<p>ইসলামে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার সর্বোচ্চ গুরুত্ব রয়েছে। তাই সামাজিক শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় রাখতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়লে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়বে এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬১)</p> <p>নিম্নে সমাজে শৃঙ্খলা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কয়েকটি করণীয় উল্লেখ করা হলো-</p> <p><strong>নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা : </strong>মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য শান্তির বাহক ছিলেন। ইবরাহিম (আ.) মক্কাবাসীর জন্য শান্তি ও খাদ্য নিরাপত্তার দোয়া করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করুন, যখন ইবরাহিম (আ.) বলেছিল, হে আমার রব, আপনি এই শহরকে নিরাপদ করুন এবং অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান আনে তাদের ফল-ফলাদি থেকে জীবিকা দিন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২৬)</p> <p>অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করুন, ইবরাহিম (আ.) বলেছেন, হে আমার রব, এই নগরীকে নিরাপদ করুন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন।’<br /> (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৫)</p> <p><strong>প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় : </strong>ইসলামী বিধি-বিধান প্রধানত পাঁচ বস্তুর সুরক্ষায় কাজ করে। তা হলো দ্বিন, প্রাণ, বুদ্ধিমত্তা, সম্মান ও সম্পদ। তাই মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ। এবং মুহাজির সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকে। (বুখারি, হাদিস : ১০)</p> <p><strong>ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ :</strong> আল্লাহ মুমিনদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’<br /> (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)</p> <p>অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য কোরো এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা ব্যর্থ হবে এবং তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হবে। নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৬)</p> <p>ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করো। বিচ্ছিন্নতা থেকে সাবধান থাকো। কারণ শয়তান বিচ্ছিন্ন একজনের সঙ্গে থাকে এবং সে দুজন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। যে ব্যক্তি জান্নাতের সবচেয়ে উত্তম স্থানের আশা করে সে যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে। যে ব্যক্তি ভালো কাজে আনন্দিত হয় এবং মন্দ কাজে কষ্ট পায় সে প্রকৃত মুমিন। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৫)</p> <p><strong>সমঝোতা কল্যাণকর :</strong> পারস্পরিক সমঝোতা কল্যাণকর। বিশেষত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে সমঝোতা করা এবং বিশৃঙ্খলা রোধ করা জরুরি। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো স্ত্রী নিজ স্বামীর দুর্ব্যবহার বা উপেক্ষার আশঙ্কা করলে তারা পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা করলে কোনো সমস্যা নেই এবং সমঝোতা উত্তম। লোভের কারণে মানুষ খুবই কৃপণ। তোমরা সৎকর্মশীল ও মুত্তাকি হলে আল্লাহ তা সম্পর্কে অবগত।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২৮)</p> <p><strong>বিরোধ নিরসনে করণীয় : </strong>পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন করা সওয়াবের কাজ। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের মধ্যে দুই পক্ষ দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে সমঝোতা করবে, তাদের এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করলে তোমরা তাদের মধ্যে সমঝোতা কোরো, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের কাছে ফিরে আসে, তাদের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে ফায়সালা কোরো এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন। মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, অতএব তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে সমঝোতা কোরো এবং আল্লাহকে ভয় কোরো যেন তোমাদের অনুগ্রহ করা হয়।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ৯-১০)</p> <p><strong>আল্লাহ শৃঙ্খলা পছন্দ করেন :</strong> আল্লাহ শান্তি-শৃঙ্খলা পছন্দ করেন। তিনি বিপর্যয় থেকে বিরত থাকা ব্যক্তিদের জন্য আখিরাতের সুন্দর আবাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আখিরাতের নিবাস তাদের জন্য নির্ধারণ করেছি, যারা পৃথিবীতে উদ্ধত ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না এবং ভালো পরিণতি মুত্তাকিদের জন্য।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৮৩)</p> <p><br />  </p>