<p>পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কিয়ামতের ঘটনাগুলো বর্ণিত হয়েছে। আলেমরা কিয়ামতের ঘটনাবলির ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :</p> <p>১. মানুষ কবরে পুনর্জীবন লাভ করে হাশরের মাঠে জমায়েত হবে। তখন তাদের অবয়ব হবে খুবই দীর্ঘ। ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পিপাসায় কাতর হয়ে পড়বে অনেকে। তাদের অন্তরজুড়ে ভয়ভীতি বিরাজ করবে। কারণ আল্লাহর হিসাব গ্রহণ ও প্রতিদান সম্পর্কে তারা সন্ত্রস্ত থাকবে।</p> <p>২. মানুষ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হাশরের মাঠে অবস্থান করবে। তখনকার এক দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। একপর্যায়ে আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবী (সা.)-এর সামনে হাউজে কাউসার উন্মোচন করবেন। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছে, বিদআতের কার্যক্রম থেকে দূরে ছিল এবং এই অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে, সে হাউজের সামনে এসে পানি পান করতে পারবে। রাসুল (সা.)-এর হাউজ থেকে পান করার সৌভাগ্য তাকে নিরাপদ রাখবে। এরপর অন্যান্য নবী-রাসুল ও তাঁদের উম্মত সেই হাউজ থেকে পান করতে পারবে।</p> <p>৩. এরপর মানুষ দীর্ঘ সময় অবস্থান করবে। তখন রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে দ্রুত পুরো সৃষ্টিজগতের হিসাব গ্রহণের সুপারিশ করবেন। একটি দীর্ঘ হাদিসে এই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, মানুষ প্রথমে আদম (আ.), এরপর নুহ (আ.), এরপর ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে এসে সুপারিশের জন্য আবেদন করবে। সবশেষে তারা মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এলে তিনি আরশের কাছে এসে সুপারিশ করবেন। তখন আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ, আপনার মাথা তুলুন। আপনি যা চান, আপনাকে দেওয়া হবে। আপনি সুপারিশ করুন, তা গ্রহণ করা হবে। তখন তিনি দ্রুত হিসাব শুরু করার অনুরোধ করবেন।</p> <p>৪. এরপর মানুষের আমল উপস্থাপন করা হবে।</p> <p>৫. এরপর প্রাথমিক পর্যায়ে হিসাব নেওয়া শুরু হবে।</p> <p>৬. প্রথম পর্যায়ের হিসাব গ্রহণের পর আমলনামা দেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ের হিসাব গ্রহণও আমল উপস্থাপনের অংশ হবে। কারণ সেখানে অনেকের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হবে এবং অপারগতা গ্রহণ করা হবে। এরপর ডানপন্থীদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে এবং বামপন্থীদের আমলনামা বাঁ হাতে দেওয়া হবে। সবাই নিজের আমলনামা পড়বে।</p> <p>৭. আমলনামা পড়ার পর সব ধরনের আপত্তি দূর করতে হিসাব নেওয়া হবে। তখন আমলনামায় থাকা সব কিছুর প্রমাণ পেশ করা হবে।</p> <p>৮. এরপর আমলনামা মাপার দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। তখন সব ধরনের আমল ওজন করা হবে।</p> <p>৯. দাঁড়িপাল্লায় ওজনের পর মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হবে। অর্থাৎ নবী ও রাসুলদের তত্ত্বাবধানে ঝাণ্ডা থাকবে এবং এর পেছনে তাঁদের অনুসারীরা চলবে। যেমন মুহাম্মদ (সা.)-এর ঝাণ্ডা, ইবরাহিম (আ.)-এর ঝাণ্ডা, মুসা (আ.)-এর ঝাণ্ডা।</p> <p>অন্যদিকে জালিম ও কাফিরদের আরেকটি দল থাকবে। তারাও তাদের মতো মানুষের সঙ্গে জমায়েত হবে। অর্থাৎ মুশরিক পণ্ডিত, জালিম, পরকাল অস্বীকারকারীসহ সবার আলাদা দল থাকবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘একত্র করো গুনাহগারদের, তাদের দোসরদের এবং যাদের ইবাদত তারা করত আল্লাহ ব্যতীত। অতঃপর তাদের পরিচালিত করো জাহান্নামের পথে।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ২২-২৩)</p> <p>১০. অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে জাহান্নামের আগে চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে যাবে। তখন মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত আলো দিয়ে চলা শুরু করবে। সেখানে মুনাফিকরাও থাকবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর উভয়ের মধ্যখানে একটি প্রাচীর স্থাপিত হবে, যাতে একটি দরজা থাকবে, যার ভেতরে রহমত থাকবে এবং বাইরে থাকবে শাস্তি। মুনাফিকরা মুমিনদের ডেকে বলবে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? তারা বলবে, অবশ্যই ছিলে, তবে তোমাদের নিজেরা নিজেদের বিপদগ্রস্ত করেছ।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১৩)</p> <p>অন্যদিকে মুমিনদের আল্লাহ পথ চলার আলো দেবেন। তারা পুরো পথ অতিক্রম করবে। আর মুনাফিকদের জন্য কোনো আলো থাকবে না। তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়ে কাফিরদের সঙ্গে বসবাস করবে।</p> <p>১১. পুলসিরাত পাড়ি দিতে হবে।</p> <p>১২. সর্বপ্রথম রাসুল (সা.) জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তাঁর পর মুহাজির ও আনসারদের দরিদ্র ব্যক্তিরা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এরপর উম্মতের মধ্যে যারা দরিদ্র ছিল তারা প্রবেশ করবে। সম্পদের হিসাবের কারণে ধনীরা বিলম্বে প্রবেশ করবে।</p> <p><em>তথ্যসূত্র : শরহুত তাহাবি, পৃষ্ঠা : ৫৪২</em></p>