<p>ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ নতুন দিল্লি যাচ্ছেন। ২০০৯ সালের পর এটি শেখ হাসিনার দ্বিতীয় ভারত সফর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের এমন সফর নিয়মিত হয়ে থাকে। চরম বৈরী সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান গেছেন এবং একইভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও ভারত সফর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির মধ্যে এ মুহূর্তে রাষ্ট্রীয় সম্পর্কে ভাটা পড়েছে, তথাপি কয়েক দিন আগে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ওয়াশিংটন সফরে গিয়েছিলেন। সাংবাদিকরা ট্রাম্প আর মার্কেলের ছবি তোলার সময় বেশ উচ্চকণ্ঠে ট্রাম্পকে অনুরোধ করছিলেন মার্কেলের সঙ্গে করমর্দন করতে। কিন্তু ট্রাম্প সব শিষ্টাচারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মার্কেলের সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকার করেন। ভারতের কোনো সরকারপ্রধান বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এলে অথবা বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধান ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলে উভয় দেশের মিডিয়া, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আর এক শ্রেণির সুধী ব্যক্তির মধ্যে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়, আলোচনা-সমালোচনা হয় আর বাংলাদেশের সরকারপ্রধান যদি শেখ হাসিনা থাকেন, এসবের মাত্রাটা অনেক বেশি হয়। বিএনপি-জামায়াত বেশ চড়া গলায় বলে, শেখ হাসিনা যাচ্ছেন বাংলাদেশের স্বার্থ ভারতের হাতে তুলে দিতে। তাদের মধ্যে আবার কেউ আছে, যাদের ধারণা আগেরবার না করলেও এবার শেখ হাসিনা ভারতের কাছে দাসখত লিখে দিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্য বানিয়ে দিয়ে আসবেন। যারা নির্মোহভাবে চিন্তা করে তারা প্রত্যাশা করে, শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যে যেসব অমীমাংসিত সমস্যা আছে তা শেখ হাসিনা সমাধান করতে পারবেন। শেখ হাসিনার ওপর তাদের বিশ্বাস আকাশচুম্বী। কারণ তাঁর <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2017/Print-2017/April/07-4-2017/kalerkantho_com-07-04-17-20.jpg" style="float:left; height:308px; margin:8px; width:400px" />আমলে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয়েছে। দীর্ঘদিনের গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তিও তিনি করেছেন। আর ৬০ বছরের পুরনো অমীমাংসিত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি করে তিনি নিজের অবস্থান অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সমস্যাটি ভারত ভাগের পর থেকে শুরু হলেও তা বঙ্গবন্ধু আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির বলে অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুমোদিত না হওয়ায় তা বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লেগেছে। একই ধারাবাহিকতায় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ চুক্তিও এই দুই প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কারণে বাস্তবায়িত হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে গঙ্গার পানিবণ্টন সমস্যার মধ্যমেয়াদি সমাধান করেন। এ মুহূর্তে ভারত হয়তো বাংলাদেশের কাছে অনেক কিছুই চায়; অন্যদিকে ভারতের কাছে বাংলাদেশের চাওয়ার তালিকা খুব বেশি দীর্ঘ নয়।</p> <p>ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ধরন ও মাত্রা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ভিন্নমাত্রিক। এর প্রধান কারণ এ দুই দেশ একসময় অবিভক্ত ভারতবর্ষের অংশ ছিল। দুটি দেশই ২০০ বছর ধরে ইংরেজদের দ্বারা শাসিত, লুণ্ঠিত ও শোষিত হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও সে দেশের জনগণের অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কমপক্ষে ১২ হাজার ভারতীয় সেনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। বাংলাদেশ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হওয়ার তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বাধীনতাপরবর্তীকালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ভারত যথাসাধ্য সহায়তা করেছে। শুরুতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম সমস্যা ছিল অভিন্ন গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন, যেটির উৎপত্তি উজানে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে হয়েছিল। সেই সমস্যার স্বল্পমেয়াদি সমাধান বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দিল্লিতে চুক্তি করে গিয়েছিলেন। নিশ্চিত করেছিলেন বাংলাদেশ শুষ্ক মৌসুমে কমপক্ষে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি পাবে। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য গঠিত হয়েছিল যৌথ নদী কমিশন। তবে ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর এ কমিশন তেমন একটা কাজ করেনি।