<p>বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০১৭ সালের হজ মৌসুমে হজ কার্যক্রম পরিচালনায় অনিয়মের অভিযোগে ৩৭টি এজেন্সির সঙ্গে চলতি বছর হজসংক্রান্ত কোনো আর্থিক লেনদেন না করতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ৩৫টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১৭টি এজেন্সির হজ লাইসেন্স বাতিল ও ছয়টি এজেন্সির লাইসেন্স বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত করা হয়েছে। এই ২৩টি এজেন্সিকে আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে। আর ১২টি এজেন্সিকে শুধুই আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা না দিলে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।</p> <p>এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাজিরা হলেন আল্লাহর মেহমান। এই আল্লাহর মেহমানদের নিয়ে যারা অনিয়ম করবে তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আগে যারা অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্য দিয়েই এই কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে।’</p> <p>হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি আবদুস সোবহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাজিদের নিয়ে যদি কোনো এজেন্সি অনিয়ম বা দুর্নীতি করে, আর তা যদি প্রমাণিত হয় তবে তাদের হাব থেকে সদস্য পদ বাতিল করা হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা অনিয়ম করে তাদের বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে, এটা সবারই কাম্য। তবে সেটা লাইসেন্স বাতিল করার মতো সিদ্ধান্ত যেন না হয়। সাময়িক সময়ের জন্য তাদের কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়াকেই আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করি।’</p> <p>যেসব হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল</p> <p>চট্টগ্রামের আল আমানত ট্রাভেলস (লাইসেন্স নম্বর-১১), রাজধানীর উত্তরার আল-হাজ ট্রাভেল ট্রেড (লাইসেন্স নম্বর-১৮), বনানীর ব্রাইট ট্রাভেলস (লাইসেন্স নম্বর-৪২), মতিঝিলের বুশরা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (লাইসেন্স নম্বর-৫৬৬), শ্যামপুরের আল-বারী ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-৬৩৫), ফকিরাপুলের ক্লাব ট্রাভেল সার্ভিস (লাইসেন্স নম্বর-৭২০), নয়াপল্টনের মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ (লাইসেন্স নম্বর-৯২৫), বিজয়নগরের মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন (লাইসেন্স নম্বর-১০৪১), মতিঝিলের রয়েল তাইয়েবা এভিয়েশন (লাইসেন্স নম্বর-১১২৬), ফকিরাপুলের এস আহমেদ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স নম্বর-১১৩০), পুরানা পল্টনের সাঈদ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-১১৪৫), নয়াপল্টনের সোহারাদা ওয়াহেদ এয়ার ট্রাভেলস (লাইসেন্স নম্বর-১২১৪), পুরানা পল্টনের সুহাইল এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-১২৩৫), নয়াপল্টনের দি মাক্সজিম ট্রাভেলস এজেন্সি অ্যান্ড ট্যুরস (লাইসেন্স নম্বর-১২৬৫), পুরানা পল্টনের ইউরো এশিয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (লাইসেন্স নম্বর-১৩৫৩), মিরপুরের দারুসসালাম রোডের হাজী হাফেজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (লাইসেন্স নম্বর-১৩৫৮) এবং আগারগাঁওয়ের শাওবন এয়ার ট্রাভেলসের (লাইসেন্স নম্বর-১৪৩০) লাইসেন্স বাতিল করেছে সরকার।</p> <p>একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আল আমানত, বুশরা, মেসার্স জামান, মদিনা, সাঈদ, সুহাইল, দি মাক্সজিম, ইউরো এশিয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের জামায়ানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত হিসেবে সুহাইল এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে তিন লাখ টাকা জরিমানা, দি মাক্সজিমকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা, মদিনা এয়ারকে ১০ লাখ টাকা জরিমানার সঙ্গে ২৮ জন হাজির টিকিটের টাকা, মক্কা ও মদিনায় থাকার খরচ ও গাড়ি ভাড়া হিসেবে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল-হাজ ট্রাভেল ট্রেডকে ১৭ লাখ টাকা জরিমানা, ব্রাইট ট্রাভেলসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানার সঙ্গে তিনজন হজযাত্রীর টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ ও প্রতিষ্ঠানের মালিক রেজাউল করিম উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য গ্রাহকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আল-বারী ট্রাভেলসকে ১০ লাখ টাকা, ক্লাব ট্রাভেলকে পাঁচ লাখ টাকা, রয়েল তাইয়েবাকে পাঁচ লাখ টাকা, এস আহমেদ ট্যুরসকে সাত লাখ টাকা, সোহারাদা ওয়াহেদ এয়ারকে ১০ লাখ টাকা, হাজী হাফেজ ট্রাভেলসকে ১০ লাখ টাকা এবং শাওবন এয়ারকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।</p> <p>যেসব এজেন্সির সঙ্গে লেনদেন করতে মানা</p> <p>লাইসেন্স বাতিল করা ১৭টি এজেন্সিসহ ৩৭টি এজেন্সির সঙ্গে চলতি বছর হজসংক্রান্ত বিষয়ে লেনদেন না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাকি ২০টি এজেন্সি হলো কলম্বিয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, মিরপুরের (সেনপাড়া) সানজিদ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-১২৯), আল জিয়ারত ইন্টারন্যাশনাল, অ্যাসুরেন্স এয়ার সার্ভিস, মিডিয়া ট্রাভেলস সার্ভিসেস লিমিটেড, গোল্ডেন ট্রাভেলস অ্যান্ড কার্গো সার্ভিসেস, আল-হায়াত এভিয়েশন, সেন্ট্রাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, হিজল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রেডস, ইব্রাহিম ট্রাভেলস, জিয়ারত-ই-কাবা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, এম এ এম ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মেসার্স এভারগ্রিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মাবরুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, পুরানা পল্টনের মেসফাল্লাহ ট্রাভেলস (লাইসেন্স নম্বর-১০১৮), শুয়াইব এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাউথ এশিয়ান ওভারসিজ নেটওয়ার্ক, জেটওয়ে ট্রাভেল, হোলি দারুন-নাজাত এবং আল-কাবা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম।</p> <p>এই ২০টি এজেন্সির মধ্যে ছয়টির লাইসেন্স বিভিন্ন মেয়াদে সাময়িক স্থগিত ও তাদের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এগুলো হলো মিডিয়া ট্রাভেলস, গোল্ডেন ট্রাভেলস, সেন্ট্রাল ট্রাভেলস, শুয়াইব এয়ার, জেটওয়ে ট্রাভেল ও হোলি দারুন-নাজাত।</p> <p>এ ছাড়া শুধু দুই থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে রাজধানীর ১১টি ও সাভারের হেমায়েতপুরের একটি এজেন্সিকে।</p>