<p>মুয়ানাকা আরবি শব্দ। এর অর্থ কোলাকুলি করা। দীর্ঘ সাক্ষাতের পর পরস্পরে ঘাড়ের সঙ্গে ঘাড় মেলানো এবং বুকের দিকে জড়িয়ে ধরাকে ইসলামী শরিয়তে মুয়ানাকা বলা হয়। এটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। তাই এক মুসলমান অন্য মুসলমানের সাক্ষাতে প্রথমত সালাম আদান-প্রদান করে মুসাফাহা করবে, এরপর মুয়ানাকা করবে। এই সুন্নত আদায়ের মাধ্যমে হিংসা-বিদ্বেষ ও অহংকার দূর হয় এবং পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন মজবুত হয়।</p> <p><strong>পৃথিবীর সর্বপ্রথম মুয়ানাকা</strong></p> <p>ইবরাহিম (আ.) পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ হজরত জুলকারনাইনের সঙ্গে মুয়ানাকা করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জুলকারনাইন সফর করে মক্কার আবতহ নামক স্থানে পৌঁছে অবগত হলেন যে এখানে আল্লাহর খলিল ইবরাহিম (আ.) আছেন। তিনি এ কথা শুনে বলেন, যে শহরে আল্লাহর খলিল উপস্থিত সেখানে সওয়ারিতে চড়া অনুচিত। তাই তিনি সওয়ারি থেকে অবতরণ করে হেঁটে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইবরাহিম (আ.) জুলকারনাইনকে সালাম দিয়ে তাঁর সঙ্গে মুয়ানাকা করেন। (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ২৫৩৫৯,জামেউল আহাদিস, হাদিস : ৯৬৬৪)</p> <p><strong>হাদিসে মুয়ানাকা করার গুরুত্ব</strong></p> <p>মুয়ানাকা মুহব্বত প্রকাশের শ্রেষ্ঠ পন্থা ও স্নেহের নিদর্শন। আয়েশা (রা.)থেকে বর্ণিত, জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) যখন মদিনায় এলেন, তখন নবী করিম (সা.) আমার ঘরে ছিলেন। জায়েদ (রা.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আমার ঘরে এলেন এবং দরজায় টোকা দিলেন। রাসুল (সা.) নিজের কাপড় সামলাতে সামলাতে উঠে গেলেন। জায়েদের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন এবং তাকে চুমু দেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৭৩২; রিয়াজুস সালেহিন : ১/৪৫৭)</p> <p>দীর্ঘদিন পর একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কোলাকুলি করা সুন্নত। এটা সাহাবায়ে কেরাম করতেন। আনাস (রা.) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে মুসাফাহা করতেন। আর সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে মুয়ানাকা করতেন। (তাবারানি কাবির, হাদিস : ৯৭; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৬২৩৪; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, হাদিস : ১২৭৬৫)</p> <p><strong>মুয়ানাকার পদ্ধতি ও দোয়া</strong></p> <p>মুয়ানাকা করার সুন্নত পদ্ধতি হলো একে অপরের ডান দিকের ঘাড়ের সঙ্গে ঘাড় মেলানো। বুকের সঙ্গে বুক মিলে গেলে কোনো সমস্যা নেই। তবে মুয়ানাকা শুধু একবার করতে হয়। তিনবার করার কথা হাদিস বা ফিকহের কোনো কিতাবে উল্লেখ নেই। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৯/৭৭)</p> <p>মুয়ানাকা করার সময় এই পড়া উচিত—আল্লাহুম্মা জিদ মুহাব্বাতী লিল্লাহি ওয়া রাসুলিহি। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের মধ্যে আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দিন। (জামেউস সুনান : ১৫৯)</p>