</p> <p>বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়ার আমলে সৃষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালি অশান্তি ও রক্তক্ষরণ শুরু হলে তা-ও সমাধান করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এর ফলে ভারতে অবস্থানরত ক্ষুদ্রজাতির কয়েক হাজার মানুষ বাংলাদেশে ফিরে আসে। বেগম জিয়া যখনই ক্ষমতায় এসেছেন তখনই বাংলাদেশকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়াশ্রম হিসেবে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহের করিডর খোলার ব্যবস্থা সুগম করেছেন। সংসদে দাঁড়িয়ে বেগম জিয়া সরকারের আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বেশ জোর দিয়ে বলেছেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলে যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করছে তারা আসলে তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে এবং বাংলাদেশের উচিত তাদের এই ‘আন্দোলন’কে নৈতিক সমর্থন দেওয়া; যেমনটি ভারত বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালে করেছিল। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নানা কারণে ভারত আর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় তাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। এটি সচরাচর ঘটে না। এরই মধ্যে উভয় দেশের কোনো কোনো পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করতে চায়। বর্তমান বিশ্বে এক দেশের আরেক দেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করা অর্থহীন। সামরিক চুক্তির মূল বিষয় হচ্ছে একটি দেশ অন্য কোনো দেশ কর্তৃক আক্রান্ত হলে দ্বিতীয় দেশ তার সহায়তায় এগিয়ে আসবে। ষাটের দশকের ঠাণ্ডা লড়াইয়ের (cold war) সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিয়ে গঠন করে ওয়ারশ প্যাক্ট, আর যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে গঠন করে ন্যাটো। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়ার পর ওয়ারশ প্যাক্ট ভেঙে যায়। ন্যাটো কখনো তেমন করে ওয়ারশ প্যাক্টভুক্ত দেশগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তবে বলকান যুদ্ধের সময় সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ভেঙে যাওয়ার মুহূর্তে সেই অঞ্চলে যে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা বন্ধ করতে ন্যাটো বিমান হামলা চালিয়েছিল। ঠিক একইভাবে ন্যাটো ইরাক, মিসর আর লিবিয়া ধ্বংস করতে নিজেদের সমরশক্তি ব্যবহার করেছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কোনো সামরিক চুক্তি নিরর্থক। কারণ অদূর ভবিষ্যতে এ দুই দেশের কোনো দেশেরই কোনো যুদ্ধে জড়ানোর আশঙ্কা নেই। ভারতের সঙ্গে সীমিত আকারে পাকিস্তানের সীমান্ত সংঘর্ষ হতে পারে আর তা যদি হয়, তাতে বাংলাদেশের তেমন একটা কিছু করার নেই। উত্তরে চীনের সঙ্গেও ভারতের তেমন কোনো সমস্যা নেই। আবার বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনার সফরের সময় যে কয়টি সমঝোতা চুক্তি হতে পারে তার একটি হচ্ছে সামরিক সহায়তা চুক্তি। একটি কথা বলে রাখা ভালো, সমঝোতা চুক্তি মেনে চলা আবশ্যকীয় নয় (non-binding)। এ চুক্তি হলে দুই দেশের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান, যৌথ সামরিক মহড়া, যৌথ প্রশিক্ষণ, সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় হতে পারে। প্রথম দুটি কোনো সমঝোতা চুক্তি ছাড়াও ভারত ও অন্যান্য একাধিক দেশের সঙ্গে হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বা নৌবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের নিয়মিত যৌথ মহড়া হয়ে থাকে। ভারতেও অন্যান্য দেশের সঙ্গে তেমন মহড়া হয়ে থাকে। সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের বিষয়টি একটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও সুচিন্তিত বিষয় হিসেবে বিবেচিত। কোনো দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী একসঙ্গে অনেক দেশ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে না। একটি বা দুটি দেশের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়, তার কারণ তা রক্ষণাবেক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশের প্রাপ্যতা ও তা ব্যবহার করা সহজ হয় অথবা নিজেরা তা তৈরি করে, যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া তার বড় প্রমাণ। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে যেসব সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার হয়ে আসছে তা রাশিয়ার তৈরি (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন)। পরে চীন যোগ হয়েছে। গাজীপুরে যে সমরাস্ত্র কারখানা রয়েছে সেখানে মূলত চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হঠাৎ করে ভারতীয় সামরিক সরঞ্জাম বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সংযুক্ত করা ততটা সহজ হবে না। এটি বোঝার সক্ষমতা নিশ্চয় শেখ হাসিনার রয়েছে। সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে সামনের মাস থেকেই বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় শুরু করবে অথবা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে কোনো সংঘাত শুরু হলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে হাজির হবে।