<p>বাংলাদেশে আশ্রিত ২৮৫ মিয়ানমার বিজিপি ও সেনা সদস্যদের আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফেরত পাঠানো হবে। মিয়ানমার থেকে তাঁদের নিতে চিন ডুইন নামের একটি নৌ জাহাজ গতকাল মঙ্গলবার রাখাইনের সিতোয়ে বন্দর ছেড়েছে। ওই জাহাজে করে নিয়ে আসা হচ্ছে ১৭৩ বাংলাদেশি নাগরিককে, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের পানিসীমায় আটক হয়ে কারাভোগ করছিলেন। তাঁদের বহন করা জাহাজটি আজ কক্সবাজারে ইনানী জেটিতে পৌঁছাবে।</p> <p>রাখাইনে কারাভোগ শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসা নাগরিকদের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার, ৩০ জন বান্দরবান, সাতজন রাঙামাটি এবং একজন করে খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার বাসিন্দা রয়েছেন। মিয়ানমার থেকে এটি এযাবত্কালের বাংলাদেশি নাগরিকদের সবচেয়ে বড় পরিসরে প্রত্যাবর্তন। </p> <p>মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়, দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সংখ্যক যাচাইকৃত বাংলাদেশি নাগরিককে দ্রুত ও সহজে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাস মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থানরত ১৪৪ জন যাচাইকৃত বাংলাদেশি নাগরিককে (যাঁদের কারাভোগের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে বা ক্ষমা পেয়েছেন) সিতোয়ে কারাগারে আনার উদ্যোগ নেয়।</p> <p>এ ছাড়া সাাজা ভোগরত আরো ২৯ জন বাংলাদেশিকে সাজা মওকুফ করে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সম্মত হয়। সব মিলিয়ে ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিকসহ মিয়ানমারের জাহাজ চিন ডুইন গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিতোয়ে বন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়। ওই জাহাজে করে বাংলাদেশে আশ্রিত ২৮৫ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে পরের দিন বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।</p> <p>সর্বশেষ গত বছর ৩ অক্টোবর দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারে কারাভোগ শেষ করা ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে পাঠানো হয়। ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট, সিতোয়ে সেই প্রত্যাবাসনের পর থেকেই মিয়ানমারে অবশিষ্ট বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে পাঠাতে নিরলস কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশ দূতাবাস, ইয়াঙ্গুন এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট, সিতোয়ের প্রতিনিধিরা কয়েক দিন ধরে সশরীরে অবস্থান করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়, যাচাইকরণ প্রক্রিয়া পরিচালনা এবং প্রত্যাবর্তনকারীদের ভ্রমণের অনুমতি (ট্রাভেল পারমিট) প্রদান সংক্রান্ত কাজ করেছেন।</p> <p><strong>রাখাইনে ব্যাপক গোলাগুলি</strong><br /> মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহরের দক্ষিণে আরাকান আর্মি ও জান্তা সমর্থিতদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বোমা বিস্ফোরণ ও গুলির ভারী শব্দ শোনা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত থেকে এসব শব্দ শোনা যায়। এর আগে টেকনাফ সীমান্তে গত রবিবার রাতে রাখাইনে গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। </p> <p>শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমারে প্রচুর গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। মর্টার শেল ও বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দও শোনা গেছে। মংডু শহরের দক্ষিণের এলাকাগুলোতে এসব ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যে মর্টার শেলের বিকট শব্দে আমাদের বাড়িঘর কেঁপেছে। সীমান্তের ওপারে এ ধরনের গোলাগুলি এর আগে সপ্তাহখানেক বন্ধ ছিল।</p> <p>সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের গোলাগুলির ভারী শব্দ শুনেছে লোকজন। বিভিন্ন সীমান্ত থেকে লোকজন বলেছে, তারা মর্টার শেল ও বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনেছে।</p>