<p>ছোট শহরের খাদ্য গুদামটাতে থাকে শত শত ইঁদুর। একে ইঁদুরের ছোটখাটো এক রাজ্য বললেও ভুল হবে না। আছে হরেক রকমের ইঁদুর। এই ধরো গিয়ে ধেড়ে ইঁদুর, বেঁটে ইঁদুর, মোটা ইঁদুর, চিকন ইঁদুর, নেংটি ইঁদুর। কারো কান ছোট তো কারো বা লেজটা লম্বা। যতক্ষণ খাদ্য গুদামটাতে মানুষজনের হাঁকডাক থাকে, ততক্ষণ ওদের দেখাই মেলে না। যেন বাতাসে মিলিয়ে যায়। মানুষের দল বিদায় নিতেই লুকানো জায়গা থেকে পিল পিল করে বের হতে থাকে ইঁদুর। একসময় তো বিশাল এক বাজারই বসে যায় গুদামের খালি জায়গাটায়। তখন তারা একসঙ্গে শুরু করে দেয় কথাবার্তা। কান পাতলে শুধু কিচ কিচ শব্দই শুনতে পাবে। আসলে এভাবেই নিজেদের মধ্যে কথা বলে থাকে ইঁদুরগুলো। সেই ভিড়ের মধ্যে এক নেংটি ইঁদুরকে দেখা গেল বেশ উত্তেজনার সঙ্গে কথা বলছে। শ্রোতা এক ধেড়ে ইঁদুর।</p> <p>‘আচ্ছা, ব্যাপারটা বুঝেছ তো, ধেড়ে মশাই। এখানে পড়ে থাকলে তো না খেয়েই মরতে হবে আমাদের।’</p> <p>‘কেন?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ধেড়ে ইঁদুর।</p> <p>‘কেন আবার। এখানে খাওয়ার মতো তো কিছুই নেই?’</p> <p>‘কেন থাকবে না? চালের গুদামে কি আর খাওয়ার অভাব আছে? চারদিকে শুধু চাল আর চাল। কত খাবে বল?’</p> <p>‘আরে সেটাই তো সমস্যা। চাল খেতে খেতে মুখের স্বাদটাই তো নষ্ট হয়ে গেছে।’</p> <p>‘তাহলে কী খেতে চাও?’</p> <p>‘পিত্জা, বার্গার, শরমা, চায়নিজ...’</p> <p>‘অ্যাঁ বলো কী? ইঁদুরগুলো কি এসব খায় নাকি? আর খেলেও পাবেই বা কিভাবে? শুনেছি বড় বড় শহরের মানুষেরা নাকি ওসব খায়।’</p> <p>‘তাহলে বড় কোনো শহরেই না হয় যাব।’</p> <p>যেই কথা সেই কাজ নেংটি ইঁদুরের। রাতের বাস ধরে সোজা হাজির হলো বিশাল এক শহরে। গন্ধ শুঁকে শুঁকে দিব্যি উপস্থিত হলো এক পিত্জা রেস্তোরাঁয়। আহ! কী সুঘ্রাণ পিত্জার! রেস্তোরাঁর বিশাল বপুর দারোয়ানটার চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল নেংটি। ভেতরটা তাদের ওই গুদামঘরটা মতো গরম না। চারদিকে কেমন হিম হিম ঠাণ্ডা। মনে হলো কোনো এক শীতের রাজ্যে চলে এসেছে ও। এখন নেংটির মাথায় প্রশ্ন এলো, ‘পিত্জার দোকানে তো এসে পড়লাম; কিন্তু পিত্জা খাব কিভাবে?’</p> <p>ওর সামনের এক টেবিলে পিচ্চি কয়েকটা ছেলেমেয়ে বেশ মজা করে পিত্জা খাচ্ছে। ‘এক্সট্রা চিজ’ দেওয়া পিত্জার মন মাতানো গন্ধে এক রকম পাগলই হয়ে গেল নেংটি। এক নিমিষে টেবিল বেয়ে ওপরে উঠে গেল। চোখের সামনে বারো ইঞ্চির পিত্জাটাকে বিশালই মনে হলো ওর। সুইমিংপুলে ড্রাইভ দেওয়ার মতো করে তাতে দিল এক লাফ। আর এটা দেখে পুঁচকে ছেলেমেয়েগুলোর অবস্থা হলো দেখার মতো। চিৎকার করে হাত-পা ছুড়ে পিত্জার দোকানটাকে মাথায় তুলে ফেলল ওরা। কিন্তু সে সবে নজর দেওয়ার মতো সময় কি আর নেংটি ইঁদুরটার আছে? দুই হাতে পিত্জার ছোট ছোট টুকরা ছিঁড়ে সপাটে চালান করে দিচ্ছিল মুখের ভেতর। আহ কী শান্তি! পিত্জা খেতে এত্ত মজা জানলে তো সেই কবেই গুদাম ছেড়ে এখানে আস্তানা গাড়ত। সব কিছু ভুলে পিত্জা খাচ্ছে নেংটি। ফলে খেয়ালই করল না ওর মাথার ওপর বিশাল এক লাঠি উড়ে এসে পড়তে যাচ্ছে। কপাল ভালো ওর। একদম শেষ সময়ে দেখে ফেলায় এ যাত্রা প্রাণে বেঁচে গেল। ভো এক দৌড়ে রেস্তোরাঁর এক কোণে গেল পালিয়ে।