<p>আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবনতির কারণে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমাবে এমন সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় মূলত সোনার দাম বাড়ছে। বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, গত শুক্রবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়ে প্রতি আউন্স হয় দুই হাজার ১৭৮ ডলার, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। গত এক সপ্তাহে সোনার দাম বেড়েছে ৪.৫৭ শতাংশ, এক মাসে বেড়েছে ৭.৬৩ শতাংশ আর এক বছরে বেড়েছে ১৮.৯৯ শতাংশ।</p> <p>সোনার দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প কর্মকাণ্ড কমেছে। সেই সঙ্গে উৎপাদন কমেছে, কর্মসংস্থানও সংকুচিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বেড়ে দুই বছরে সর্বোচ্চ ৩.৯ শতাংশ হয়েছে। এতে বোঝা যায় শিল্প খাতে গতি নেই। এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটির ভোক্তা আস্থাও কমে তিন মাসে সর্বনিম্ন হয়েছে, যা প্রমাণ করে দেশটির অর্থনীতি আবার অবনতির দিকে যাচ্ছে। এতে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য। নিউ ইয়র্ক ফেড প্রেসিডেন্ট জন উইলিয়ামস সম্প্রতি সুদহার এ বছরের শেষ নাগাদ কমানোর আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন। তিনি অর্থনীতি চাঙ্গা করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।</p> <p>জেপি মরগানের বিশ্লেষকরা বলছেন, আশা করা যায় যুক্তরাষ্ট্র সুদহার কমাবে। এতে ডলার দুর্বল হবে এবং সোনার দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এমনকি ২০২৫ সালে মূল্যবান এ ধাতুর দাম সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। সোনার দামের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা মানে সোনার বাজারে সুদিন। অর্থনীতি যত খারাপের দিকে যায় মানুষ সোনায় তত বিনিয়োগ বাড়ায়। এতে দামও ঊর্ধ্বমুখী থাকে। ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের ২৪ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রমবর্ধমান মার্কিন ডলারের রিজার্ভ নিয়ে হতাশায় রয়েছে। এ কারণে এক বছরের মধ্যে সোনার রিজার্ভ বাড়াতে চায়। ফলে এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক খাত থেকেই সোনার জন্য উচ্চ চাহিদা থাকবে।</p> <p>বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, মূলত দুটি কারণে সোনার দাম বাড়ছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রানীতির রাশ আলগা করবে এমন খবর অনেক দিন ধরে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সেই সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ আবারও সোনার দিকে ঝুঁকছে।</p> <p>স্বাধীন বিশ্লেষক রস নরম্যান আশা করছেন, চলতি বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি দুই হাজার ৩০০ ডলারে উঠে যাবে। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাতে যাচ্ছে এবং তার জেরে সোনার বাজার সেদিকে ধাবিত হবে, অর্থাৎ দাম এই পর্যায়ে উঠে যাবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সোনার দাম এই পর্যায়ে উঠবে তা হয়তো নয়, সম্ভবত আগামী ছয় মাসের মধ্যে সোনার দাম দুই হাজার ৩০০ ডলারে উঠবে।</p> <p>আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির ফলে দেশের বাজারেও অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে সোনার দাম। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) নতুন দাম কার্যকর করে। নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম দুই হাজার ২১৭ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৯০৮ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম বেড়ে হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৭৭৬ টাকা। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে ৯২ হাজার ৩৭৯ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম বেড়ে হয়েছে ৭৬ হাজার ৯৮৩ টাকা।</p>