ভারতনির্ভর নতজানু ও মিথ্যা পররাষ্ট্রনীতি থেকে বের হয়ে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি গড়তে হবে। বাংলাদেশকে যেন কেউ নজরদারি করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। দেশের জোড়াতালি দেওয়া তথ্যের অর্থনীতি থেকে বের হতে হবে। নয়া অর্থনীতি ছাড়া নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সংলাপ
সমতা-ন্যায্যতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি
- বাংলাদেশ হবে এই অঞ্চলের গণতন্ত্রের বাতিঘর
- নতুন অর্থনীতি ছাড়া নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে না
- ভারত ও মায়ানমার ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য ঠিক করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক) আয়োজিত এক সংলাপে এসব কথা উঠে আসে। দিনব্যাপী ‘গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি : নতুন দিগন্তের সন্ধানে’ শীর্ষক সংলাপের বিভিন্ন সেশনে ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নানা বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন বক্তারা।
গতকালের তৃতীয় সেশনে বিষয় ছিল ‘ফ্লারিশিং ইকোনমিকস অব দ্য বে অব বেঙ্গল : দ্য রোল অব ইয়ুথ ইন শেপিং ফরেন পলিসি’।
জানাকের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আকরাম হোসেন বলেন, দেশের নয়া অর্থনীতি ছাড়া নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। দেশের সব মানুষের জন্য ন্যায্য পদ্ধতি, ন্যায্য বিচার ও ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ভারত ও মায়ানমার বিষয়ে দেশে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের পরিবর্তন ভারত এই মুহূর্তে হজম করতে পারছে না।
গতকাল শেষ সেশনে অনুষ্ঠিত হয় ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস : বাংলাদেশ’স এনগেজমেন্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি’ শীর্ষক সংলাপ। সেখানে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্রকে শুধু এক দিনের ভোটের গণতন্ত্র হলে হবে না। এটিকে দেশের মানুষের প্রতিদিনের গণতন্ত্রে রূপান্তর করতে হবে। বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা কিছু রি-অ্যাক্টিভ কায়দায় পরিচালিত হয়। অর্থাৎ ধাক্কা দিলে নড়েচড়ে বসে। বাংলাদেশে অনেক মডেল তৈরি হয়, কিন্তু সেটি ডকুমেন্ট করতে ব্যর্থ হয়। এ ছাড়া সেটিকে বৈশ্বিকভাবে দেখাতে পারি না।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, ‘হাসিনাকে যারা তৈরি করেছে বা হাসিনার আশপাশে যারা ছিল, সেসব মানুষ এখনো এই সমাজে রয়ে গেছে। ভারতকে কোনোভাবেই তোষামোদ করার প্রয়োজন দেখি না।’
জানাকের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা বলেন, দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে গেলে আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। আন্তর্জাতিক চুক্তির নামে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সত্যের ভিত্তিতে হতে হবে। জোড়াতালির পরিসংখ্যান দেখিয়ে অর্থনীতিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশ হবে এই অঞ্চলের গণতন্ত্রের বাতিঘর। বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়স্থল।
গতকালের সংলাপের প্রথম সেশনের বিষয় ছিল ‘গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর পররাষ্ট্রনীতির গতিমুখ’। সেখানে বক্তারা বলেন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে একটি জনবান্ধব পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করতে হবে। ততৃীয় বিশ্বের মুখপাত্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ ও দক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গড়তে হবে।
গতকালের সংলাপে প্রথম সেশনে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী আশরাফ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জানাকের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতি সম্পাদক আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, জানাকের কেন্দ্রীয় সদস্য মনিরা শারমিন।
জানাকের আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে বিশ্বমানচিত্রে প্রভাব রাখা এবং সেটা দক্ষিণ এশিয়ায় কতটা নেতৃত্ব দিতে পারবে, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে হবে। সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষ বসানো যায়নি। বাহাত্তরে একটি দেশের কাছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বেচে দেওয়া হয়। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানো যায়নি। তাই ভারতের বিরুদ্ধে সারা দিন স্লোগান দিলেও কাজ হবে না, বরং ফ্যাক্ট (তথ্য) নিয়ে কথা বলতে হবে।
এ এস এম আলী আশরাফ বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন প্রপাগান্ডা হচ্ছে, এখানে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। বিষয়টাকে খুব সাবধানে দেখতে হবে। উগ্রবাদ নিয়ে বাইরে কোনো উদ্বেগ আছে কি না, সে বিষয়গুলো পররাষ্ট্রনীতিতে বিবেচনায় আনতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স