<p>সাক্ষাতের সময় মুখে সালাম আর হাতে হাত মেলানোকে মুসাফাহা বলা হয়। এটা মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতির একটি অংশ। মুসাফাহা দ্বারা হিংসা-বিদ্বেষ ও অহংকার দূর হয়। একে অন্যের প্রতি মহব্বত বাড়ে। সর্বোপরি ছোট ছোট গুনাহ মাফ হয়ে যায়। মুসাফাহা করার গুরুত্ব-ফজিলত ও সঠিক নিয়ম-কানুন সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-</p> <p><strong>মুসাফাহার গুরুত্ব ও ফজিলত</strong></p> <p>ইসলামপূর্ব আরব সমাজে মুসাফাহার প্রচলন ছিল। ইসলামেও তা স্বীকৃত। মুসাফাহা দ্বারা হিংসা-প্রতিহিংসা দূর হয়। আতা ইবনে আবি মুসলিম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরে মুসাফাহা করো, তাহলে তোমাদের প্রতিহিংসা দূর হয়ে যাবে।’ (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস : ১৬১৭)</p> <p>মুসাফাহার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। বারা ইবনে আজেব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দুই মুসলমান যখন পরস্পর সাক্ষাতে মুসাফাহা করে তখন তাদের পৃথক হওয়ার আগে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২১৪; তিরমিজি, হাদিস : ২৭২৭)</p> <p>সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আরো এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যখন অন্য মুসলমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং মুসাফাহা করে, তখন উভয়ের গুনাহ ঝরে যায়। যেভাবে প্রবল বাতাসে শুকনো গাছের পাতা ঝরে যায়। যদিও বা তাদের গুনাহ সাগরের ফেনা সমপরিমাণ হয়।’ (তাবারানি কাবির, হাদিস : ৬১৫০)</p> <p><strong>মুসাফাহার সুন্নত পদ্ধতি</strong></p> <p>মুসাফাহা করার সুন্নত পদ্ধতি হলো উভয় হাত দিয়ে মুসাফাহা করা। যদিও ইদানীং কেউ কেউ এক হাতের পক্ষে কথা বলেন। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কাউকে বিদায় দিতেন তখন তার হাত ধরে মুসাফাহা করতেন। ওই ব্যক্তি হাত সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত নবীজি নিজের হাত সরিয়ে নিতেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪২)</p> <p>আবু মামার (রহ.) বর্ণনা করেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে তাশাহহুদ শিখিয়েছেন এমন অবস্থায় যে আমার হাত তাঁর উভয় হাতের মধ্যে ছিল। যেভাবে আমাকে তিনি কোরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬২৬৫, মুসলিম, হাদিস : ৯২৮)</p> <p>মুসাফাহা করার সময় আল্লাহর প্রশংসা এবং দরুদ পাঠের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আর মুসাফাহা করার সময় এই দোয়া পাঠ করা উত্তম—‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২১৩)</p> <p>মুসাফাহা করার সময় হাতে ঝাঁকি দেওয়া এবং হাত বুকের সঙ্গে মেলানো নিষ্প্রয়োজন।</p> <p><em>লেখক : আলেম ও কবি</em></p>