিত করতে পারি। সবই বান্দার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এর সঙ্গে বলে দিয়েছেন যে দুনিয়ায় যারা ভালো কাজ করবে, সৎ আমল করবে, তারা এর উত্তম প্রতিদান পাবে এবং তাদের জন্য পরকালে আছে সুখময় জীবনব্যবস্থা।</p> <p>বিপরীতে যারা নিজের মনমতো চলবে তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট কর্ম অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৭)</p> <p>মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের ভালো-মন্দ যেকোনো কিছু করার শক্তি দিয়েছেন। কিন্তু এর মানে এটা নয়, আমরা যা চাই তাই করতে পারব। প্রত্যেককে একটি সীমাবদ্ধতা দিয়ে দিয়েছেন। বান্দাকে এর ভেতরে থাকতে হবে। যদি বান্দা এর ভেতর না থাকে, তাহলে এর ক্ষতি সে দুনিয়ায় নিজেই ভোগ করবে এবং পরকালে তো তার শাস্তি আছে। এ জন্য দুনিয়ার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মানুষের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন বেঁধে দিয়েছেন। মানুষ সেই নিয়ম অনুযায়ী চললে তার দুনিয়ার জীবন সুন্দর হবে এবং পরকালেও থাকবে তার জন্য অনাবিল সুখ ও শান্তি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে সরতে পারবে না।তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধনসম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)</p> <p>রাজা-প্রজা, ধনী-গরিব সবার জন্য আল্লাহ তাআলা জবাবদিহির ব্যবস্থা করেছেন। মানুষ যখন জবাবদিহির কাঠগড়া থেকে মুক্ত হয়ে যায়, তখন তার মধ্যে নানা রকম অন্যায়-অনাচার বাসা বাঁধতে থাকে। মানুষ যখন পরকালের বিশ্বাস থেকে সরে আসে, সেখানে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে—এই ভাবনা থেকে দূরে সরে যায়, তখনই তার ওপর শয়তান পরিপূর্ণভাবে জেঁকে বসে। শয়তান তাকে বিভিন্নভাবে ধোঁকা দিয়ে বিভ্রান্ত করে। এ জন্য প্রিয় নবী (সা.) আমাদের সতর্ক করেছেন তোমাদের একদিন আল্লাহর কাছে যেতে হবে, তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল। প্রতিটি সময় প্রতিটি মুহূর্ত সব কিছুর জবাব দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন তোমাদের নিয়ামতসমূহের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা : তাকাসুর, আয়াত : ৮)</p> <p>আমরা শয়নে-স্বপনে, প্রকাশ্যে-গোপনে যা কিছু করি সব কিছুই তাঁর কাছে আছে। আমার জীবন, যৌবন, আমার সম্পদ, এগুলো আমি কোন কাজে ব্যয় করেছি—এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন। এর জবাব দেওয়া ছাড়া এক কদম সামনে বাড়াও সম্ভব নয়। এই প্রশ্নের সম্মুখীন সবার হতে হবে। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব শ্রেণির পেশার মানুষদের এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। এমনটা ভাবার সুযোগ নেই, যারা বিত্তবান কিংবা শিক্ষিত তাদেরই শুধু আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, বাকিদের দাঁড়াতে হবে না।</p> <p>তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত, আমার এই মূল্যবান জীবনকে আমি কোন কাজে ব্যয় করেছি। অবহেলা ও উদাসীনতায় এ জীবন ক্ষয় করা যাবে না।ওমর (রা.)-এর প্রসিদ্ধ বাণী আছে—তোমাদের থেকে হিসাব নেওয়ার আগেই তোমরা নিজেরাই নিজেদের হিসাব নাও। তোমাদের ওজন করার আগে নিজেরাই নিজেদের ওজন করো। কারণ আজ যদি নিজেদের হিসাব নাও তাহলে আগামীকাল কিয়ামত দিবসে তোমাদের হিসাব তোমাদের জন্য সহজ হবে। (কিতাবুজ জুহুদ : ১/১০৩)</p>