<div> অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সংলাপ শুরুর জন্য সরকারকে চাপে রাখার ছুতো খুঁজছে পশ্চিমারা। বিশেষ করে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ না থাকায় এখন তারা সরকারের কাজের দিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পশ্চিমাদের মূল দৃষ্টি এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সরকার কতটা মোকাবিলা করতে পারছে তার ওপর। তাদের আশঙ্কা, ওই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও সামাল দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগাম ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর  চাপ বাড়তে পারে।</div> <div> ঢাকায় পশ্চিমা একটি কূটনৈতিক মিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গত সপ্তাহে কালের কণ্ঠকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজারসহ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় সরকারের নেওয়া প্রতিটি উদ্যোগ এবং এর প্রভাবের দিকে তাঁরা নিবিড় দৃষ্টি রাখছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার প্রভাব আগামী ছয় মাসের মধ্যেই স্পষ্ট হতে পারে। একই সঙ্গে ওই সময় নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর আন্দোলন জোরদার হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।</div> <div> ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখা প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলো এ দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ চায়। তারা চায় না, বড় একটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র পরিচালনা প্রক্রিয়ার বাইরে থাকুক। তাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর একটি ভালো ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে আলোচনার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।</div> <div> ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান বদল না হলেও প্রকাশ ভঙ্গি বদল হয়েছে। ওই দেশগুলোর দূতরা আগের মতো আর সর্বত্র এ নিয়ে কথা বলছেন না। এর কারণ, নতুন নির্বাচনের জন্য সংলাপের তাগিদ দিতে থাকলে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পায়। সরকারও বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয় না। তবে ওই নির্বাচনকে ‘অসাংবিধানিক’ বা ‘অবৈধ’ বলারও কোনো সুযোগ নেই।</div> <div> জানা গেছে, প্রতিবেশী ভারতের জন্যই ওই পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। পশ্চিমা দেশগুলো এ দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করুক এটি ভারত কোনোভাবেই চায় না।</div> <div> সংশ্লিষ্ট একটি কূটনৈতিক সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই ভারত ওই নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সমর্থন করেছে। এখন দেশ কিভাবে চলবে এবং দেশে সুশাসন, আইনশৃঙ্খলা কিভাবে বজায় থাকবে তা এই সরকারের বিষয়।</div> <div> পশ্চিমা সূত্রগুলো বলেছে, ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো- এ কথা তারা বিভিন্ন ফোরামে জোর গলায় বলছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর প্রতিনিধিরা ক্রমাগত তাদের কাছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার নজির তুলে ধরছেন।</div> <div> সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভারতে রাজনৈতিক পালা বদলের পর বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন আসার বিষয়টি অনেকের কাছে প্রত্যাশিত হলেও বাস্তবে তা এখনো ঘটেনি। তবে বাংলাদেশ সরকার ভবিষ্যতে সফলভাবে দেশ চালাতে না পারলে ভারতের ওই নীতি একই রকম থাকবে বলে তারা মনে করে না। সে ক্ষেত্রে ভারতকে নিয়েই পশ্চিমারা বাংলাদেশ বিষয়ে নতুন অবস্থান নিতে পারে।</div> <div> কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার ওপর বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের আচরণ নির্ভর করছে। সরকার সফল হলে পশ্চিমারা নীরব থাকবে বা নির্বাচন নিয়ে যা বলবে তা দেশের ভেতর তেমন গুরুত্ব পাবে না। আর সরকার ব্যর্থ হলে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠবে। সে ক্ষেত্রে বিদেশিদের আবারও কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং তা দেশের জনমতের প্রতিফলনও হতে পারে।</div> <div> এদিকে বাংলাদেশি কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, রাজনৈতিক সংকট তীব্র হলে বিদেশি হস্তক্ষেপ বাড়ে। এটি দেশের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়। বিদেশিরা নয়, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখা উচিত। কারণ বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে পশ্চিমারা যা করেছে তা ওই দেশগুলোর জন্য দীর্ঘ মেয়াদে কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বরং পশ্চিমাদের স্বার্থে ও প্রত্যাশিত মাত্রার গণতন্ত্র চাপিয়ে দিতে গিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাতের ইন্ধন দিয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে এমন নজির আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবেশী ভারতে কোনো বিদেশি দূত ওই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলবেন- এটি কল্পনাও করা যায় না। পাকিস্তানে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের সময়ও কোনো বিদেশি কূটনীতিককে নাক গলাতে দেননি দেশটির রাজনীতিকরা। উপসাগরীয় দেশ বাহরাইন গত জুলাই মাসে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অভিযোগে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক সহকারী মন্ত্রীকে বহিষ্কার করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো দেশে গণতন্ত্র, নতুন নির্বাচনের জন্য বিদেশি চাপের অপেক্ষায় আছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’</div>