<p>ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদিস ও ফিকহের কিতাবে গুরুত্বের সঙ্গে পেশাব-পায়খানা সংক্রান্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়গুলো আয়ত্ত করে দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করার মধ্যেই দুনিয়া-আখিরাতের স্থায়ী কল্যাণ। গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদিস নিয়ে আলোচনা করা হলো :</p> <p><strong>১. টয়লেটে প্রবেশের আগের দোয়া</strong></p> <p>সাধারণত টয়লেটে জিন শয়তানরা অবস্থান করে থাকে। এ জন্য মাথা ঢেকে জুতা-স্যান্ডেল ব্যবহার করে বিসমিল্লাহসহ দোয়া পড়ে টয়লেটে প্রবেশ করতে হয়, অন্যথায় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) যখন টয়লেটে প্রবেশ করতেন তখন তিনি বলতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খবাইস। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সব পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় শয়তানদের থেকে পানাহ চাচ্ছি। (বুখারি, হাদিস: ৫৮৮৩)</p> <p><strong>২. টয়লেটে গিয়ে কখন কাপড় খুলতে হয়</strong></p> <p>নারী-পুরুষের নির্ধারিত সতর ঢাকা ফরজ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সতর খোলা সম্পূর্ণ হারাম। টয়লেটে প্রবেশ করে যথাসম্ভব বসার স্থানের কাছে গিয়ে কাপড় খুলতে হয় বা ওঠাতে হয়। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) যখন পেশাব-পায়খানা করতেন, তখন তিনি জমিনের নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত কাপড় ওঠাতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৪; তিরমিজি, হাদিস: ১৪)</p> <p><strong>৩. কোন দিকে ফিরে পেশাব-পায়খানা করতে হয়</strong></p> <p>খোলা প্রান্তর হোক কিংবা টয়লেটে সর্বাবস্থায় কাবার সম্মান বজায় রাখতে হয়। এ সময় কখনো কাবার দিকে মুখ ও পিঠ দেওয়া যাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য সে রূপ, যে রূপ পিতা তার সন্তানের জন্য। আমি তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছি, যখন তোমরা পায়খানায় গমন করো তখন তোমরা কিবলামুখী হবে না এবং একে পেছনেও রাখবে না। আর তিনি তিনটি পাথর নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং গোবর ও ঘোড়া-গাধার মল নিতে নিষেধ করেন। উপরন্তু তিনি লোকদের ডান হাত দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করতে নিষেধ করেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৩)</p> <p><strong>৪. সর্বদা বসে পেশাব-পায়খানা করা</strong></p> <p>আল্লাহর রাসুল (সা.) সর্বদা বসে পেশাব করেছেন। এটাই হওয়া উচিত উম্মতের জন্য অনুকরণীয় আমল। কেননা গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া দাঁড়িয়ে পেশাব করা মাকরুহ। আয়েশা (রা.) বলেন, যারা তোমাকে এরূপ হাদিস শোনাবে যে রাসুল (সা.) দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন তা তুমি সত্য বলে গ্রহণ করবে না ‌। আমি তাঁকে বসে পেশাব করতে দেখেছি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৭)</p> <p><strong>৫. বিজোড় ঢিলা-টিস্যু ব্যবহার করা</strong></p> <p>পেশাব-পায়খানার পর যথানিয়মে পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। পেশাবের পর পুরুষের কর্তব্য হলো পেশাবের ফোঁটা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত টিস্যু ধরে রাখা। তারপর পানি ব্যবহার করা। আর পায়খানার ক্ষেত্রে পুরুষের করণীয় পেছনের দিক থেকে ঢিলা-টিস্যু ব্যবহার শুরু করা। আর নারীরা সর্বাবস্থায় সামনের দিক থেকে টিস্যু ব্যবহার করে পানি ব্যবহার করবে। আবু হুরায়রা (রা.)থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন অজু করে তখন সে যেন নাকে পানি দেয়। এরপর সে যেন নাক ঝেড়ে নেয়। আর যে ইস্তিঞ্জা করে সে যেন বিজোড় সংখ্যক ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে তখন সে যেন অজুর পানিতে হাত ঢোকানোর আগে তা ধুয়ে নেয়। কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে। (বুখারি, হাদিস : ১৬১ )</p> <p><strong>৬. টয়লেটে ডান হাত ব্যবহার নিষিদ্ধ</strong></p> <p>টয়লেটে শৌচকাজের জন্য বাঁ হাত ব্যবহার করতে হয়। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন পানি পান করবে সে যেন তখন পানপাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে। আর তোমাদের কেউ যখন পেশাব করবে সে যেন ডান হাতে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং তোমাদের কেউ যখন শৌচকাজ করবে, তখন সে যেন ডান হাতে তা না করে। (বুখারি, হাদিস: ৫২২৮)</p> <p><strong>৫. পেশাবের ছিটা থেকে সতর্ক থাকা</strong></p> <p>পেশাবের ছিটা থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। সাবধানতা অবলম্বন না করার পরিণতি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) একবার দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এ সময় তিনি বলেন, এদের কবরে আজাব দেওয়া হচ্ছে । কোনো কঠিন পাপের জন্য তাদের আজাব হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে সতর্ক থাকত না। আর অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াত। তারপর তিনি একখানি কাঁচা খেজুরের ডাল নিয়ে ভেঙে দুই ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরের ওপর একটি করে পুঁতে দিলেন। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), এরূপ কেন করলেন? তিনি বলেন, হয়তো তাদের আজাব কিছুটা লাঘব করা হবে। যত দিন পর্যন্ত এটি না শুকাবে। (বুখারি, হাদিস: ২১৮)</p> <p><strong>৬. টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া</strong></p> <p>টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় ডান পা আগে বের করতে হয়। আর দোয়া পড়তে হয়। হাদিসে দুটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। গুফরানাকা শব্দটি বাড়িয়ে দোয়া দুটি একসঙ্গে পড়া যায়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, যখন নবী (সা.) টয়লেট থেকে বের হতেন, তখন তিনি বলতেন, ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আননিল আজা ওয়াফানি।’ অর্থাৎ সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার থেকে কষ্ট দূর করেছেন এবং নিরাপত্তা দান করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০১)</p> <p> </p>