</p> <p>বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার আশু সমাধান হওয়া প্রয়োজন তার মধ্যে আছে অভিন্ন ৫৪টি নদীর, বিশেষ করে তিস্তার পানিবণ্টন, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক মানুষ হত্যা আর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশাল তিস্তা নদী এখন সম্পূর্ণ মরুভূমি। এ সমস্যা সমাধানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি আছে বলে মনে হয় না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁকে বসলে তা ভেস্তে যায়। বলা হয়, ভারত যেহেতু একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, সেহেতু পানির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ অন্য যেকোনো দেশের সঙ্গে বণ্টন করতে চাইলে যে রাজ্য এ সম্পদের ভাগীদার, সেই রাজ্যের সরকারের সম্মতি লাগবে। এটি একটি খোঁড়া যুক্তি। কারণ ভারতের সংবিধানেই আছে, তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট (ধারা ২৪৫)। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের একরোখা মুখ্যমন্ত্রী তা মানতে নারাজ। তিনি বলেছেন, তাঁর রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করে যা করা প্রয়োজন, তা করা হবে। ন্যায্য কথা। কিন্তু তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তাঁর কথার মূল্য দিতে তিনি নিজেই নারাজ। বলতে পারতেন, যে পানি তিস্তায় আছে তার কতটুকু পেলে তাঁর রাজ্যের প্রয়োজন মিটবে, তারপর কতটুকু বাংলাদেশকে দেওয়া যাবে তা হিসাব করে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হতে পারে।  তিনি এই হিসাব-নিকাশ তো করতেই পারেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ধারেকাছে যান না। আবার বাংলাদেশ নিজের দেশের ভেতর গঙ্গা বাঁধ করতে চাইলে তিনি বলেন এমন বাঁধ করতে দিতে পারেন না। তিনি কি জানেন চীন এরই মধ্যে উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছে। তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে ভারত ও বাংলাদেশে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ বিষয়ে কথা বলার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না। চিন্তা করে দেখতে পারেন কথাটা কতটুকু সত্য। বাংলাদেশ আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরাকে বিদ্যুৎকন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের সুযোগ করে দিয়েছে। পরিবহনের সুবিধার্থে বাংলাদেশের একটি নদীর ওপর অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছে। আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে কলকাতা বন্দর থেকে নিয়মিত ভারতীয় পণ্য পরিবহন করা হয়। এ ছাড়া আছে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের সাহায্যে ভারতীয় পণ্য ভারতের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পরিবহনের সুযোগ। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে যে জেলাগুলো আছে, সেসব জেলার বিরাটসংখ্যক মানুষ মৌলবাদী ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী। বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোর প্রতি বাড়িতে এখনো দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বয়ানের ক্যাসেট বেশ সমাদৃত। এসব জেলায় সন্ত্রাসনির্ভর উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ বেশ সক্রিয়। তারা নিয়মিত সহায়তা পেত  বাংলাদেশের জঙ্গিদের কাছ থেকে, যা এখন শেখ হাসিনার সদিচ্ছার কারণে বন্ধ হয়েছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর দিল্লিকে বুঝতে হবে, আর কিছু না হোক, ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ রাখা একান্তভাবে জরুরি। এ সম্পর্ক শেখ হাসিনার সরকারের আমলে যতটুকু উষ্ণ রাখা সম্ভব, অন্য কোনো সরকারের আমলে তা সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার আসন্ন সফরের সময় তা হলেও দ্রুততম সময়ে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি অনিবার্য হয়ে পড়েছে। আগামী বছর বাংলাদেশে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। ভারত নিশ্চয় চাইবে না যে সরকার তার দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের  মুক্তিসংগ্রামী মনে করে, তারা এ তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসে তা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করুক। ড. মনমোহন সিং একজন শিক্ষিত, মার্জিত কিন্তু দুর্বল প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কারণ তিনি সব সময় সোনিয়া গান্ধীর ছায়াতলে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। সেদিক দিয়ে নরেন্দ্র মোদি অনেক বেশি শক্তিশালী। সদ্যঃসমাপ্ত বেশ কিছু রাজ্যসভা নির্বাচনে, উত্তর প্রদেশসহ তাঁর দল বিজেপি বিজয়ী হয়েছে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি তাঁর ও শেখ হাসিনার শাসনামলে না হলে অন্য সময় হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে। এই একটি সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়ে গেলে অন্য সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা তেমন একটা কঠিন হবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।</p> <p> </p> <p><strong>লেখক :</strong> বিশ্লেষক ও গবেষক</p>