<p>কক্সবাজারের পেকুয়ায় সংরক্ষিত বনের ভেতর শ্যালো মেশিন ও ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল একটি চক্র। খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে চার লাখ ছয় হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করে বন বিভাগ। পরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে পরিবেশের ক্ষতিসাধনের দায়ে বন আইনে মামলাও করে বন বিভাগ। এ নিয়ে দুই পক্ষে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ২৫ মে বারবাকিয়া রেঞ্জের টৈটং বনবিটের মধুখালী (চকরিয়ার হারবাং রিজার্ভ এলাকা) সংরক্ষিত বনের গহিন জঙ্গল থেকে ওই বালু জব্দ করেন বিট কর্মকর্তা জমির উদ্দিন। অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের জব্দ করা সেই বালু সম্প্রতি ফের ভ্রাম্যমাণ আদালতের জব্দ দেখিয়ে তা নিলামে বিক্রির জন্য দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম। এ নিয়ে বন বিভাগ ও ইউএনওর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।</p> <p>বন বিভাগ জানায়, সংরক্ষিত বনের ভেতর থেকে বন বিভাগের জব্দ করা বালু বিক্রির জন্য নিলাম প্রক্রিয়া শুরু না করতে এরই মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা পেকুয়া ইউএনওকে একটি চিঠিও দিয়েছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, সংরক্ষিত বনের ভেতর থেকে জব্দ করা বালু বের করা হলে সেখানকার জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। তা ছাড়া সংরক্ষিত বনের কোনো কিছু নিলাম দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হয়।</p> <p>বন বিভাগের দাবি, যে সিন্ডিকেট সংরক্ষিত বনের ভেতর শ্যালো মেশিন ও ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে, তারা দাগি অপরাধী। সেখানে হত্যা মামলার আসামির পাশাপাশি একাধিক বন মামলার আসামিও রয়েছে। মূলত এসব অপরাধীর ইন্ধনেই পেকুয়ার ইউএনওর মাধ্যমে বন বিভাগের জব্দ করা বালু নিলামে তুলে মোটা অঙ্কের টাকা ভাগবাটোয়ারার চেষ্টা করছে প্রভাবশালী একটি চক্র।</p> <p>এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক বলেন, ‘বন বিভাগের জব্দ করা বালু চাইলেই উপজেলা প্রশাসন নিলামে তুলতে পারে না। কারণ বনজ দ্রব্য নিলামে তুলতে গেলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু গায়ের জোরে পেকুয়ার ইউএনও বন বিভাগের জব্দ করা বালু নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, যা বন আইনের মধ্যে পড়ে না।’</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় পরিবেশ সচেতন একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘বন বিভাগের জব্দ করা বালুর বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক কোটি টাকা। কিন্তু ইউএনওকে হাত করে বালুদস্যুরা নিলামে অংশ নিয়ে সেই বালু নামমাত্র মূল্যে হাতিয়ে নেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে।’ চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যেহেতু সংরক্ষিত বনের ভেতর থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে, তাই এই বালু আমরা নিলামে তুলব না। যদি তোলা হয় তাহলে সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ক্ষতি হবে। যদি নিলাম দেওয়া হয় তাহলে বালুদস্যুরা ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওই জায়গা থেকে ফের অবৈধ পন্থায় বালু তুলবে।’</p> <p>চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) বিপুল কৃষ্ণ দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন বিভাগের জব্দকৃত বালু চাইলেও অন্য কোনো সরকারি দপ্তর নিলামে তুলতে পারে না। এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলতে ডিএফওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’  তবে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেই ওই বালু জব্দ করা হয়েছে। এ নিয়ে বন বিভাগ কী বলছে, না বলছে, তা আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই আগামী সপ্তাহে এসব বালু নিলামে তোলা হবে।’</p>