<p>চালক সিটবেল্ট বাঁধেননি। এ কারণে গাড়ি থামিয়ে হুমকি-ধমকি ও মামলা দেওয়া হয়। এক চীনা নাগরিক হাত জোড় করে ক্ষমা চান। এর পরও তাঁদের হেনস্তা করেন কক্সবাজারের রামু তুলাবাগান হাইওয়ে পুুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল।</p> <p>গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় কক্সবাজার শহরতলির লিংক রোড বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। এর নেপথ্যে পুলিশের ‘টোকেন বাণিজ্যে’র অভিযোগ পাওয়া গেছে।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) সানসাইন গ্রুপের কর্মকর্তা চার চীনা নাগরিক গতকাল একটি প্রাইভেট কারে কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। সকাল ১১টায় প্রাইভেট কারটি লিংক রোড বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে। রামু তুলাবাগান হাইওয়ে পুলিশের এসআই সাইফুলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ কারটিকে চ্যালেঞ্জ করে। চালক কামাল উদ্দিন গাড়ি থামিয়ে যাবতীয় কাগজপত্র দেখান। এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি এসআই। চার যাত্রী ও চালক কেন সিটবেল্ট বাঁধেননি এ অজুহাত তুলে তাঁদের গাড়ি থেকে নামতে বাধ্য করেন। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটির বিরুদ্ধে মামলা করেন। গাড়িটি আটকও করেন।</p> <p>এ ঘটনায় হতবিহ্বল চীনা নাগরিক হাত জোড় করে ক্ষমা চান। এসআই ইংরেজিতে উল্টো তাঁদের আইনের মারপ্যাঁচের কথা বলেন। এরপর চার চীনা নাগরিক অন্য ট্যাক্সিতে করে শহরে ঢুকতে চাইলে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখিয়ে এসআই বাধা দেন। একজনকে হাত দিয়ে ধাক্কাও মারেন। তাঁদের সাময়িক জিম্মি করে রাখেন। এ সময় চীনা নাগরিকরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানোর কথা বললে এসআই সাইফুল ‘পুলিশের আইজিও আমাকে কিছু করতে পারবেন না’ বলে সাফ জানিয়ে দেন। প্রায় আধাঘণ্টা ধস্তাধস্তির পর প্রাইভেট কারসহ চীনা নাগরিকদের ছেড়ে দেন এসআই।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, রামুর তুলাবাগান ফাঁড়ি হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের অধীন। এ সুযোগে লিংক রোড বাসস্ট্যান্ডসহ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ও টেকনাফ সড়কে অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করেন ফাঁড়ির কর্তারা। এ ছাড়া মহাসড়কে প্রতিটি গাড়িতে হাইওয়ে পুলিশের টোকেন বাণিজ্য চলে। নির্ধারিত টাকা দিয়ে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলতে হয়। গাড়িটি যেহেতু চট্টগ্রাম থেকে আসা তাই এ গাড়ি থেকে ফাঁড়ি কোনো সুবিধা পায়নি। তাই তারা গাড়িটি আটকে দেয়। শেষ পর্যন্ত গাড়িটি কক্সবাজারে ঢুকতে না দেওয়া, এ অবৈধ টোকেন বাণিজ্যের প্রমাণ দেয়।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী পরিবহন শ্রমিক মিন্টু বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের রেকর্ড পরিমাণ অর্থনৈতিক চুক্তির স্বাক্ষর হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানে পুলিশের এই অসাধু কর্মকর্তার বেপরোয়া কাণ্ড বাংলাদেশের ব্যাপারে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক ধারণা জন্মাবে।’</p> <p>আরেক প্রত্যক্ষদর্শী কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের সদস্য আনোয়ার বলেন, ‘এসআই সাইফুল চীনা নাগরিকদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, সেটা অপরাধ।’</p> <p>ঝিলংজা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাকের হোসেন সওদাগর বলেন, ‘রামু তুলাবাগান হাইওয়ে পুলিশের নিত্যদিনের আচরণ দেখলে মনে হয় মগের মুলুকে বাস করছি।’</p> <p>অভিযোগ অস্বীকার করে হাইওয়ে পুলিশের এসআই সাইফুল বলেন, ‘আমি কক্সবাজারমুখী প্রাইভেট কারটি থামিয়ে সিটবেল্ট না বাঁধায় যথারীতি মামলা করি চালকের বিরুদ্ধে। চাইনিজরা পরে গাড়ি থেকে নেমে আমার সঙ্গে কিছুটা বিবাদে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে এক চাইনিজ আমার কাছ থেকে গাড়ির কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে যান।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রাইভেট কারের যাত্রীদের প্রথমে চাকমা মনে করেছিলাম। পরে টের পাই, তাঁরা চীনা নাগরিক। ততক্ষণে ঘটনা ঘটে গেছে।’</p> <p>কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের তুলাতলী হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে কী ঘটনা ঘটেছে, আমাকে জানানো হয়নি। আমি এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’</p>