<p>রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর গুরুত্বপূর্ণ সাহাবিরা ফতোয়া দিতেন। সাহাবিদের মধ্যে যাঁরা ফতোয়া দিতেন, তাঁদের সংখ্যা নারী-পুরুষ মিলে ১৩০ জনের কিছু বেশি ছিল। তাঁদের মধ্যে কয়েক স্তর আছে। সর্বাধিক ফতোয়া প্রদানকারী সাহাবি সাতজন। তাঁরা হলেন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.), আলী ইবনে আবি তালিব (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.), জায়েদ বিন সাবেত (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)। তাঁরা সবাই এত বেশি ফতোয়া দিয়েছেন যে তা একত্র করলে বিরাট পাণ্ডুলিপি হয়ে যাবে। </p> <p>আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর ফতোয়া পরবর্তী সময়ে (আব্বাসীয় যুগে) একত্র করলে তা ২০ গ্রন্থে পরিণত হয়। সাহাবিদের মধ্যে ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে যাঁরা আছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আবু বকর, উম্মে সালামা, আনাস বিন মালিক, আবু সাঈদ খুদরি, উসমান ইবনে আফফান, আবু হুরায়রা, আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস, আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের, আবু মুসা আশআরি, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, সালমান ফারেসি, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ, মুআজ ইবনে জাবাল, তালহা, জুবায়ের, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, ইমরান ইবনু হুসাইন, আবু বাকরাহ, উবাদা বিন সামিত, মুআবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রা.) প্রমুখ।</p> <p>যেসব সাহাবি অল্পসংখ্যক ফতোয়া প্রদান করেছেন তাঁরা হলেন আবু দারদা, আবুল ইয়াসার, আবু সালামা আল-মাখজুমি, আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ, সাঈদ বিন জায়েদ, হাসান, হুসাইন, নুমান ইবনে বাশির, আবু মাসউদ, উবাই ইবনে কাব, আবু আইয়ুব আনসারি, আবু তালহা, আবু জর গিফারি, উম্মে আতিয়্যাহ, সাফিয়া, হাফসা, উম্মে হাবিবাহ, উসামাহ বিন জায়েদ, জাফর ইবনে আবি তালিব, বারা ইবনে আজিব (রা.) প্রমুখ। (সূত্র : মুফতি তাকি উসমানি, উসুলুল ইফতা, পৃষ্ঠা ২৪-২৬)</p> <p><strong>তাবেঈদের যুগে ফতোয়া</strong></p> <p>সাহাবায়ে কেরামের যুগ রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর ১১ হিজরি থেকে প্রায় ৯৩ হিজরি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর পর থেকে তাবেঈদের যুগ শুরু হয়। এ যুগে দ্বিন ইসলামের দাওয়াত বিশ্বের চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে শারঈ বিধানও প্রচার ও প্রসার লাভ করে। স্থান, কাল, পাত্রভেদে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত ফতোয়া ছাড়া নানামুখী ফতোয়া বা যুগ-জিজ্ঞাসার জবাবের প্রয়োজন দেখা দেয়। এসব প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের দীর্ঘকাল পর তাবেঈদের যুগে বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে ইসলামী শরিয়তের আরকান, আহকাম, শর্ত ও অন্যান্য আদব পৃথক আকারে সুবিন্যস্ত হয়।</p> <p>এর ফলে কোনটি ফরজ, কোনটি ওয়াজিব, কোনটি সুন্নত ও কোনটি মুস্তাহাব- এসব কিছু বের করা সহজ হয়, যা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর যুগে এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না। কেননা সাহাবায়ে কেরাম কোনো ব্যাখ্যা ও আলোচনা ছাড়া রাসুল (সা.)