<p>২৬. সুতরাং আহার করো, পান করো ও চক্ষু জুড়াও। মানুষের মধ্যে কাউকে যদি তুমি দেখো, তাহলে বলো—আমি দয়াময়ের উদ্দেশে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করব না। [সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৬ (দ্বিতীয় পর্ব)]।</p> <p>তাফসির : মানুষের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য মারিয়াম (আ.)-কে চুপ থাকার রোজা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ ধরনের রোজার বিধান আগের ধর্মে ছিল। ইসলামে এ ধরনের বিধান নেই। এমনকি ইসলাম ধর্মে তিন দিনের বেশি কারো সঙ্গে কথা বন্ধ রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।</p> <p>আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা পরস্পর সম্পর্কচ্ছেদ কোরো না, একে অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, পরস্পর হিংসা কোরো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখা বৈধ নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৬; মুসলিম ২৫৫৯)।</p> <p>এ বিষয়ে আয়েশা (রা.)-এর একটি কথা হাদিসের গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। আউফ ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, কিছু লোক এসে আয়েশা (রা.)-কে বলল, আপনি যে অমুক জিনিস বিক্রি করেছেন কিংবা কাউকে দান করে দিয়েছেন, এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) বলেছেন, ‘যদি খালাম্মা আমার কথা না মানেন, তাহলে আমি তাঁর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে দেব। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আয়েশা (রা.)-কে যে পরিমাণ ভাতা দেওয়া হয়, তা কমিয়ে দিয়ে শুধু খরচ চালনার পরিমাণ অর্থ দেব।’ আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করেন, ‘সে কি এ কথা বলেছে?’ লোকেরা বলল, হ্যাঁ, তিনি এ কথাই বলেছেন। অতঃপর আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, ইবনে জুবাইরের সঙ্গে আর কখনো কথা বলব না।’ এরপর তিনি তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকে। ইবনে জুবাইর (রা.) আয়েশা (রা.)-এর কাছে সুপারিশকারী পাঠিয়েছেন। কিন্তু আয়েশা (রা.) কারো কোনো সুপারিশ মানতে চাননি এবং শপথও ভাঙতে চাননি। বিষয়টি ইবনে জুবাইরের (রা.) জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। পরে আয়েশা (রা.)-কে ওই হাদিস স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, যে হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন দিনের বেশি কোনো মুসলমানের সঙ্গে রাগ করে কথা বলা বন্ধ রাখা বৈধ নয়।’ সবাই মিলে আয়েশা (রা.)-কে জোর দিয়ে বলে যে আপনি যা করছেন সেটা গুনাহ। তখন তিনি কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, ‘আমি কসম খেয়ে ফেলেছি এবং কসম অত্যন্ত কঠিন বিষয়।’ শেষ পর্যন্ত তিনি কসম ভঙ্গ করে ইবনে জুবাইরের সঙ্গে কথা বলেন এবং কসমের কাফফারাস্বরূপ ৪০ জন দাস মুক্ত করে দেন। পরবর্তী জীবনে আয়েশা (রা.) তাঁর এ ভুলের কথা মনে হলেই কাঁদতেন এবং এত বেশি পরিমাণে কাঁদতেন যে চোখের পানিতে তাঁর ওড়না ভিজে যেত।</p> <p>গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ</p>