<p> কুড়িগ্রামের দাশিয়ারছড়া ছিটমহলকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারিদের একটি সিন্ডিকেট ভারতীয় বিভিন্ন কম্পানির মোটরসাইকেল প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে পাচার করে আনছে। তাই সীমান্তে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসব মোটরসাইকেল 'টানা গাড়ি' নামে পরিচিত।</p> <p> ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের ছবি পাঠিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এ ছাড়া একাধিক মোটরসাইকেলে একই রেজিস্ট্রেশন নম্বর লাগানো এবং চেসিস নম্বর ডাইসের মাধ্যমে পরিবর্তন করে জমজমাট চলছে কথিত টানা গাড়ির ব্যবসা। সারা বছর এ বাণিজ্য জারি থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তের দাশিয়ারছড়া ছিটমহল কেন্দ্রিক এ ব্যবসা জমে উঠেছে।</p> <p> সরেজমিন গিয়ে ঘুরে জানা গেছে, ফুলবাড়ীর গঙ্গাহাট সীমান্তের তিন কিলোমিটার ভেতরের চারপাশে বাংলাদেশি গ্রামবেষ্টিত এক হাজার ৬০০ একর জমির ভারতীয় ছিটমহল দাশিয়ারছড়া। এ ছিটমহলের দিনে-রাতে প্রকাশ্যেই মাদকদব্য বেচাকেনা হয়। পাশাপাশি চলে টানা গাড়ির কারবার। পাচারকারীরা ছিটমহলটির বেশ কিছু বাড়িতে মোটরসাইকেল রেখে সুযোগ বুঝে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্ব্বর প্লেট লাগিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে বিক্রি করছে। আইনি জটিলতা থাকায় ভারতীয় এ ছিটমহলটিতে সহজেই পুলিশ কিংবা বিজিবি ঢুকতে পারে না। চোরাকারবারিদের জন্য এটি বাড়তি সুযোগ। সম্প্রতি একজন কলেজশিক্ষকের ১০০ সিসি প্লাটিনা, একজন ঠিকাদারের ইয়ামাহা ও একজন ব্যবসায়ীর ১০০ সিসি ডিসকভার মোটরসাইকেল চুরি হলে ফুলবাড়ী এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। পরে পুলিশ মোটরসাইকেল উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে এবং সীমান্তের ওই এলাকা থেকে পাঁচটি ও বিজিবি একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। চোরাকারবারীরা চায় না ছিটমহল বিনিময় হোক। কারণ ছিটমহল বিনিময় হলে বন্ধ হয়ে যাবে তাদের ব্যবসা। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। চোরাকারবারে বাধা দেওয়ায় ছিমটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে গত সোমবার চোরাকারবারীদের সংঘর্ষও ঘটেছে।</p> <p> নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা যায়, মোটরসাইকেল পাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে ভারতীয় বিএসএফ, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী ও সীমান্ত লাগোয়া থানার অসাধু কয়েকজন ব্যক্তির সখ্য থাকায় দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তারা মোটরসাইকেল পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে চোত্তাবাড়ী মোড়, কাশিয়াবাড়ী, বিদ্যাবাগিশ ঠোস, অনন্তপুর খালিশা কোটাল ও গোরকমণ্ডপ নামাটারী সীমান্তকে। প্রতি রাতে নির্দিষ্ট এসব এলাকা দিয়ে সীমান্তের দুই পারের পাচারকারী চক্র মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে মোটরসাইকেল পাচার করছে। পাচার করে ছিটমহলের বিভিন্ন বাড়িতে মজুদ করা হয় মোটরসাইকেল। অতি নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে ওই ছিটমহলের বাসিন্দা আশরাফুল, মতিউর রহমান, শাহ আলম, সিরাজুল ইসলাম সেরা ও শফিকুল ইসলামের বাড়ি। তারা সবাই টানা গাড়ির ব্যবসায়ী। অনেক সময় নিজ বাড়ির পরিবর্তে আশপাশের বাড়িতে রাখা হয় পাচার করা মোটরসাইকেল। খড়িবাড়ি, গঙ্গারহাট ও ফুলবাড়ী বাজার থেকে ইন্টারনেটে ক্রেতার কাছে মোটরসাইকেলের বিভিন্ন এঙ্গেলের ছবি পাঠানো হয়। ক্রেতার পছন্দ হলে দরদাম ঠিক করার পর ভুয়া নম্বর প্লেট লাগিয়ে বিক্রি করা হয়।</p> <p> অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজাজ পালসার ও ডিসকভার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল আসছে বেশি। বাংলাদেশের বাজার দরের চেয়ে প্রায় তিনগুণ কম দামে বিক্রি হয় এসব মোটরসাইকেল। বর্তমানে বাজাজ পালসার ৫৫ হাজার, অ্যাপাচি ৮০ হাজার, হিরো হোন্ডা ৩০ হাজার এবং ডিসকভার ৪০ হাজার টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। এর বাইরে জাল রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হয় অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা। দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতা ছাড়াও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকার যুবকরা সস্তায় এসব মোটরসাইকেল কিনে পরে বিক্রি করে মুনাফা লুটছে। তাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদপুষ্ট। এসব টানা গাড়ি ট্রাফিকের হাতে ধরা পড়লে কদাচিৎ মামলা হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টাকার বিনিময়ে রফা হয়ে যায়। অনুসন্ধান মতে, মোটরসাইকেল পাচারকাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বিজিবির লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত গংগারহাটের জয়নাল ও মোজাফফর আলী। অবৈধ এ জমজমাট ব্যবসায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে সীমান্তঘেঁষা কাশিয়াবাড়ীর আবু তালেব, মমিনুল ও নাখারজান (কুড়ার পাড়) এলাকার জাহাঙ্গীর আলম।</p> <p> ফুলবাড়ী থানার ওসি বজলুর রশীদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ভারতীয় ছিটের ভেতর ঢোকার সুযোগ না থাকায় মোটরসাইকেল চোর, মাদক ব্যবসায়ীসহ দুষ্কৃতকারীদের আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও কৌশলে মাঝেমধ্যে মোটরসাইকেল ও মাদক আটক করা হয়।</p> <p> কুড়িগ্রাম বিজিবির কাশিপুর কম্পানির সুবেদার ইমরান নিজামী বলেন, 'মোটরসাইকেল পাচারের সঙ্গে কোনো সোর্স জড়িত থাকলে তাকেও আটক করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি।'</p> <p>  </p> <p>  </p>