-এর কথা, কাজ ও অনুমোদন গ্রহণ করেছেন। তাঁদের অবর্তমানে তাঁদেরই উত্তরসূরি তাবেঈরা ফতোয়া প্রদানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তবে খুবই অল্পসংখ্যক তাবেঈ ফতোয়া প্রদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।</p> <p><strong>যেসব স্থানে যেসব তাবেঈ ফতোয়া দিতেন</strong></p> <p><strong>মদিনা : </strong>সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, আবু সালামাহ বিন আব্দুর রহমান বিন আউফ, উরওয়াহ ইবনু যুবাইর, উবায়দুল্লাহ, কাসেম ইবনু মুহাম্মাদ, সুলায়মান বিন ইয়াসার, খারেজাহ বিন জায়েদ, ইমাম জুহরি (মৃত্যু ১১৪ হিজরি), কাজি ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, রবিআহ ইবনু আব্দুর রহমান (রহ.) প্রমুখ।</p> <p><strong>মক্কা :</strong> আতা ইবনু আবি রাবাহ (রহ.), আলী ইবনু আবি তালহা, আব্দুল মালিক ইবনু জুরাইজ (রহ.) (মৃত্যু ১৫০ হিজরি), মুজাহিদ বিন জাবর, উবাইদ বিন উমাইর, আমর ইবনু দিনার, আব্দুল্লাহ বিন আবি মুলায়কা, আব্দুর রহমান বিন সাবেত, ইকরিমা (রহ.) প্রমুখ।</p> <p><strong>কুফা : </strong>ইবরাগিম আন-নাখঈ (মৃত্যু ৯৬ হিজরি), আমের ইবনু শারাহিল আশ-শাবি, আলকামা ইবনু কায়েস আন-নাখঈ (মৃত্যু ৬২ হিজরি), আসওয়াদ ইবনু ইয়াজিদ, মুররা ইবনু শারাহিল আল-হামাদানি (রহ.) প্রমুখ।</p> <p><strong>বসরা : </strong>আমর ইবনু সালামাহ আল-জারমি, আবু মারইয়াম আল-হানাফি, কাব ইবনু সাওদ, হাসান বসরি, আবু শাসা, মুহাম্মাদ ইবনু সিরিন, আবু ক্বিলাবা আব্দুল্লাহ ইবনু জায়েদ আল-জারমি, মুসলিম বিন ইয়াসার, আবুল আলিয়া, হুমায়দ ইবনু আব্দুর রহমান, মুত্বারিরফ বিন আব্দুল্লাহ (রহ.) প্রমুখ।</p> <p><strong>ইয়েমেন :</strong> আউস ইবনে কাইসান, ওয়াহাব ইবনু মুনাবিবহ, ইয়াহইয়া ইবনু কাসির, মুতারিরফ ইবনু মাজেন, আব্দুর রাজ্জাক ইবনু হুমাম, হিশাম ইবনু ইউসুফ, মুহাম্মাদ ইবনু সাওর ও সিমাক ইবনুল ফজল (রহ.) প্রমুখ।</p> <p><strong>সিরিয়া : </strong>মাকহুল ইবনু আবি মুসলিন, আল-হুজালি (মৃত্যু ১৯৩ হিজরি), আবু ইদদিস আল-খাওলানি, শুরাহবিল ইবনু আস-সামাত, ওমর ইবনু আব্দুল আজিজ, রাজা ইবনু হায়াত (রহ.) প্রমুখ। (ইলামুল মুওয়াক্কিঈন, ১/২৩)</p> <p><strong>মিসর :</strong> ইয়াজিদ ইবনু আবি হাবিব, বুকাইর ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনিল আশাজ্জ, আমর ইবনিল হারেস (রহ.) প্রমুখ।</p> <p><strong>স্পেন : </strong>ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আব্দুল মালেক ইবনু হাবিব, বাকি ইবনু মাখলাদ, কাসেম ইবনু মুহাম্মাদ, মাসলামা ইবনু আব্দুল আজিজ আল-কাজি, মুনজির ইবনু সাঈদ (রহ.) প্রমুখ।</p> <p><strong>বাগদাদ : </strong>এখানে বহু মুফতির সমাগম ঘটেছিল। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আবু উবাইদ আল-কাসেম ইবনু সাল্লাম, আবু সাওর ইবরাহিম ইবনু খালেদ আল-কালবি, যিনি ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর শাগরেদ ছিলেন। (ইলামুল মুওয়াক্কিঈন, ১/২২)</p> <p>তাবেঈদের যুগে সংকলিত হয়েছে মুয়াত্তা, মুসনাদ ও সুনান কিতাবগুলো- মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, কিতাবুল আসার প্রভৃতি গ্রন্থে। (উসুলুল ইফতা, পৃষ্ঠা ৩১)<br />  </p>