</p> <p>ছেলেমেয়েদের হট্টগোলে দোকানের মালিক এসে হাজির। বিষয়টা জানতে পেরে ভীষণ রেগে গেলেন। কর্মচারীদের ওপর রাগ ঝাড়তে থাকলেন, ‘তোমরা করোটা কী? এখানে ইঁদুর আসে কিভাবে? তোমাদের এক ঘণ্টা সময় দিলাম এরই মধ্যে রেস্তোরাঁটাকে ইঁদুরমুক্ত করতে হবে। না হলে সবার চাকরি নট।’</p> <p>হুমকিটা বেশ কাজে লাগল। রেস্তোরাঁর সব কর্মচারীরা ব্যস্ত হয়ে উঠল ইঁদুর মানে নেংটিকে খোঁজার কাজে। খোঁজ চলল টেবিলের নিচে, খোঁজ চলল পর্দার পেছনে, মালপত্র রাখার ঘরে। এমনকি বাদ গেল না রেস্তোরাঁর রান্নাঘরটাও। কিন্তু নেংটিকে কোথাও পাওয়া গেল না। পাওয়া যাবে কিভাবে? ও সেসব জায়গায় থাকলে তো? এখন সে আশ্রয় নিয়েছে রেস্তোরাঁর এক উঁচু দেয়ালে থাকা ওয়াই-ফাই রাউটার মেশিনের পেছনে। মেশিনটার আশপাশটাও বেশ গরম। সেখানে দিব্যি আরাম করে থাকা যাচ্ছে। সেটা না হয় থাকা গেল; কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসা সেটার কী হবে? মনে ভরে তো পিত্জা খাওয়া হচ্ছে না। নিচে ওকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকা রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের দেখে পিত্জা খাওয়াটাকে বেশ কঠিন বলে মনে হতে লাগল। এখন উপায়? ঠিক তখনই মাথায় বুদ্ধিটা এলো। আচ্ছা পিত্জা বানানোর উপায় জেনে গেলেই হয়। তাহলে ফিরে গিয়ে ইচ্ছামতো পিত্জা বানিয়ে খাওয়া যাবে। চুপি চুপি রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে উঁকি দিলেই দেখা গেল পাঁচক মশাই বেশ আয়োজন করে পিত্জা বানাচ্ছেন। ময়দা, ইস্ট, গুঁড়া দুধ, চিনি, তেল, লবণ, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো মরিচ গুঁড়া, মুরগির মাংস, ক্যাপসিকাম কুচি আর পনির দিয়ে তৈরি করা হলো মজাদার পিত্জা। সর্বনাশ, এত্ত সব জিনিস লাগে একটা পিত্জা বানাতে! গুদামঘরে কী আর এত্তসব পাওয়া যাবে? তবে ওখানকার সব ইঁদুরদের সাহায্য পেলে অবশ্য ওর কাজটা সহজ হয়ে যাবে। যেই ভাবনা সেই কাজ নেংটি ইঁদুরের। রেস্তোরাঁ থেকে কোনো রকম জান বাঁচিয়ে ফের সেই গুদামঘরে হাজির হলো নেংটি। ওর পরিকল্পনার কথা বলতেই ইঁদুরদের সব্বাই এককথায় রাজি। নেংটির কথামতো গুদামঘরের আশপাশের বাড়িঘর থেকে সব কিছু জোগাড় যন্ত্র করা হলো। চুলাও বানানো হলো। তাতে বিশাল এক পিত্জা বানাল নেংটি। ওটা খেয়ে কিচ কিচ করে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগল ইঁদুরের দল।</p>