<p>মন্দায় পড়েছে বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ জাপান ও যুক্তরাজ্য। টানা দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ায় সর্বজনীন সংজ্ঞা অনুযায়ী দুই দেশই কৌশলগত মন্দায় পড়েছে। শঙ্কায় আছে জার্মানি ও পুরো ইউরোজোন অঞ্চল। ফলে করোনা মহামারির পর বিশ্বজুড়ে আবারও মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যেও করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অনেকটাই সফল যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করলেও দেশটি মন্দা এড়িয়ে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে।</p> <p>জাপান মন্দায় যে কারণে : ২০২৩ সালের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে সংকুচিত হয় জাপানের অর্থনীতি। ওই দুই প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয় যথাক্রমে ৩.৩ শতাংশ ও ০.৪ শতাংশ। এমনকি ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকেও সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাপানের অর্থনীতি মন্দায় পড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেশটির মুদ্রা ইয়েনের ব্যাপক দরপতন, বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ও টানা ১৪ বছর জনসংখ্যা হ্রাস। শুধু ২০২৩ সালেই ডলারের বিপরীতে ইয়েন দর হারায় ৭ শতাংশ। মূলত এই তিন কারণেই দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।</p> <p>ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডনোভ্যান বলেন, ‘জাপানের অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার সঙ্গে দেশটির জনসংখ্যা হ্রাসের সম্পর্ক রয়েছে। ২০২২ সালে দেশটির জনসংখ্যা কমেছে আট লাখ। টানা ১৪ বছর জাপানের জনসংখ্যা কমেছে। এতে দেশটির প্রবৃদ্ধি সক্ষমতা কমেছে। কারণ কম জনসংখ্যা মানে কম উৎপাদন, কম সক্ষমতা।’</p> <p><strong>যুক্তরাজ্য মন্দায় যে কারণে :</strong> জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে কৌশলগত মন্দায় পড়েছে ব্রিটেনের অর্থনীতি। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ০.৩ শতাংশ কমেছে, এর আগের তিন মাসে হ্রাস পেয়েছিল ০.১ শতাংশ। পর পর দুই প্রান্তিকে জিডিপি হ্রাসের ফলে মন্দার কবলে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে করোনা মহামারির প্রভাবে সংকটে পড়েছিল দেশটির অর্থনীতি। এরপর এটিই দেশটির প্রথম অর্থনৈতিক মন্দা।</p> <p><strong>যুক্তরাষ্ট্র মন্দা ফাঁকি দিল</strong> <strong>যেভাবে : </strong>যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) ২০২২ ও ২০২৩ সালে টানা দুই বছর সুদহার বাড়ায়। এতে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র মন্দায় পড়তে পারে। কিন্তু এখনো দেশটির অর্থনীতিতে তেমন লক্ষণ দেখা যায়নি। উপরন্তু গত বছরের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে ভোক্তা ব্যয় বাড়ায় দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয়েছে।</p> <p>বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা মহামারি ও যুদ্ধসহ নানা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দা এড়াতে পেরেছে মূলত দুই কারণে। প্রথমত, করোনা মহামারিতে দেশটির সরকার পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দেয়। এতে পরিবারগুলোর পক্ষে ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যে জ্বালানি সংকট তৈরি হয় তাতে যুক্তরাষ্ট্রের খুব একটা সমস্যা হয়নি। কারণ দেশটি রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা খাতের যে ডাটা প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা গেছে, খুচরা খাতে বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কমেছে। যার অর্থ দাঁড়ায় আমেরিকানরা খরচ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। যদিও দেশটিতে বেকারত্বের হার টানা ২৪ মাস যাবৎ ৪ শতাংশের নিচে।</p> <p>বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের বৈশ্বিক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফিলিপ কার্লসন-জেলজেক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এ বছর মন্দায় পড়বে না, তবে প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে।’ তিনি বলেন, ‘তবে একটি কারণে মন্দায় পড়তে পারে। যদি ফেডারেল রিজার্ভ এ বছরের পুরো সময় সুদহার না কমায়।’ জনজীবনে মন্দার প্রভাব কিভাবে পড়ে: ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগে এসে মন্দায় পড়েছে বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ জাপান ও যুক্তরাজ্য। মন্দার ফলে জনজীবনে এর কী প্রভাব পড়ে এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবৃদ্ধির সুবিধা পুরো দেশের মানুষ পায়। প্রবৃদ্ধি মানে হচ্ছে বেশি কর্মসংস্থান, কম্পানিগুলোর বেশি আয়। এতে কর্মীদের বেশি বেতন ও শেয়ারধারীদের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারে। সরকারও বাড়তি রাজস্ব পায়। ফলে বেতন বৃদ্ধিসহ সামাজিক কল্যাণে বা দরিদ্র মানুষের জন্য বেশি ব্যয় করতে পারে।</p> <p>কিন্তু অর্থনীতি যখন সংকুচিত হয়, তখন একটি দেশ মন্দায় পড়ে। এতে প্রবৃদ্ধির সুফলের ঠিক উল্টোটা ঘটে। শিল্প-কারখানার উৎপাদন কমে যায়, কম্পানিগুলোর আয় কমে, অনেক মানুষ চাকরি হারায় এবং বেকারত্ব বাড়ে। শ্রমবাজারে যারা প্রবেশ করে তাদের জন্য চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারও ব্যয় কমিয়ে দেয়।</p> <p>অর্থনীতিবদরা বলছেন, মন্দার ফল সমাজের সবাই সমানভাবে ভোগ করে না। এ সময় সামাজিক অসমতা বেড়ে যায়। ধনীরা সহজে টিকে থাকলেও যারা নির্ধারিত আয়ের মানুষ তাদের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়।</p> <p>সূত্র : বিবিসি, সিএনএন মানি, রয়টার্স</p>