<p> ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ রংপুর শহর কমিটির সভাপতি ছিলেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের কাছে কারমাইকেল কলেজের হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের চিনিয়ে দিতেন। পরে তাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। কারমাইকেল কলেজের চার শিক্ষককে হত্যা করার মধ্য দিয়ে তারা জাতির বিবেককে হত্যা করেছে। এ ছাড়া রংপুর টাউন হলে নারীদের নির্যাতন করার সময় আজহার পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে থাকতেন। সাক্ষ্যে এসব বিষয় প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।</p> <p> মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপনকালে এ দাবি করেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল রবিবার পর্যন্ত আজহারের বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগ পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। গতকাল যুক্তি উপস্থাপনকালে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও ড. তুরিন আফরোজ উপস্থিত ছিলেন।</p> <p> আজহারের বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগ আছে।</p> <p> তাপস কান্তি বল বলেন, আসামি এ টি এম আজহার একটি সংঘবদ্ধ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।</p> <p> পঞ্চম অভিযোগে যুক্তি উপস্থাপনকালে তাপস কান্তি বলেন, এ অভিযোগের ওপর একজন ক্ষতিগ্রস্ত নারী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তখন তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ধর্ষণের পর রংপুর টাউন হলে নিয়ে নির্যাতন করে। সে সময় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে এ টি এম আজহারুল ইসলাম ছিলেন বলে সাক্ষ্যে জানিয়েছেন ওই নারী।</p> <p> 'সুবহানের সঙ্গে কথা শেষ করেই সেনারা কয়েকজনকে হত্যা করে' : এদিকে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ২৩তম সাক্ষী মো. খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, '১৯৭১ সালের ১২ মে ভোর ৬টা সোয়া ৬টার দিকে গুলির শব্দ পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি, লোকজন দিগ্বিদিক ছুটছে। পাকিস্তানি সেনারা এসেছে শুনে সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশ দিয়ে পালানোর সময় একটি সাদা গাড়ির সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আরো চার-পাঁচটি গাড়ি দেখতে পাই। তখন আমি পার্শ্ববর্তী একটি আখক্ষেতে আত্মগোপন করি। আমার সঙ্গে ছিলেন ভজন সাহা, বলাই সাহা ও বুদ্ধীশ্বর সাহা। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত মাওলানা সুবহানকে সাদা গাড়িটি থেকে নেমে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখি। কথা শেষ হলেই পাকিস্তানি সেনারা গুলি করতে শুরু করে এবং সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজনকে লুটিয়ে পড়তে দেখি। এরপর গাড়িগুলোকে সিন্দুরপুর কন্দরপুরের দিকে চলে যেতে দেখি।'</p> <p> খোরশেদ আলমের বাড়ি পাবনার সুজানগর উপজেলার ফকিতপুর গ্রামে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাঁকে জেরা শুরু করেন সুবহানের আইনজীবী। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আজ সোমবার পর্যন্ত বিচারিক কাজ মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।</p> <p> হাসান আলীকে হাজির হওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ : মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ মো. হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে পলাতক এই রাজাকার কমান্ডারকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল এ আদেশ দেন ১ নম্বর ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।</p> <p>  </p> <p>  </p>